ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চিত্রনায়ক সোহেল হত্যায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন: আদালত

ঢালিউডের সোনালি যুগের নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার ঘটনায় তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনসহ ছয়জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩–এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্ত্তী বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালত পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন।

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার কেস ডকেট গায়েব করা হয়েছে মন্তব্য করে আদালত বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা নিজেদের গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।’

রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী কোনো অখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না। সোহেল চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সাক্ষীরা সত্য গোপনের চেষ্টা করেছেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর পূর্বশত্রুতা ছিল। সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। মানুষ তো অসীমকাল বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে পারে না। প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির আত্মা বিচার চায়।’

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। এই তিনজন পলাতক।

শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ছাড়া খালাস পাওয়া অপর আসামিরা হলেন- সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, ফারুক আব্বাসী। তাদের মধ্যে কারাগারে আছেন সানজিদুল ইসলাম ইমন। আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী জামিনে আছেন।

রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, আসামি আদনান সিদ্দিকী নিজের গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাই আদনান সিদ্দিকী ও বান্টি ইসলাম খুনের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

২৫ বছর আগে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীতে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। সোহেল চৌধুরী নিহত হওয়ার পরপরই এ হত্যাকাণ্ডে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার রাতে সোহেল তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবারও তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান।

মামলার তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন।

বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রায় দেন। রায়ে রুলটি খারিজ করে দেওয়া হয় এবং হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। মামলায় ১০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

চিত্রনায়ক সোহেল হত্যায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন: আদালত

আপডেট টাইম : ১২:৪০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ মে ২০২৪

ঢালিউডের সোনালি যুগের নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যার ঘটনায় তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনসহ ছয়জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩–এর বিচারক অরুণাভ চক্রবর্ত্তী বৃহস্পতিবার মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আদালত পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন।

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার কেস ডকেট গায়েব করা হয়েছে মন্তব্য করে আদালত বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীরা নিজেদের গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন।’

রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, ‘সোহেল চৌধুরী কোনো অখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না। সোহেল চৌধুরী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সাক্ষীরা সত্য গোপনের চেষ্টা করেছেন। আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর পূর্বশত্রুতা ছিল। সাক্ষীদের জবানবন্দি রেকর্ডকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। মানুষ তো অসীমকাল বিচারের জন্য অপেক্ষা করতে পারে না। প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির আত্মা বিচার চায়।’

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বনানীর ট্রাম্প ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। এই তিনজন পলাতক।

শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ছাড়া খালাস পাওয়া অপর আসামিরা হলেন- সেলিম খান, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন, আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, ফারুক আব্বাসী। তাদের মধ্যে কারাগারে আছেন সানজিদুল ইসলাম ইমন। আশীষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী জামিনে আছেন।

রায় ঘোষণার সময় আদালত বলেন, আসামি আদনান সিদ্দিকী নিজের গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামি আজিজ মোহাম্মদ ভাই আদনান সিদ্দিকী ও বান্টি ইসলাম খুনের সঙ্গে জড়িত বলে প্রমাণিত হয়েছে। এই তিন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলো।

২৫ বছর আগে ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানীতে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে সোহেল চৌধুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তার ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী গুলশান থানায় মামলা করেন। সোহেল চৌধুরী নিহত হওয়ার পরপরই এ হত্যাকাণ্ডে চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে আজিজ মোহাম্মদ ভাইয়ের সঙ্গে সোহেল চৌধুরীর কথা কাটাকাটি হয়। এর প্রতিশোধ নিতে সোহেল চৌধুরীকে হত্যা করা হয়। ঘটনার রাতে সোহেল তার বন্ধুদের নিয়ে ট্রাম্পস ক্লাবে ঢোকার চেষ্টা করেন। তাকে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। রাত আড়াইটার দিকে আবারও তিনি ঢোকার চেষ্টা করেন। তখন সোহেলকে লক্ষ্য করে ইমন, মামুন, লিটন, ফারুক ও আদনান গুলি চালান।

মামলার তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এর দুই বছর পর মামলাটির বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামি আদনান সিদ্দিকী ২০০৩ সালের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুলসহ আদেশ দেন।

বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর তৎকালীন ডিভিশন বেঞ্চ শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ৫ আগস্ট রায় দেন। রায়ে রুলটি খারিজ করে দেওয়া হয় এবং হাইকোর্টের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। মামলায় ১০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।