রাজধানীর গুলশান-১ নম্বর শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণিবিতানের সামনে ১১ বছর আগে ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে মিল্কি হত্যার ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। তবে দীর্ঘ ১১ বছরেও শেষ হয়নি মিল্কি হত্যা মামলার বিচার। কবে নাগাদ শেষ হবে নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না সংশ্লিষ্টরা। রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে, চলতি বছরেই আলোচিত এ মামলার বিচার শেষ হবে। মামলাটি তদন্ত করে প্রথমে ১১ জনকে এবং পরে আবার ৭ জনকে অভিযুক্ত করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত দায়রা জজ ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এরপর মামলাটিতে ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চার জন সাক্ষ্য দেন। এমন অবস্থায় মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি ২০২২ সালের ২১ মার্চ ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ বদলির আদেশ দেয় আইন মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ বিচারাধীন রয়েছে। আগামী ৩ সেপ্টেম্বর মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ধার্য রয়েছে। সংশ্লিষ্ট আদালতে আসার পর তিন জন সাক্ষ্য দেন। চার্জ গঠনের পর ৬ বছরে মাত্র সাত জনের সাক্ষ্য শেষ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাদিয়া আফরিন শিল্পী বলেন, এ মামলার বিচার শেষ করতে রাষ্ট্রপক্ষ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আদালত থেকে সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে সমন পাঠানো হয়। সাক্ষী আসে না। তারপরও আমরা সাক্ষীদের আদালতে হাজিরের চেষ্টা করছি। কয়েকজন এসে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীরা আসলে আশা করছি, চলতি বছরে বিচার কার্যক্রম শেষ করতে পারবো।
জানা গেছে, রাজনৈতিক বিরোধ, চাঁদাবাজিসহ নানা বিরোধের জেরে ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশান-১ নম্বর শপার্স ওয়ার্ল্ড নামে একটি বিপণিবিতানের সামনে রিয়াজুল হক খান মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই সময় বিপণিবিতানের ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও চিত্র দেখে মিল্কির একসময়ের সহযোগী যুবলীগের আরেক নেতা জাহিদ সিদ্দিকী তারেকসহ খুনিরা তাকে হত্যা করেছে বলে পুলিশ জানায়।
ঘটনার পরের দিন মিল্কির ছোট ভাই মেজর রাশেদুল হক খান মিল্কি বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন। ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল মামলাটিতে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার কাজেমুর রশিদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করেন বাদী। আদালত নারাজি আমলে নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন।
২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস আরও ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আধপত্য বিস্তার, সাংগঠনিক পদ দখল, নির্বাচনী মনোনয়ন, বিভিন্ন উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থ বন্টন নিয়ে মিল্কির সঙ্গে তারেকের পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ওই হত্যাকাণ্ড হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়। পরে মামলাটি বিচারের জন্য সিএমএম আদালত থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরু হয় ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে চার জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটি বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ পাঠানো হয়েছে।
মামলার ১৮ আসামি হলেন-সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল ভূঁইয়া, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সাহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু, তুহিন রহমান ফাহিম, সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ ওরফে মাহমুদ, সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিউদ্দৌলা ওরফে পাপ্পু ও মামুন উর রশীদ। এদের মধ্যে সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, শরীফ উদ্দিন চৌধুরী ওরফে পাপ্পু ও সৈয়দ মুজতবা আলী প্রকাশ রুমী পলাতক রয়েছেন। ১৪ আসামি জামিনে রয়েছে।
আসামি জাহাঙ্গীরের আইনজীবী নূর ইসলাম খান বলেন, ‘আসামি সাখাওয়াতের ড্রাইভার ছিলেন জাহাঙ্গীর। আর এটায় তার দোষ। সে গরিব মানুষ। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। সে কোনোভাবেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না। আশা করছি, এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া শেষ হলে সে খালাস পাবে।’