ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বস্তায় করে ঘুষ যেত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায়

পুরো প্রশাসন যিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলবে সেই সাধ্য কার। ক্ষমতা ছাড়ার পর এবার সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে উঠল কারি কারি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। বান্ডিল বান্ডিল নয়, বস্তায় ভরে ঘুষ যেত সাবেক এই মন্ত্রীর ফার্মগেটের বাসায়। নিয়োগ, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য আর মাদক কারবার থেকেই উঠত এত টাকা।

পুলিশ যাকে অভিভাবক হিসেবে জানে, সেই পুলিশের নিয়োগে মোট অংকের টাকা দিতে হতো খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। শুধু তাই নয়, বদলির জন্যও দিতে হতো বস্তাভর্তি টাকা। তাতেও থেমে থাকেনি কামাল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে অবৈধভাবে টাকা নেওয়া অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা নিতো কামাল-হারুন সিন্ডিকেট।

নিয়োগ বাণিজ্য পরিচালনায় তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সিন্ডিকেটে ছিলেন সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, এপিএস মনির হোসেন, পিআরও শরীফ মাহমুদ অপু ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন।

হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ কামাল-হারুন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। হারুন অর রশীদ অবসরে গেলেও এই মন্ত্রণালয়ের সব ঘুষ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। ঝুঁকি এড়াতে টাকা পাঠানো হয় দেশের বাইরে।

এই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোনো জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন হতো না। জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে এক থেকে তিন কোটি টাকা নিত এই সিন্ডিকেট। ২০২২ সালে ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। এসব টাকা বস্তায় ভরে পৌঁছে দেওয়া হয় আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ফার্মগেটের বাসায়।

এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দিতে ৮০ থেকে এক কোটি টাকা দিতে হতো আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের দরবারে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে উত্তরার একটি উন্নয়ন সংস্থার এনওসি নিতে মন্ত্রীকে দিতে হয় ৮৫ লাখ টাকা।

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চাপে ২০২৩ সালে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সে ৫৩৫ জনের মধ্যে ২৫০ জনকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস।

তেজগাঁও শেরে-বাংলা নগর এলাকার চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ করতো কামাল। কাওরান বাজারে ফুটপাতে কাঁচাবাজার, মাদক ও আবাসিক হোটেল থেকে তোলা হতো দৈনিক দেড় কোটি টাকা। মন্ত্রীর এপিএস মনিরসহ আরও দুজন এই টাকা তুলতো বলে খবর পাওয়া গেছে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যখন এতো অভিযোগ, তখন কী আর বসে থাকতে পারে দুদক। কমিশনের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। শিগগির মাঠে নামার ঘোষণাও দিয়েছে সংস্থাটি।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বস্তায় করে ঘুষ যেত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায়

আপডেট টাইম : ০৫:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

পুরো প্রশাসন যিনি নিয়ন্ত্রণ করতেন তার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলবে সেই সাধ্য কার। ক্ষমতা ছাড়ার পর এবার সেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে উঠল কারি কারি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ। বান্ডিল বান্ডিল নয়, বস্তায় ভরে ঘুষ যেত সাবেক এই মন্ত্রীর ফার্মগেটের বাসায়। নিয়োগ, চাঁদাবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য আর মাদক কারবার থেকেই উঠত এত টাকা।

পুলিশ যাকে অভিভাবক হিসেবে জানে, সেই পুলিশের নিয়োগে মোট অংকের টাকা দিতে হতো খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। শুধু তাই নয়, বদলির জন্যও দিতে হতো বস্তাভর্তি টাকা। তাতেও থেমে থাকেনি কামাল। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে অবৈধভাবে টাকা নেওয়া অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। অনুসন্ধানে জানা যায়, নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা নিতো কামাল-হারুন সিন্ডিকেট।

নিয়োগ বাণিজ্য পরিচালনায় তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সিন্ডিকেটে ছিলেন সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, এপিএস মনির হোসেন, পিআরও শরীফ মাহমুদ অপু ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন।

হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ কামাল-হারুন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। হারুন অর রশীদ অবসরে গেলেও এই মন্ত্রণালয়ের সব ঘুষ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। ঝুঁকি এড়াতে টাকা পাঠানো হয় দেশের বাইরে।

এই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোনো জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন হতো না। জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে এক থেকে তিন কোটি টাকা নিত এই সিন্ডিকেট। ২০২২ সালে ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। এসব টাকা বস্তায় ভরে পৌঁছে দেওয়া হয় আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের ফার্মগেটের বাসায়।

এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দিতে ৮০ থেকে এক কোটি টাকা দিতে হতো আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের দরবারে। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে উত্তরার একটি উন্নয়ন সংস্থার এনওসি নিতে মন্ত্রীকে দিতে হয় ৮৫ লাখ টাকা।

তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর চাপে ২০২৩ সালে ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সে ৫৩৫ জনের মধ্যে ২৫০ জনকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস।

তেজগাঁও শেরে-বাংলা নগর এলাকার চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ করতো কামাল। কাওরান বাজারে ফুটপাতে কাঁচাবাজার, মাদক ও আবাসিক হোটেল থেকে তোলা হতো দৈনিক দেড় কোটি টাকা। মন্ত্রীর এপিএস মনিরসহ আরও দুজন এই টাকা তুলতো বলে খবর পাওয়া গেছে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যখন এতো অভিযোগ, তখন কী আর বসে থাকতে পারে দুদক। কমিশনের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। শিগগির মাঠে নামার ঘোষণাও দিয়েছে সংস্থাটি।