ঢাকা , শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিকলে বেঁধে তরুণী ধর্ষণ: হ্যাং আউট অ্যাপে যোগাযোগ করতেন ব্যারিস্টার মাসুদ

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাটে শিকলে বেঁধে ২৫ দিন তরুণী ধর্ষণের মূল হোতা কথিত ব্যারিস্টার মাসুদ হ্যাংক আউট অ্যাপ ব্যবহার করতেন। সামাজিক যোগাযোগের অপ্রচলিত এ অ্যাপের মাধ্যমেই তিনি ধর্ষণের সময়কার ভিডিও নিয়মিত নিতেন। সালমা ওরফে ঝুমুর মোবাইল ফোন থেকে এ অ্যাপের মাধ্যমে তাকে তাৎক্ষণিক সব তথ্য জানাতেন। বহুল প্রচলিত এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার না করে অপ্রচলিত অ্যাপটি ব্যবহারের একটাই কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া। ধর্ষণকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ব্যারিস্টার মাসুদ এ অ্যাপটি ব্যবহার করায় এখনো তার কোনো হদিস পাচ্ছে না পুলিশ।

তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা যুগান্তরকে বলেন, অপ্রচলিত যে কোনো অ্যাপ্লিকেশন কেউ বেআইনি কাজে ব্যবহার করলে বাড়তি সুবিধা পান। সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে নজরদারি করে অপ্রচলিত অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে তাদের নজরদারি করা কিছুটা চ্যালেঞ্জ। এটার সুযোগ নিয়েই অপরাধীরা হ্যাংক আউট অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও নিয়ে থাকে।

এদিকে মামলার এক নম্বর আসামি সালমার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া ভুক্তভোগী তরুণী ও আসামি সানের ফোনও উদ্ধার হয়নি। পাঁচ দিনের রিমান্ডেও আসামিরা মুখ খোলেননি। তবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, সালমা ও মাসুদচক্র দীর্ঘদিন ধরেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসাবাড়িতে অপরাধমূলক কাজ করছিলেন। কোনো বাসাতেই তারা বেশিদিন থাকতেন না।

ধর্ষণের ঘটনার সাত মাস আগে মোহাম্মদপুরের যে বাসায় সালমা ও ভুক্তভোগী তরুণী থাকতেন সেই বাসায় এসেছিলেন ব্যারিস্টার মাসুদ। এর দুই মাস পরেই বাসাটি ছেড়ে দেন সালমা। মোহাম্মদপুর এলাকাতেই ৫-৬ বছর তারা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। কোনো বাসাতেই বেশিদিন থাকতেন না।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সালমার মোবাইল ফোন উদ্ধার না হলে কথিত ব্যারিস্টার মাসুদের কোনো তথ্যই পাওয়া যাবে না। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ঢাকা উদ্যান এলাকায় গিয়ে সালমার ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে আর চালু হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি ফোনটি উদ্ধার করার। আসামি সালমার তথ্য অনুযায়ী ব্যারিস্টার মাসুদ তার ওই ফোনেই রেমিট্যান্স নম্বর ব্যবহার করে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক ফারুকুল ইসলাম বলেন, আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এক নম্বর আসামির মোবাইল ফোন উদ্ধার না হলে মামলার তদন্ত অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না। ফোনের আইএমইআই-এর সূত্র ধরে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১ মার্চ রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি ফ্ল্যাট থেকে শিকলবন্দি অবস্থায় ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে চারজনের নাম উল্লেখ করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ওই তরুণী। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন-সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮), আবিদ তাসিন সান (২০), সালমান আহমেদ জয় ওরফে রকি (২৭) ও আতিক রহমান হিমেল (২৭)।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

শিকলে বেঁধে তরুণী ধর্ষণ: হ্যাং আউট অ্যাপে যোগাযোগ করতেন ব্যারিস্টার মাসুদ

আপডেট টাইম : ০১:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ এপ্রিল ২০২৪

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাটে শিকলে বেঁধে ২৫ দিন তরুণী ধর্ষণের মূল হোতা কথিত ব্যারিস্টার মাসুদ হ্যাংক আউট অ্যাপ ব্যবহার করতেন। সামাজিক যোগাযোগের অপ্রচলিত এ অ্যাপের মাধ্যমেই তিনি ধর্ষণের সময়কার ভিডিও নিয়মিত নিতেন। সালমা ওরফে ঝুমুর মোবাইল ফোন থেকে এ অ্যাপের মাধ্যমে তাকে তাৎক্ষণিক সব তথ্য জানাতেন। বহুল প্রচলিত এনক্রিপটেড অ্যাপ ব্যবহার না করে অপ্রচলিত অ্যাপটি ব্যবহারের একটাই কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়া। ধর্ষণকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ব্যারিস্টার মাসুদ এ অ্যাপটি ব্যবহার করায় এখনো তার কোনো হদিস পাচ্ছে না পুলিশ।

তথ্য প্রযুক্তিবিদ তানভীর হাসান জোহা যুগান্তরকে বলেন, অপ্রচলিত যে কোনো অ্যাপ্লিকেশন কেউ বেআইনি কাজে ব্যবহার করলে বাড়তি সুবিধা পান। সব থেকে বড় সুবিধা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াতে অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেভাবে নজরদারি করে অপ্রচলিত অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে তাদের নজরদারি করা কিছুটা চ্যালেঞ্জ। এটার সুযোগ নিয়েই অপরাধীরা হ্যাংক আউট অ্যাপের মাধ্যমে ভিডিও নিয়ে থাকে।

এদিকে মামলার এক নম্বর আসামি সালমার মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া ভুক্তভোগী তরুণী ও আসামি সানের ফোনও উদ্ধার হয়নি। পাঁচ দিনের রিমান্ডেও আসামিরা মুখ খোলেননি। তবে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে, সালমা ও মাসুদচক্র দীর্ঘদিন ধরেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বাসাবাড়িতে অপরাধমূলক কাজ করছিলেন। কোনো বাসাতেই তারা বেশিদিন থাকতেন না।

ধর্ষণের ঘটনার সাত মাস আগে মোহাম্মদপুরের যে বাসায় সালমা ও ভুক্তভোগী তরুণী থাকতেন সেই বাসায় এসেছিলেন ব্যারিস্টার মাসুদ। এর দুই মাস পরেই বাসাটি ছেড়ে দেন সালমা। মোহাম্মদপুর এলাকাতেই ৫-৬ বছর তারা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। কোনো বাসাতেই বেশিদিন থাকতেন না।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সালমার মোবাইল ফোন উদ্ধার না হলে কথিত ব্যারিস্টার মাসুদের কোনো তথ্যই পাওয়া যাবে না। মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ঢাকা উদ্যান এলাকায় গিয়ে সালমার ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে আর চালু হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি ফোনটি উদ্ধার করার। আসামি সালমার তথ্য অনুযায়ী ব্যারিস্টার মাসুদ তার ওই ফোনেই রেমিট্যান্স নম্বর ব্যবহার করে নিয়মিত টাকা পাঠাতেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক ফারুকুল ইসলাম বলেন, আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এক নম্বর আসামির মোবাইল ফোন উদ্ধার না হলে মামলার তদন্ত অগ্রসর হওয়া যাচ্ছে না। ফোনের আইএমইআই-এর সূত্র ধরে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ১ মার্চ রাতে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের একটি ফ্ল্যাট থেকে শিকলবন্দি অবস্থায় ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে চারজনের নাম উল্লেখ করে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন ওই তরুণী। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতাররা হলেন-সালমা ওরফে ঝুমুর (২৮), আবিদ তাসিন সান (২০), সালমান আহমেদ জয় ওরফে রকি (২৭) ও আতিক রহমান হিমেল (২৭)।