ঢাকা , শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমন একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা দেখতে চাই, যেখানে বৈষম্য থাকবে না

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার থেকে ছাত্রদের সেই দাবি গড়িয়েছিল সরকার পতনের এক দফাতে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন দেশের সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।

প্রথম থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনে পাশে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ছাত্রদের হয়ে কথা বলতে রাস্তায় নেমেছিলেন তিনি। ছাত্র আন্দোলন, সরকার পদত্যাগের পর দেশজুড়ে সহিংসতা ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন বাঁধন।

আন্দোলন নিয়ে বাঁধন বলেন, ‘এই আন্দোলনটা ছাত্র-জনতার আন্দোলন; যে আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। এই আন্দোলনের আগে কী পরিমাণ অত্যাচার, জুলুম এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে হয়েছে, সেই খবরগুলো আন্তর্জাতিক ও দেশের গণমাধ্যমে পুরোপুরি প্রচার হয়নি। তাই অনেকেই জানে না। শেষ পর্যন্ত শোষিত মানুষগুলোই রাস্তায় নেমে এসেছে।’

গত ১৫ বছর সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও সুবিধাভোগী কিছু মানুষের কারণে দেশজুড়ে সহিংসতা হচ্ছে বলে মনে করেন বাঁধন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো গণ-অভ্যুত্থানের পর ট্রানজেকশন যে পিরিয়ড থাকে, সেটা খুব কনফিউজ থাকে। সব গণ-অভ্যুত্থানের পরই এমনটা হয়েছে। মানুষের ১৫ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আছে। তিনি তো এক দিন, দুই দিন ধরে স্বৈরাচারী সিস্টেম চালু করেননি। গত ১৫ বছর ধরে এগুলো চলেছে। আমরা কথা বলতে পারতাম না। দাসত্ব গ্রহণ করেছিলাম। সেই দাসত্ব থেকে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন আমাদের মুক্তি দিয়েছে। বিজয়ের উল্লাসের সঙ্গে সেই ক্ষোভগুলো বের হচ্ছে। সেই সঙ্গে কিছু সুবিধাবাদী লোকজন তো আছেই। কিছু সাম্প্রদায়িক উগ্র চিন্তার মানুষ এই আন্দোলনকে ঢাল বানিয়ে অ্যাজেন্ডা পূরণ করতে চেয়েছে। এগুলো যে অপ্রত্যাশিত ঘটনা, তা নয়। আমি মনে করি, ছাত্র-জনতার যে বিজয় হয়েছে, তা কোনোভাবেই কলুষিত হচ্ছে না এই ঘটনাগুলো দিয়ে। গত কয়েক দিন শিক্ষার্থীরা রাস্তা সামলাচ্ছেন, মন্দির-মসজিদ পাহারা দিচ্ছেন। আশা করি, শিগগির সুন্দর বাংলাদেশের মুখ দেখতে পাব।’

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি নষ্ট করা প্রসঙ্গেও কথা বলেন বাঁধন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের সবার। তিনি শুধু আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাবা নন, উনি শুধু আওয়ামী লীগের নন। উনি সমস্ত বাংলাদেশের। উনি বাংলাদেশের জাতির পিতা, আমাদের বঙ্গবন্ধু। যা হয়েছে, সেটি খুব ঘৃণিত একটি কাজ হয়েছে। গত সরকারের কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে অসম্মানিত হওয়া তিনি কোনোভাবেই ডিজার্ভ করেন না।’

জলের গানের রাহুল আনন্দের বাসায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছেন অভিনেত্রী। বাঁধন বলেন, ‘যারা এমনটা করেছে, তাদের ধিক্কার জানাই। এটা একেবারে ঘৃণিত কাজ হয়েছে। রাহুলদা শুধু ভালো গায়ক নন, একজন ভালো মানুষ। উনি এমন একজন, যাঁকে প্রত্যেকে নিজের প্রাণের মানুষ মনে করেন। তাঁর বাড়িতে হামলার ঘটনায় আমি লজ্জিত এবং ঘৃণা জানাই।’

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি প্রসঙ্গে বাঁধনের ভাষ্য, ‘রাজনৈতিকভাবে আমরা একটা বিদ্বেষের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। কিছু মানুষ এটাকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে চায়। আমাদের এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রতিহিংসার নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা এই ধরনের রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে চায়। আমরা কোনো বিদ্বেষের রাজনীতি করব না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী—কেউ আলাদা নই। সবাই এক। এমন একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা দেখতে চাই, যেখানে বৈষম্য থাকবে না।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

এমন একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা দেখতে চাই, যেখানে বৈষম্য থাকবে না

আপডেট টাইম : ১০:০৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০২৪

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নেমেছিলেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার থেকে ছাত্রদের সেই দাবি গড়িয়েছিল সরকার পতনের এক দফাতে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন দেশের সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।

প্রথম থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনে পাশে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। ছাত্রদের হয়ে কথা বলতে রাস্তায় নেমেছিলেন তিনি। ছাত্র আন্দোলন, সরকার পদত্যাগের পর দেশজুড়ে সহিংসতা ও ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন বাঁধন।

আন্দোলন নিয়ে বাঁধন বলেন, ‘এই আন্দোলনটা ছাত্র-জনতার আন্দোলন; যে আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে। এই আন্দোলনের আগে কী পরিমাণ অত্যাচার, জুলুম এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে হয়েছে, সেই খবরগুলো আন্তর্জাতিক ও দেশের গণমাধ্যমে পুরোপুরি প্রচার হয়নি। তাই অনেকেই জানে না। শেষ পর্যন্ত শোষিত মানুষগুলোই রাস্তায় নেমে এসেছে।’

গত ১৫ বছর সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ও সুবিধাভোগী কিছু মানুষের কারণে দেশজুড়ে সহিংসতা হচ্ছে বলে মনে করেন বাঁধন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো গণ-অভ্যুত্থানের পর ট্রানজেকশন যে পিরিয়ড থাকে, সেটা খুব কনফিউজ থাকে। সব গণ-অভ্যুত্থানের পরই এমনটা হয়েছে। মানুষের ১৫ বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ আছে। তিনি তো এক দিন, দুই দিন ধরে স্বৈরাচারী সিস্টেম চালু করেননি। গত ১৫ বছর ধরে এগুলো চলেছে। আমরা কথা বলতে পারতাম না। দাসত্ব গ্রহণ করেছিলাম। সেই দাসত্ব থেকে ছাত্র-জনতার এই আন্দোলন আমাদের মুক্তি দিয়েছে। বিজয়ের উল্লাসের সঙ্গে সেই ক্ষোভগুলো বের হচ্ছে। সেই সঙ্গে কিছু সুবিধাবাদী লোকজন তো আছেই। কিছু সাম্প্রদায়িক উগ্র চিন্তার মানুষ এই আন্দোলনকে ঢাল বানিয়ে অ্যাজেন্ডা পূরণ করতে চেয়েছে। এগুলো যে অপ্রত্যাশিত ঘটনা, তা নয়। আমি মনে করি, ছাত্র-জনতার যে বিজয় হয়েছে, তা কোনোভাবেই কলুষিত হচ্ছে না এই ঘটনাগুলো দিয়ে। গত কয়েক দিন শিক্ষার্থীরা রাস্তা সামলাচ্ছেন, মন্দির-মসজিদ পাহারা দিচ্ছেন। আশা করি, শিগগির সুন্দর বাংলাদেশের মুখ দেখতে পাব।’

বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি নষ্ট করা প্রসঙ্গেও কথা বলেন বাঁধন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের সবার। তিনি শুধু আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাবা নন, উনি শুধু আওয়ামী লীগের নন। উনি সমস্ত বাংলাদেশের। উনি বাংলাদেশের জাতির পিতা, আমাদের বঙ্গবন্ধু। যা হয়েছে, সেটি খুব ঘৃণিত একটি কাজ হয়েছে। গত সরকারের কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে অসম্মানিত হওয়া তিনি কোনোভাবেই ডিজার্ভ করেন না।’

জলের গানের রাহুল আনন্দের বাসায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছেন অভিনেত্রী। বাঁধন বলেন, ‘যারা এমনটা করেছে, তাদের ধিক্কার জানাই। এটা একেবারে ঘৃণিত কাজ হয়েছে। রাহুলদা শুধু ভালো গায়ক নন, একজন ভালো মানুষ। উনি এমন একজন, যাঁকে প্রত্যেকে নিজের প্রাণের মানুষ মনে করেন। তাঁর বাড়িতে হামলার ঘটনায় আমি লজ্জিত এবং ঘৃণা জানাই।’

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি প্রসঙ্গে বাঁধনের ভাষ্য, ‘রাজনৈতিকভাবে আমরা একটা বিদ্বেষের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। কিছু মানুষ এটাকে পুঁজি করে এগিয়ে যেতে চায়। আমাদের এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। প্রতিহিংসার নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীরা এই ধরনের রাজনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে চায়। আমরা কোনো বিদ্বেষের রাজনীতি করব না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, মুসলমান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী—কেউ আলাদা নই। সবাই এক। এমন একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা দেখতে চাই, যেখানে বৈষম্য থাকবে না।’