ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বই কিনতে সাহায্য করুন, আমি বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এই দেখ্। ওই যে সামনে বৃদ্ধ রিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন তার রিকশার পেছনে ঝুলানো সাইনবোর্ডে কী লিখা আছে, ভালো করে তাকিয়ে দেখ।’

 মঙ্গলবার বেলা আনুমানিক সাড়ে ৩টায় রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে রিকশাযাত্রী দুই তরুণীর একজন পাশে বসে থাকা তরুণীকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিল। উৎসুখ দৃষ্টিতে বৃদ্ধের রিকশার পেছনে ঝুলানো সাইনবোর্ডে চোখ বুলিয়ে ‘ও মাই গড’বলে চোখ বড় বড় করে তাকালেন ওই তরুণী।দুই তরুণীর কথোপকথনে অনেকের দৃষ্টি ওই বৃদ্ধ রিকশাচালকের রিকশার পেছনে ঝুলানো একটি লেখার ওপর।

একটু লক্ষ্য করতেই দেখা যায়, সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘ এসএসসি জিপিএ ৫, এইচএসসি জিপিএ ৫, আমার মেয়েটি ডাক্তারি পড়তে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। কোড নং ১২-২৪৩৫, বর্তমানে পঞ্চম বর্ষে অধ্যয়নরত। বই কিনতে সাহায্য করুন। আমি বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা। আল্লাহ মেহেরবান।

যে বৃদ্ধ রিকশা চালাচ্ছেন তার বয়স আনুমানিক পঞ্চান্ন থেকে ষাট বছর। পরনে চেক লুঙ্গি, সাদা গেঞ্জি ও মাথায় টুপি। গেঞ্জির পেছনেও ছোট একটি সাইনবোর্ড ঝুলছিল। প্রচণ্ড গরমে দরদর করে ঘামছিলেন।

কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক সামনে গিয়ে পরিচয় দিতেই তিনি রিকশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে শুরু করলেন। অনেক পীড়াপীড়ির পর বললেন, তার মেয়ে দক্ষিণাঞ্চলের একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে পঞ্চম বর্ষে পড়াশুনা করছে। তার ফাইনাল পরীক্ষার আর কয়েক মাস বাকি। কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে সংসার ও মেয়ের মেডিকেলে পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মেডিকেলের বইপত্রের দাম বেশি হওয়ায় কুলিয়ে না উঠায় রিকশার সামনে পেছনে বই কিনতে সাহায্য করার আবেদন সম্বলিত সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন।

সাহায্য চাইলেও তিনি যোগাযোগের কোন নম্বর কোথাও দেননি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ চালাতে পারে না, এ নিয়ে ব্যবসা করে বলে শুনেছি। তাই নম্বর দেইনি। যে সকল যাত্রী রিকশায় ওঠে তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইচ্ছা করে ৫০,১০০,২০০, ৫০০ টাকা দান করেন। তাই দিয়ে তিনি মেয়ের বই কেনার টাকা জুগিয়ে চলেছেন।

তার সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর চাইলে তিনি নম্বর দিতে ইতস্তত করেন। এ সময় এ প্রতিবেদক বলেন, অন্য কেউ তাকে সাহায্য করতে আগ্রহী হলে কিভাবে যোগাযোগ করবে? এ কথা শুনে তিনি প্রতিবেদকের একটি ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নেন। চলে আসার সময় তার ছবি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বই কিনতে সাহায্য করুন, আমি বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা

আপডেট টাইম : ১২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এই দেখ্। ওই যে সামনে বৃদ্ধ রিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন তার রিকশার পেছনে ঝুলানো সাইনবোর্ডে কী লিখা আছে, ভালো করে তাকিয়ে দেখ।’

 মঙ্গলবার বেলা আনুমানিক সাড়ে ৩টায় রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে রিকশাযাত্রী দুই তরুণীর একজন পাশে বসে থাকা তরুণীকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিল। উৎসুখ দৃষ্টিতে বৃদ্ধের রিকশার পেছনে ঝুলানো সাইনবোর্ডে চোখ বুলিয়ে ‘ও মাই গড’বলে চোখ বড় বড় করে তাকালেন ওই তরুণী।দুই তরুণীর কথোপকথনে অনেকের দৃষ্টি ওই বৃদ্ধ রিকশাচালকের রিকশার পেছনে ঝুলানো একটি লেখার ওপর।

একটু লক্ষ্য করতেই দেখা যায়, সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘ এসএসসি জিপিএ ৫, এইচএসসি জিপিএ ৫, আমার মেয়েটি ডাক্তারি পড়তে মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। কোড নং ১২-২৪৩৫, বর্তমানে পঞ্চম বর্ষে অধ্যয়নরত। বই কিনতে সাহায্য করুন। আমি বৃদ্ধ রিকশাওয়ালা। আল্লাহ মেহেরবান।

যে বৃদ্ধ রিকশা চালাচ্ছেন তার বয়স আনুমানিক পঞ্চান্ন থেকে ষাট বছর। পরনে চেক লুঙ্গি, সাদা গেঞ্জি ও মাথায় টুপি। গেঞ্জির পেছনেও ছোট একটি সাইনবোর্ড ঝুলছিল। প্রচণ্ড গরমে দরদর করে ঘামছিলেন।

কৌতূহলবশত এ প্রতিবেদক সামনে গিয়ে পরিচয় দিতেই তিনি রিকশা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে শুরু করলেন। অনেক পীড়াপীড়ির পর বললেন, তার মেয়ে দক্ষিণাঞ্চলের একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে পঞ্চম বর্ষে পড়াশুনা করছে। তার ফাইনাল পরীক্ষার আর কয়েক মাস বাকি। কষ্ট করে রিকশা চালিয়ে সংসার ও মেয়ের মেডিকেলে পড়াশুনার খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু মেডিকেলের বইপত্রের দাম বেশি হওয়ায় কুলিয়ে না উঠায় রিকশার সামনে পেছনে বই কিনতে সাহায্য করার আবেদন সম্বলিত সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন।

সাহায্য চাইলেও তিনি যোগাযোগের কোন নম্বর কোথাও দেননি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকে ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ চালাতে পারে না, এ নিয়ে ব্যবসা করে বলে শুনেছি। তাই নম্বর দেইনি। যে সকল যাত্রী রিকশায় ওঠে তাদের মধ্যে কেউ কেউ ইচ্ছা করে ৫০,১০০,২০০, ৫০০ টাকা দান করেন। তাই দিয়ে তিনি মেয়ের বই কেনার টাকা জুগিয়ে চলেছেন।

তার সঙ্গে যোগাযোগের নম্বর চাইলে তিনি নম্বর দিতে ইতস্তত করেন। এ সময় এ প্রতিবেদক বলেন, অন্য কেউ তাকে সাহায্য করতে আগ্রহী হলে কিভাবে যোগাযোগ করবে? এ কথা শুনে তিনি প্রতিবেদকের একটি ভিজিটিং কার্ড চেয়ে নেন। চলে আসার সময় তার ছবি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানান।