“আমার যখন ১৫ বছর বয়স তখন সুভাষ দত্ত দাদুর সাথে কাজ করেছি। এরপর যখন ‘কোটি টাকার কাবিন’ করি তখন আমার বয়স ১৭। মানুষের বুদ্ধিমত্তা গড়ে উঠার বয়স থেকে আমি পেশাগত জীবন ঢুকে গেছি, তখন থেকে স্বাধীন ও স্বাবলম্বী নারী। যারা স্বাধীন নারী তারা কখনো কাজ না করে বসে থাকতে পারে না।”— কথাগুলো অপু বিশ্বাসের।
নায়িকার আলাপ হয় শনিবার দুপুরে। সে আলাপচারিতায় ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি উঠে আসে ক্যারিয়ার ও অন্যান্য পরিকল্পনার কথা।
কেমন আছেন? আপনার বাবু কেমন আছে?
বাবু ভালো আছে আপনাদের দোয়ায়। আমিও ভালো।
বলেছিলেন এ মাসেই ফিরবেন।
খুব শিগগিরই ফিরব। ঠিক কবে তা বলতে পারছি না। আগে নিজের শারীরিক ফিটনেসসহ অন্যান্য বিষয়গুলো গুছিয়ে নিই।
কোন ছবি দিয়ে ফিরছেন?
এখনো ওইভাবে কোন পরিচালকের সাথে কথা হয়নি, তবে খুব শিগগিরই হয়ে যাবে।
শাকিব খান বলেছেন আপনার এ মুহূর্তে কাজ না করলেও চলবে। সেক্ষেত্রে তার কথানুযায়ী কাজ বন্ধ করে দেবেন নাকি চালিয়ে যাবেন?
দেখি না— আমি তো নিজেই প্রস্তুত না। আগে তো আমাকে নিজেকে প্রস্তুত হতে হবে। তারপর আমি সিদ্ধান্ত নেব— কোনটা আমি করব, কোনটা আমার সংসারের জন্য মঙ্গলজনক হবে।
অনেক বছর অন্য কোন নায়কের সাথে কাজ করছেন না, এবার কি তাহলে নতুনদের সাথে আপনাকে পাবো?
একই কথা বলব— আমি আগে নিজে প্রস্তুত হই। ঈদে একটা ছবি মুক্তি পাচ্ছে, সেটা নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালাই। সেটা ভালো যাক। তারপর সিদ্ধান্ত নেব কীভাবে এগোব।
শাকিব খান বেশ কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন— শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিনের হামলা, শারীরিক অসুস্থতা, পরিচালকের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে শুটিং বন্ধ। সবকিছু মিলিয়ে আপনার মন্তব্য কী?
আসলে মন্তব্য আর বাড়াতে চাই না। মন্তব্য বাড়ালেই মন্তব্যের সৃষ্টি হবে। এখানে এতটুকু যেটা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে— আর কথা না বাড়াই। আগামীতে কারো জীবনে যেন এমন কিছু না হয়। কারো জন্য এটা সুখময় না, মধুময় না, আর্শীবাদ না। আমি সবসময় চাইব এটা যেন আর না বাড়ে, যার ক্ষেত্রেই হোক না কেন। যেটা হয়েছে সেটা প্রত্যাশিত ছিল না। আমরা সবাই শিল্পী, আমরা এক পরিবার, একজোট। ভালো কিছু যেন সারাজীবন হয়— এটাই ওপরওয়ালার কাছে চাওয়া।
শাকিব খানের সাথে আপনার সর্বশেষ কবে দেখা হয়েছে কিংবা কথা হয়েছে?
শবে-বরাতের রাতে সে বাচ্চাকে দেখতে এসেছিল, দেখা হয়েছে।
আপনার সাথে কোন কথা হয়েছে কি?
থাক না! এটা আমার একান্ত পারিবারিক ব্যাপার তো। এটা আপাতত আলোচনার বাইরে থাক না। খুব বেশিদিন তো হয়নি। যাক, অনেক ঝামেলার মধ্যেই তো তাকে পড়তে হল। পরেই বলি।
আপনি তো একটা জিম চালাতেন, সেটা গত বছর বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আবার চালুর সম্ভাবনা আছে?
হ্যাঁ ইচ্ছে আছে। আমি তো খুব পছন্দ করি— পার্লার আর জিম। এ দুটো আমার দুর্বলতার জায়গা। ওইসময় হয়েছিল কী আমি নিজেও জিমে যাই না, বাচ্চাকে নিয়ে টেনশনে ছিলাম— কী হবে না হবে। আবার আরেকটা সমস্যা ছিল আমি পাবলিক প্লেসে আসতে পারছিলাম না। যার কারণে সব মিলিয়ে ওটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ইনশাল্লাহ এখন সবকিছু ঠিকঠাক, আমিও ঠিক আছি, আপনাদের দোয়ায় আমার বাচ্চাও আমার কোলে— সুস্থ আছে। আপাতত জিমটা নিয়ে কোন চিন্তা করছি না। তবে ইচ্ছে আছে আগামী বছর বড় পরিসরে চালু করার।
সাথে কি তাহলে পার্লারটাও চালু করবেন?
দুটো নিয়েই ইচ্ছে আছে। আর আমরা যেহেতু নায়িকা— আর পাঁচ-সাত বছর হয়ত কাজ করতে পারব, আমাদের সময়টা গোনা, স্থায়ীত্বটা কম। এখন তো সময় যায় পানির মতো— গত বছর ফেব্রুয়ারিতে আমি ফোন অফ করলাম, ২০১৭ চলে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে তো পাঁচ বছর চলে যাবে আর আমি নিজেও চাই না এর বেশি কাজ করতে। সেক্ষেত্রে আমাকে নিজেকে কোথাও না কোথাও স্থায়ী হতে হবে। কারণ আমরা কাজ করা মানুষ। বাংলা ভাষায় বললে ‘কামলা দেওয়া’। যারা সারাজীবন কাজ করে আসে তারা কখনো বসে থাকতে পারে না। আমার যখন ১৫ বছর বয়স তখন থেকে সুভাষ দত্ত দাদুর সাথে কাজ করেছি। এরপর যখন ‘কোটি টাকার কাবিন’ করি তখন আমার বয়স ১৭। মানুষের বুদ্ধিমত্তা গড়ে উঠার বয়স থেকে আমি পেশাগত জীবন ঢুকে গেছি, তখন থেকে স্বাধীন ও স্বাবলম্বী নারী। যারা স্বাধীন নারী তারা কখনো কাজ না করে বসে থাকতে পারে না। যার কারণে ভবিষ্যতে আমাকে কোন না কোন ব্যবসায় যেতেই হবে। যেহেতু দুর্বলতা আছে তাই পার্লার ও জিমটা করব।
তাহলে কি ছবি ছেড়ে দেওয়ার পর প্রযোজনা বা পরিচালনায় আসার ইচ্ছে আছে?
নিশ্চয়তা দিয়ে কোন কিছু বলতে পারব না, বা আলোচনা করতে পারব না। সময়, পরিবেশ, পরিস্থিতি কখন কোন দিকে নিয়ে যায়— মানুষ নিজেও বলতে পারবে না। এখন আমি আপনাকে বললাম একটা কথা, সেটা আদৌ করতে পারলাম না। তারচেয়ে বলিনি করতে পারলাম, সেটা ভালো হবে না? প্রযোজনা বা পরিচালনা এটা ভীষণ কঠিন একটি কাজ। আমার ইচ্ছে আছে প্রযোজনায় যাওয়ায়, তবে এ মুহূর্তে তো না। এটা আসলে ভবিষ্যৎ বলে দিবে।
ঈদে আপনার অভিনীত ‘রাজনীতি’ আসছে। কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন অল্প কিছু শুটিং বাকি আছে।
আসলে বাকি নেই। ব্যাপারটা হচ্ছে পোলাও হয়েছে, খাওয়া যাবে— বেরেস্তা না দিলেও চলবে। আমি আসলে চেয়েছিলাম কাজটা আরেকটু সুন্দর হোক, অবশ্য ওটা না হলেও চলবে।
শাকিব বলেছেন ঈদে শুধু ‘রংবাজ’ আর ‘নবাব’ আসবে। সেক্ষেত্রে ‘রাজনীতি’ কি অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে?
শাকিব ‘রাজনীতি’ আসবে না এটা বলেননি। উনি বলেছেন ঈদের ছবি তো ‘নবাব’ ও ‘রংবাজ’। ছবি দুটি নতুন বলে হয়ত এ কথা বলেছেন, এ জন্য হয়ত আশাটা বেশি। ‘রাজনীতি’ নিয়ে কিন্তু কোন মন্তব্য করেননি। কিন্তু আমি মনে করি ‘রাজনীতি’ ছবিটা সেরা। ঈদে যদি আসে ইনশাল্লাহ্, ইনশাল্লাহ্, ওপরওয়ালা যদি সহায় হন, আমার গুরুজনরা যদি দোয়া করেন, আমি মনে করি এ ছবিটা অনেক অনেক ব্যবসা করবে— একদম তাক লাগিয়ে দেবে। কারণ এ ছবিটা শুধুমাত্র বাংলাদেশি ছবি, বাংলা ভাষার ছবি, বাংলার মানুষের ছবি, আমাদের যে লোকজন কাজ করেছে তাদের শ্রমের ছবি।
বন্ধ থাকা ছবিগুলোর আপডেট কী?
আমি তো একবছর ছিলাম না। শাকিব তো সে সময়ে জানত আমি কবে ফিরব, কবে সুস্থতা লাভ করব। যার কারণে সে তার শিডিউলগুলোকে সেভাবে দিয়েছে। এখন আমি হঠাৎ করে আমি এসে বললাম, ‘আমি এখন সুস্থ, চলো শিডিউল দিই— তা তো সম্ভব না, ঠিকও দেখায় না।’ তার জন্য আমার মনে হয় শাকিবের শিডিউলে কাজ করা উচিত— কারণ আমি তো কাজে ছিলাম না, সে তো কাজে ছিল।
আপনি ইন্ডাস্ট্রিতে এক যুগ ধরে আছেন…।
না দশ বছর। কারণ মাঝখানে আরো দু-একবার গ্যাপ গেছে সেটাকে কেন ধরবেন?
এ দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা থেকে আপনার মতে আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পের বর্তমান সংকটগুলো কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায়?
একটা কথাই বলব— সবাই মিলে মিশে কাজ করতে হবে। সবার প্রতি যদি হিংসে-দ্বন্দ্বটা না রাখি, তাহলে ভালো কিছু করা সম্ভব এবং ভালো কিছু দাঁড়াবে। আমরা যদি একতাবদ্ধ না থাকি দিনের পর দিন সমস্যার সমাধান হবে না।