ঢাকা , শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিক্ষার্থীরা কেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর স্নাতক পর্যায়ে মেডিক্যাল, প্রকৌশল অথবা সাধারণ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে মরিয়া শিক্ষার্থীরা। যে শিক্ষার্থী ছোট থেকেই স্বপ্ন বুনেছেন ডাক্তার হবেন সেই শিক্ষার্থী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি নিশ্চিত না থাকায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পরীক্ষা দেন। অন্যদিকে, যে শিক্ষার্থী প্রকৌশলী হবেন বলে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন তিনিও এসময় এসে পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন সাধারণ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু কেন? ছোট থেকে যে শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ভর্তি পরীক্ষার সময় ওই শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকের লক্ষ্য কেন পরিবর্তন হয়ে যায়?

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন,নির্দিষ্ট বিষয়ে ভর্তি হওয়ার অনিশ্চয়তার কারণেই তারা একাধিক বিষয়ে পরীক্ষা দেন। আর অভিভাবকদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষে সন্তান ভর্তি হতে না পারলে পরবর্তীতে কী হবে এমন ঝুঁকি নিতে চাননা তারা। আর এসব চ্যালেঞ্জের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একাধিক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ভর্তীচ্ছুদের। শিক্ষাবিদরাও শিক্ষার্থীদের এ মনোভাবকে সমর্থন করছেন তবে একইসঙ্গে নির্দিষ্ট বিষয়ে ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিকেও দায়ী করছেন তারা।

২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য বুয়েটসহ অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তির আবেদন শেষ হয়েছে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সারাদেশে মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৭ অক্টোবর। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৩ টি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে,এ বছর সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা মোট ১০ হাজার ৩০০টি। এসব আসনে ভর্তির জন্য আবেদনপত্র জমা পড়েছে ৬৫ হাজার ৯১৯টি। অন্যদিকে, বুয়েটে প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য ১ হাজার ৬০টি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে প্রায় ১৩ হাজার।

একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রে অনেকেরই স্বপ্ন থাকে ঢাকা মেডিক্যাল অথবা অন্য কোনও ভালো মেডিক্যাল কলেজে পড়বেন, ডাক্তার হবেন। আবার কেউ কেউ প্রকৌশলী হবেন, বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট অথবা অন্য কোনও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন বলে স্বপ্ন দেখেন অনেক আগে থেকেই।

কিন্তু এদের মধ্যে আবার অনেকেই ভর্তি পরীক্ষার ঠিক আগ মূহুর্তে সেই স্বপ্ন থেকে কিছুটা সরে আসেন। তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তাদের কাছে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ কারণে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করলেও বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী প্রকৌশল ও সাধারণ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা দেন। আবার প্রকৌশলী হতে চেয়েও মেডিক্যালসহ অন্যান্য সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা দেন। তাদের সবাই ভাবেন প্রথম স্বপ্ন ও লক্ষ্য ছুটে গেলেও ভালো কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন পড়ার সুযোগটা হাতছাড়া না হয়।

এমনই এক শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান। তিনি একইসঙ্গে মেডিক্যাল,বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন। সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘আমার এবং আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছা আমি মেডিক্যালে পড়বো। আমি এসএসসি ও এইচএসসি দুটোতেই গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। কিন্তু যে প্রতিযোগিতা তাতে মেডিক্যালে পড়ার স্বপ্ন কোনোভাবে যদি ভঙ্গ হয়ে যায়,তাই অন্তত যেন বুয়েটে চান্স পায়, সেই ভরসায় বুয়েটে আবেদন করেছি। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আবেদন করেছি যাতে কোথাও না হলে যেন অন্তত ঢাবিতে পড়তে পারি।‘

লক্ষ্য ও স্বপ্ন থেকে শিক্ষার্থীরা কেন সরে আসেন জানতে চাইলে উদ্ভাস কোচিংয়ের পরিচালক ও অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এমনকি অভিভাবকরা আসলে কোন বিষয়ে প্যাশনেট এটা তারা নিজেরাই ক্লিয়ার নন। খুব আগ্রহ নিয়ে একটি বিষয়কেই প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাবে এখন এমন মানসিকতা শিক্ষার্থীদের মাঝে আর দেখা যায় না। এটা তাদের কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণও না। কিসে তার আগ্রহ কিসে সে অনেক ওপরে উঠতে পারবে এটাকে কেউ প্রাধান্য দেয় না।

চিন্তা করে মেডিক্যালেও পরীক্ষা দেবো, বিশ্ববিদ্যালয়েও দেবো আবার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও দেবো। একটাতে ভর্তির সুযোগ না পেলে অন্যটায় হবে। এখন সবাই এই চিন্তা করে। যেদিকেই যাই, খেয়ে পরে বাঁচতে তো হবে, এটাই সবাই ভাবে। এর অর্থ সে অনিশ্চয়তায় থাকতে চায় না, ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকু চায়। এছাড়া এখন প্রচুর প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা করে নিজের অবস্থান তৈরি করতে হবে। এ কারণে আবেদনের যোগ্যতা থাকলে একই শিক্ষার্থী একইসঙ্গে মেডিক্যাল বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা তো দিচ্ছেই, সাধারণ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। কোথাও না কোথাও তো ভর্তির সুযোগ পাবে, এই ভরসা থেকেই তারা এ কাজ করে।‘

তিনি আরও বলেন, ‘আবার কিছু টপ লেভেল শিক্ষার্থীর মনোভাব থাকে অন্যদের দেখানোর। সে যখন বুঝতে পারে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে তখন শো-অফ (অন্যেকে দেখানোর) করার জন্য একইসঙ্গে সবখানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। দেখায় বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ত ১০ম হয়েছে এখন মেডিক্যালে কত তম আসে।’
তিনি আরও বলেন,‘যদিও মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি কিছু আলাদা। তারপরও শিক্ষার্থীরা যে কোনও একটিতে টার্গেট করলেও অনেকেই দুটোতেই আবেদন করে। তবে এই দু্টিতে যারা আবেদন করে তাদের মধ্যে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করে।

কারণ,বুয়েট অথবা মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ না পেলে যেন অন্তত সাধারণ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়।‘ একই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে ভর্তির অনিশ্চয়তা এবং শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন,যে শিক্ষার্থী মেডিক্যালে পড়তে চায় সে তো নিশ্চিত না যে সে মেডিক্যালে পড়তে পারবে কিনা। আর সে কারণে তাদের কাছে যে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে যেমন, মেডিক্যালে পড়ার সুযোগ না হলে অন্তত অন্যান্য যে কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন পড়তে পারে সেই সুযোগটি নেওয়ার জন্য তারা আবেদন করে রাখে। ফলে বোঝাই যায় ভর্তিতে অনিশ্চয়তা। এটাই মূলত এর প্রধান কারণ।’

তিনি বলেন,‘শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করলেই জীবনে সফল হওয়া সম্ভব নয়, এর বাইরে আত্মবিশ্বাসী হওয়াটাও খুব জরুরি, যা এখনকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আমরা ছড়িয়ে দিতে পারছি না। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসেরও অভাব রয়েছে। আত্মবিশ্বাস না থাকার কারণেও তারা তাদের লক্ষ্য-টার্গেট ধরে রাখতে পারেনা। আত্মবিশ্বাস সৃষ্টিতে মূল্যবোধ বৃদ্ধি ও নৈতিক শিক্ষাটাও খুবই জরুরি যা এখনকার ছেলে-মেয়ে অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

শিক্ষার্থীরা কেন একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়

আপডেট টাইম : ০৭:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অক্টোবর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর স্নাতক পর্যায়ে মেডিক্যাল, প্রকৌশল অথবা সাধারণ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে মরিয়া শিক্ষার্থীরা। যে শিক্ষার্থী ছোট থেকেই স্বপ্ন বুনেছেন ডাক্তার হবেন সেই শিক্ষার্থী মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি নিশ্চিত না থাকায় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও পরীক্ষা দেন। অন্যদিকে, যে শিক্ষার্থী প্রকৌশলী হবেন বলে জীবনের লক্ষ্য ঠিক করেছিলেন তিনিও এসময় এসে পরীক্ষার জন্য আবেদন করেন সাধারণ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু কেন? ছোট থেকে যে শিক্ষার্থী একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করেছেন ভর্তি পরীক্ষার সময় ওই শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবকের লক্ষ্য কেন পরিবর্তন হয়ে যায়?

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বলছেন,নির্দিষ্ট বিষয়ে ভর্তি হওয়ার অনিশ্চয়তার কারণেই তারা একাধিক বিষয়ে পরীক্ষা দেন। আর অভিভাবকদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট শিক্ষাবর্ষে সন্তান ভর্তি হতে না পারলে পরবর্তীতে কী হবে এমন ঝুঁকি নিতে চাননা তারা। আর এসব চ্যালেঞ্জের কারণে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একাধিক বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে ভর্তীচ্ছুদের। শিক্ষাবিদরাও শিক্ষার্থীদের এ মনোভাবকে সমর্থন করছেন তবে একইসঙ্গে নির্দিষ্ট বিষয়ে ভর্তির ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিকেও দায়ী করছেন তারা।

২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য বুয়েটসহ অন্যান্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজগুলোতে ভর্তির আবেদন শেষ হয়েছে। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেন্দ্রীয়ভাবে সারাদেশে মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা আগামী ৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৭ অক্টোবর। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৬ লাখ ৩৬ হাজার ৩৪৩ টি।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে,এ বছর সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন সংখ্যা মোট ১০ হাজার ৩০০টি। এসব আসনে ভর্তির জন্য আবেদনপত্র জমা পড়েছে ৬৫ হাজার ৯১৯টি। অন্যদিকে, বুয়েটে প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য ১ হাজার ৬০টি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে প্রায় ১৩ হাজার।

একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির ক্ষেত্রে অনেকেরই স্বপ্ন থাকে ঢাকা মেডিক্যাল অথবা অন্য কোনও ভালো মেডিক্যাল কলেজে পড়বেন, ডাক্তার হবেন। আবার কেউ কেউ প্রকৌশলী হবেন, বুয়েট, রুয়েট, চুয়েট অথবা অন্য কোনও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন বলে স্বপ্ন দেখেন অনেক আগে থেকেই।

কিন্তু এদের মধ্যে আবার অনেকেই ভর্তি পরীক্ষার ঠিক আগ মূহুর্তে সেই স্বপ্ন থেকে কিছুটা সরে আসেন। তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তাদের কাছে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ কারণে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করলেও বেশিরভাগ পরীক্ষার্থী প্রকৌশল ও সাধারণ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা দেন। আবার প্রকৌশলী হতে চেয়েও মেডিক্যালসহ অন্যান্য সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তি পরীক্ষা দেন। তাদের সবাই ভাবেন প্রথম স্বপ্ন ও লক্ষ্য ছুটে গেলেও ভালো কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন পড়ার সুযোগটা হাতছাড়া না হয়।

এমনই এক শিক্ষার্থী হাসিবুর রহমান। তিনি একইসঙ্গে মেডিক্যাল,বুয়েট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছেন। সাংবাদিককে তিনি বলেন, ‘আমার এবং আমার বাবা-মায়ের ইচ্ছা আমি মেডিক্যালে পড়বো। আমি এসএসসি ও এইচএসসি দুটোতেই গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছি। কিন্তু যে প্রতিযোগিতা তাতে মেডিক্যালে পড়ার স্বপ্ন কোনোভাবে যদি ভঙ্গ হয়ে যায়,তাই অন্তত যেন বুয়েটে চান্স পায়, সেই ভরসায় বুয়েটে আবেদন করেছি। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও আবেদন করেছি যাতে কোথাও না হলে যেন অন্তত ঢাবিতে পড়তে পারি।‘

লক্ষ্য ও স্বপ্ন থেকে শিক্ষার্থীরা কেন সরে আসেন জানতে চাইলে উদ্ভাস কোচিংয়ের পরিচালক ও অন্যরকম গ্রুপের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহাগ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা এমনকি অভিভাবকরা আসলে কোন বিষয়ে প্যাশনেট এটা তারা নিজেরাই ক্লিয়ার নন। খুব আগ্রহ নিয়ে একটি বিষয়কেই প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে যাবে এখন এমন মানসিকতা শিক্ষার্থীদের মাঝে আর দেখা যায় না। এটা তাদের কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণও না। কিসে তার আগ্রহ কিসে সে অনেক ওপরে উঠতে পারবে এটাকে কেউ প্রাধান্য দেয় না।

চিন্তা করে মেডিক্যালেও পরীক্ষা দেবো, বিশ্ববিদ্যালয়েও দেবো আবার প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়েও দেবো। একটাতে ভর্তির সুযোগ না পেলে অন্যটায় হবে। এখন সবাই এই চিন্তা করে। যেদিকেই যাই, খেয়ে পরে বাঁচতে তো হবে, এটাই সবাই ভাবে। এর অর্থ সে অনিশ্চয়তায় থাকতে চায় না, ন্যূনতম নিরাপত্তাটুকু চায়। এছাড়া এখন প্রচুর প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা করে নিজের অবস্থান তৈরি করতে হবে। এ কারণে আবেদনের যোগ্যতা থাকলে একই শিক্ষার্থী একইসঙ্গে মেডিক্যাল বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা তো দিচ্ছেই, সাধারণ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। কোথাও না কোথাও তো ভর্তির সুযোগ পাবে, এই ভরসা থেকেই তারা এ কাজ করে।‘

তিনি আরও বলেন, ‘আবার কিছু টপ লেভেল শিক্ষার্থীর মনোভাব থাকে অন্যদের দেখানোর। সে যখন বুঝতে পারে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবে তখন শো-অফ (অন্যেকে দেখানোর) করার জন্য একইসঙ্গে সবখানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। দেখায় বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়ত ১০ম হয়েছে এখন মেডিক্যালে কত তম আসে।’
তিনি আরও বলেন,‘যদিও মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি কিছু আলাদা। তারপরও শিক্ষার্থীরা যে কোনও একটিতে টার্গেট করলেও অনেকেই দুটোতেই আবেদন করে। তবে এই দু্টিতে যারা আবেদন করে তাদের মধ্যে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করে।

কারণ,বুয়েট অথবা মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ না পেলে যেন অন্তত সাধারণ কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায়।‘ একই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়টির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে ভর্তির অনিশ্চয়তা এবং শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন,যে শিক্ষার্থী মেডিক্যালে পড়তে চায় সে তো নিশ্চিত না যে সে মেডিক্যালে পড়তে পারবে কিনা। আর সে কারণে তাদের কাছে যে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে যেমন, মেডিক্যালে পড়ার সুযোগ না হলে অন্তত অন্যান্য যে কোনও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন পড়তে পারে সেই সুযোগটি নেওয়ার জন্য তারা আবেদন করে রাখে। ফলে বোঝাই যায় ভর্তিতে অনিশ্চয়তা। এটাই মূলত এর প্রধান কারণ।’

তিনি বলেন,‘শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা অর্জন করলেই জীবনে সফল হওয়া সম্ভব নয়, এর বাইরে আত্মবিশ্বাসী হওয়াটাও খুব জরুরি, যা এখনকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আমরা ছড়িয়ে দিতে পারছি না। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাসেরও অভাব রয়েছে। আত্মবিশ্বাস না থাকার কারণেও তারা তাদের লক্ষ্য-টার্গেট ধরে রাখতে পারেনা। আত্মবিশ্বাস সৃষ্টিতে মূল্যবোধ বৃদ্ধি ও নৈতিক শিক্ষাটাও খুবই জরুরি যা এখনকার ছেলে-মেয়ে অনেকের মধ্যেই অনুপস্থিত।’