বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উচ্চ আদালতের রায়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মধ্য দিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃস্থাপন হওয়ায় ব্যথিত হয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কনসেপ্টটা সেনাশাসকদের, পাকিস্তানের, মেজর জিয়াউর রহমানের কনসেপ্ট।
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ কথা বলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
এর মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নেয়ার ষোড়শ সংশোধনী বাতিল হয় এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনঃস্থাপিত হলো।
এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার রিভিউ আবেদন করবে কি না জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটি সরকারের ওপর নির্ভর করছে।
দেশের প্রধান এ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘টোটাল বিষয়টি দাঁড়াল যে মার্শাল আমলে সংবিধানের ৯৬ ধারা সংশোধন করে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের যে বিধান অন্তভুর্ক্ত করে সংশোধন করা হয়েছিল, সেটি আবার পুনঃস্থাপন করা হলো।’
এখন কী হবে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এখন ওনারা রিস্টর করেছেন। কিন্তু আমার বক্তব্য হলো সংবিধানের যেকোনো ধারা সংশোধন বা বাদ দেয়া সবটাই সংসদের ব্যাপার। কোর্ট যদি নিজেই রিস্টর (পুনঃস্থাপন) করে দেন তাহলে সংসদের থাকার কোনো দরকার হয় না, তাই না! আমার কথা হলো যেকোনো সংবিধানের যেকোনো সংশোধনকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু সংবিধানের কোনো ধারা পুনঃস্থাপন বা রিস্টর করা আমার বিবেচনায় সংসদের কাজ।’
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কার্যকর করতে এখন আইন করতে হবে কি না বা আইন না করলে এটা কার্যকর হবে কি না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এটা এই মুহূর্তে বলা কঠিন। এ মুর্হূতে কোনো মন্তব্য আমি করবে না।’
১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করা হয়েছে কি না অপর এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘রায়ের ভেতরে যা-ই বলা থাকুক না কেন, রায়ের সমাপনীতে কী বলা আছে সেটি দেখতে হবে। অর্ডার অব দ্য কোর্ট কোনটা, সেখানে কিন্তু ১১৬ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। আমি বলব এটা একজন জাজের অভিমত হতে পারে, কিন্তু যেহেতু রায়ের শেষাংশে, যেটাকে অর্ডার অব দ্য কোর্ট আমরা বলি, সেখানে ১১৬ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। তাহলে ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল হয়েছে বলে ধরা যায় না।’
তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ যদি বাতিল করতে হতো তাহলে সবাইকে সেখানে সই করতে হতো। অর্ডার অব দ্য কোর্ট তাই হতো। তা ছাড়া ১১৬ কোনো ইস্যু ছিল না। ইস্যু ছিল ৯৬ অনুচ্ছেদ।
রায়ের সার্বিক বিষয়ে মন্তব্য করার আগে পুরো রায়টা পড়তে চান অ্যটর্নি জেনারেল। তবে তিনি বলেন, ‘আমার একটি দুঃখ রয়ে গেছে। সেই দুঃখ হলো সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদটি সংযুক্ত হয়েছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে। যখন আমাদের সংবিধান প্রণেতারা বসেছিলেন, তারা এটা প্রণয়ন করেছিলেন। আর সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কনসেপ্টটা (ধারণা) হলো সেনাশাসকদের কনসেপ্ট, পাকিস্তানের কনসেপ্ট, জিয়াউর রহমানের কনসেপ্ট। কাজেই এটা পুনঃস্থাপনে নিশ্চয় আমি ব্যথিত।’
গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন।
বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংসদে পাস হয় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। সংবিধানের এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন।
২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন। মামলাটির সঙ্গে সাংবিধানিক বিষয় জড়িত থাকায় হাইকোর্ট সরাসরি আপিলের অনুমতি দেন। ওই বছরের ১১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ, বাতিল ও সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ হয়। এরপর এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।