ঢাকা , শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর শামীম ওসমানের দাঁড়ি-গোফ যুক্ত ছবি ভাইরাল, যা বলছে ফ্যাক্টচেক ঢাকায় যানজট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন প্রধান উপদেষ্টা চার-ছক্কা হাঁকানো ভুলে যাননি সাব্বির হজযাত্রীর সর্বনিম্ন কোটা নির্ধারণে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টতা নেই : ধর্ম উপদেষ্টা একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা না চেয়ে জামায়াত উল্টো জাস্টিফাই করছে: মেজর হাফিজ ‘আল্লাহকে ধন্যবাদ’ পিএইচডি করে ১৯ সন্তানের মা আগামী মাসের মধ্যে পাঠ্যপুস্তক সবাই হাতে পাবে : প্রেস সচিব নিক্কেই এশিয়াকে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তিন মেয়াদে ভুয়া নির্বাচন মঞ্চস্থ করেছেন হাসিনা ৪২২ উপজেলায় মিলবে ওএমএসের চাল

এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই রূপ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার পশ্চিম চরলক্ষ্মী গাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রতি গিয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি শতভাগ দেখা গেলেও শিক্ষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গেছে। কারণ কিছু দিন পর বর্ষা মৌসুম এলে উপস্থিতি নেমে যাবে শূন্যের কোঠায়।

বিদ্যালয়ের টিনের চাল ছিদ্র, নড়বড়ে ঘর। বৃষ্টির পানিতে শ্রেণিকক্ষের মেঝে পানি-কাদায় সয়লাব হয়। বিদ্যালয়ে যাওয়ার সড়কও নাই। তাই বর্ষা এলে শিশুরা বিদ্যালয়ে যায় না। প্রায় ছয় মাস পড়াশোনা বন্ধ থাকে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে ট্রলারযোগে প্রায় এক ঘণ্টা পাড়ি দিয়ে চরমোন্তাজ ইউনিয়ন। ঘাটে চরমোন্তাজ স্লুইসবাজার। এই বাজার ঘিরে ইউনিয়নের মানুষের সব বিকিকিনি। বাজার থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে তেঁতুলিয়া নদীর পূর্বপাড়ে চরলক্ষ্মী গ্রাম। পশ্চিম চরলক্ষ্মী গ্রামে পাঁচ হাজারের অধিক মানুষের বাস। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪৫০ এবং স্কুলগামী ২০২ জন। পরিবারগুলোর বেশির ভাগ দরিদ্র। কেউ দিনমজুর, কেউ জেলে, কেউ আবার প্রান্তিক কৃষক। এখানে চরলক্ষ্মী গাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নেই। এলাকার অভিভাবকরা সন্তানকে লেখাপড়া শেখাতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল।

ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ঘরে তিনটি শ্রেণিকক্ষ। একটা লাইব্রেরি কক্ষ। ২৭ বাই ২২ ফুট পরিসরের কক্ষে শিশুদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। এতে বিঘ্নিত হয় শিক্ষার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রিনা আক্তার বলে, ‘এখন যে পথে স্কুলে যাই বর্ষায় তা পানিতে ডুবে থাকে। স্কুলে আসতে পারি না। আমরা সব সময় স্কুলে আসতে চাই।’

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১০ বছর পর ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে এটি জাতীয়করণ হয়। ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত খসড়া গেজেটে এই বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। তবে তিন বছর পার হলেও শিক্ষকদের সরকারি বেতন-ভাতা চালু হয়নি। এ ছাড়া ওই এলাকায় আর কোনো বিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি।

এই গ্রামের জেলে মো. আফজাল হোসেন মৃধা বলেন, ‘আমরা দিন আনি, দিন খাই। কত কষ্ট করি, হ্যার পর গুরাগ্যারারে (ছেলেমেয়ে) কামে না দিয়া স্কুলে দিই। স্কুলে রাস্তা নাই, ঘর দিয়া পানি পড়ে, বেঞ্চ নাই। সমস্যার শ্যাষ নাই। সরকার আমাগো গুরাগ্যারার দিগে না চাইলে হ্যারা ল্যাহাপড়া হেকতে পারবে না।’

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইয়্যেদুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয় সরকারি হলেও শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পায় না। তার পরও আমরা পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়ন না হলে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থী ধরে রাখা দুঃসাধ্য।’

চরমোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস আগে এই বিদ্যালয়ের রাস্তার জন্য উপজেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ না থাকায় রাস্তা করা যাচ্ছে না। এমনকি স্কুল ভবনের জন্যও আমি বিভিন্ন সভায় বলে আসছি।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সগির বলেন, ‘বিদ্যালয়ে টিনের ভবনটি লেখাপড়ার জন্য অনুপযোগী প্রায়। একটি পাকা ভবন নির্মাণ প্রয়োজন। এ বিষয়ে উপজেলা উন্নয়ন সমন্ব্বয় কমিটির সভায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ হবে।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. আলিম উল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ফেক ছবি শনাক্তে হোয়াটসঅ্যাপের নতুন ফিচার

এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই রূপ

আপডেট টাইম : ০৬:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মার্চ ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার পশ্চিম চরলক্ষ্মী গাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সম্প্রতি গিয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি শতভাগ দেখা গেলেও শিক্ষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ দেখা গেছে। কারণ কিছু দিন পর বর্ষা মৌসুম এলে উপস্থিতি নেমে যাবে শূন্যের কোঠায়।

বিদ্যালয়ের টিনের চাল ছিদ্র, নড়বড়ে ঘর। বৃষ্টির পানিতে শ্রেণিকক্ষের মেঝে পানি-কাদায় সয়লাব হয়। বিদ্যালয়ে যাওয়ার সড়কও নাই। তাই বর্ষা এলে শিশুরা বিদ্যালয়ে যায় না। প্রায় ছয় মাস পড়াশোনা বন্ধ থাকে।

রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে ট্রলারযোগে প্রায় এক ঘণ্টা পাড়ি দিয়ে চরমোন্তাজ ইউনিয়ন। ঘাটে চরমোন্তাজ স্লুইসবাজার। এই বাজার ঘিরে ইউনিয়নের মানুষের সব বিকিকিনি। বাজার থেকে চার কিলোমিটার উত্তরে তেঁতুলিয়া নদীর পূর্বপাড়ে চরলক্ষ্মী গ্রাম। পশ্চিম চরলক্ষ্মী গ্রামে পাঁচ হাজারের অধিক মানুষের বাস। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা প্রায় ৪৫০ এবং স্কুলগামী ২০২ জন। পরিবারগুলোর বেশির ভাগ দরিদ্র। কেউ দিনমজুর, কেউ জেলে, কেউ আবার প্রান্তিক কৃষক। এখানে চরলক্ষ্মী গাজীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো স্কুল নেই। এলাকার অভিভাবকরা সন্তানকে লেখাপড়া শেখাতে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভরশীল।

ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, টিনের ঘরে তিনটি শ্রেণিকক্ষ। একটা লাইব্রেরি কক্ষ। ২৭ বাই ২২ ফুট পরিসরের কক্ষে শিশুদের গাদাগাদি করে বসতে হয়। এতে বিঘ্নিত হয় শিক্ষার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড।

পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রিনা আক্তার বলে, ‘এখন যে পথে স্কুলে যাই বর্ষায় তা পানিতে ডুবে থাকে। স্কুলে আসতে পারি না। আমরা সব সময় স্কুলে আসতে চাই।’

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১০ বছর পর ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি তৃতীয় ধাপে এটি জাতীয়করণ হয়। ২০১৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত খসড়া গেজেটে এই বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। তবে তিন বছর পার হলেও শিক্ষকদের সরকারি বেতন-ভাতা চালু হয়নি। এ ছাড়া ওই এলাকায় আর কোনো বিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি।

এই গ্রামের জেলে মো. আফজাল হোসেন মৃধা বলেন, ‘আমরা দিন আনি, দিন খাই। কত কষ্ট করি, হ্যার পর গুরাগ্যারারে (ছেলেমেয়ে) কামে না দিয়া স্কুলে দিই। স্কুলে রাস্তা নাই, ঘর দিয়া পানি পড়ে, বেঞ্চ নাই। সমস্যার শ্যাষ নাই। সরকার আমাগো গুরাগ্যারার দিগে না চাইলে হ্যারা ল্যাহাপড়া হেকতে পারবে না।’

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইয়্যেদুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয় সরকারি হলেও শিক্ষকরা বেতন-ভাতা পায় না। তার পরও আমরা পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়ন না হলে বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থী ধরে রাখা দুঃসাধ্য।’

চরমোন্তাজ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হানিফ মিয়া বলেন, ‘প্রায় ছয় মাস আগে এই বিদ্যালয়ের রাস্তার জন্য উপজেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় প্রকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ না থাকায় রাস্তা করা যাচ্ছে না। এমনকি স্কুল ভবনের জন্যও আমি বিভিন্ন সভায় বলে আসছি।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) গোলাম সগির বলেন, ‘বিদ্যালয়ে টিনের ভবনটি লেখাপড়ার জন্য অনুপযোগী প্রায়। একটি পাকা ভবন নির্মাণ প্রয়োজন। এ বিষয়ে উপজেলা উন্নয়ন সমন্ব্বয় কমিটির সভায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত কাজ হবে।’

রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মো. আলিম উল্লাহ বলেন, ‘এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।