ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বছর শেষে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সারা দেশে ২১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ হিসাবে ডিসেম্বর মাসে দেশে প্রতিদিন অন্তত ৭টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

ডিসেম্বরে যৌতুকের কারণে ১০ জন, পারিবারিক সহিংসতায় ৩১ জন, সামাজিক সহিংসতায় ৪৩ জন, রাজনৈতিক কারণে ৬ জন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ১২ জন, বিএসএফের হাতে ৬ জন এবং চিকিৎসকের অবহেলায় ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অপহরণের পর ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ৭ জন। রহস্যজনক কারণে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধর্ষণের পর ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া আত্মহত্যা করেছেন ২৩ জন।

পাশাপাশি বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নারী ও শিশুসহ অনেক মানুষ। খুন ও অন্যান্য অপরাধের ব্যাপকতা সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের নিদর্শন এটি। এ ব্যাপারে প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। মৃত্যু অবধারিত। স্বাভাবিক নিয়মে কারও মৃত্যুর ঘটনা আমাদের ব্যথিত করলেও তা নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকে না।

কিন্তু মৃত্যু যদি অস্বাভাবিকতা নিয়ে হানা দেয়, তাহলে তা মর্মযাতনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। উদ্বেগের বিষয় হল, পারিবারিক ও রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, গুম ও খুন ছাড়াও এসিড নিক্ষেপ, যৌতুক, ধর্ষণ ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে দেশে অপরাধ ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে। কোনো সমাজ সুস্থ ও স্বাভাবিক নিয়মে না চললে সেখানে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

এ পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা পেতে হলে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি মানুষকে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা চর্চার ওপর জোর দিতে হবে।

অবশ্য দেশে মানবাধিকারের প্রধান দুই অংশের একটি অর্থাৎ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যু হার ও দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে।

এছাড়া ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের আলোকে শিশু আইন-২০১৩ প্রণয়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩, পিতামাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩, জাতীয় নদীরক্ষা আইন-২০১৩ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে হত্যা, অপহরণ, গুম, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রশ্নে দেশবাসীর মনে যথেষ্ট অস্বস্তি বিরাজ করছে। এসব রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম মানুষকে খুব একটা আশ্বস্ত করতে পারছে না।

নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। মানবাধিকার ক্ষুণ্নকারী যে কোনো অস্বাভাবিকতা মানুষের জীবনে হানা দিলে তার দায় সরকারের ওপরই বর্তায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, মানবাধিকার ক্ষুণ্নের অসংখ্য দায় এখন সরকারের কাঁধে।

এ ধারা অব্যাহত থাকলে রাষ্ট্রের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা বিনষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক নয়। স্বাধীন দেশে এ রকম অবস্থা যাতে তৈরি না হয়, সে পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে

আপডেট টাইম : ১১:৩১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ জানুয়ারী ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বছর শেষে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিদায়ী ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সারা দেশে ২১২টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এ হিসাবে ডিসেম্বর মাসে দেশে প্রতিদিন অন্তত ৭টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।

ডিসেম্বরে যৌতুকের কারণে ১০ জন, পারিবারিক সহিংসতায় ৩১ জন, সামাজিক সহিংসতায় ৪৩ জন, রাজনৈতিক কারণে ৬ জন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ১২ জন, বিএসএফের হাতে ৬ জন এবং চিকিৎসকের অবহেলায় ৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অপহরণের পর ১১ জনকে হত্যা করা হয়েছে। গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন ৭ জন। রহস্যজনক কারণে ৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধর্ষণের পর ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া আত্মহত্যা করেছেন ২৩ জন।

পাশাপাশি বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নারী ও শিশুসহ অনেক মানুষ। খুন ও অন্যান্য অপরাধের ব্যাপকতা সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। মূল্যবোধের চরম অবক্ষয়ের নিদর্শন এটি। এ ব্যাপারে প্রত্যেকেরই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। মৃত্যু অবধারিত। স্বাভাবিক নিয়মে কারও মৃত্যুর ঘটনা আমাদের ব্যথিত করলেও তা নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকে না।

কিন্তু মৃত্যু যদি অস্বাভাবিকতা নিয়ে হানা দেয়, তাহলে তা মর্মযাতনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। উদ্বেগের বিষয় হল, পারিবারিক ও রাজনৈতিক সহিংসতা, গণপিটুনি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, গুম ও খুন ছাড়াও এসিড নিক্ষেপ, যৌতুক, ধর্ষণ ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে দেশে অপরাধ ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটছে। কোনো সমাজ সুস্থ ও স্বাভাবিক নিয়মে না চললে সেখানে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

এ পরিস্থিতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে। নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা পেতে হলে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি মানুষকে মূল্যবোধ ও নৈতিকতা চর্চার ওপর জোর দিতে হবে।

অবশ্য দেশে মানবাধিকারের প্রধান দুই অংশের একটি অর্থাৎ অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের ক্ষেত্রে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যু হার ও দারিদ্র্য হ্রাস পেয়েছে।

এছাড়া ’৭১-এর যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা, হিজড়া জনগোষ্ঠীকে তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের আলোকে শিশু আইন-২০১৩ প্রণয়ন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩, পিতামাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন-২০১৩, জাতীয় নদীরক্ষা আইন-২০১৩ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তবে হত্যা, অপহরণ, গুম, ধর্ষণ ইত্যাদি প্রশ্নে দেশবাসীর মনে যথেষ্ট অস্বস্তি বিরাজ করছে। এসব রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম মানুষকে খুব একটা আশ্বস্ত করতে পারছে না।

নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। মানবাধিকার ক্ষুণ্নকারী যে কোনো অস্বাভাবিকতা মানুষের জীবনে হানা দিলে তার দায় সরকারের ওপরই বর্তায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, মানবাধিকার ক্ষুণ্নের অসংখ্য দায় এখন সরকারের কাঁধে।

এ ধারা অব্যাহত থাকলে রাষ্ট্রের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা বিনষ্ট হওয়া অস্বাভাবিক নয়। স্বাধীন দেশে এ রকম অবস্থা যাতে তৈরি না হয়, সে পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হবে।