ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোনো অপরাধ নেই, অথচ অভিনয় করতে পারব না

শিল্পকলা একাডেমিতে দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’র প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া, নাট্যকর্মীদের প্রতিবাদ সভায় হামলা- সব মিলিয়ে নাটকপাড়ায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। এবার শিল্পকলার মঞ্চে অভিনয় থেকে নাট্যজন মামুনুর রশীদকে সাময়িক দূরে থাকার অনুরোধ করেছেন একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। এমন অনুরোধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একুশে পদকজয়ী নাট্যজন মামুনুর রশীদ।

কিংবদন্তি এই অভিনেতার কথায়, ‘শিল্পকলার ডিজি সাহেব ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন, আমি যাতে শিল্পকলায় অভিনয় না করি। “রাঢ়াঙ” নাটকের ২০০তম প্রদর্শনী হয়েছে। এখন আমাকে বলা হচ্ছে, এই নাটকে যেন অভিনয় না করি। কারণ, হিসেবে তিনি ছাত্র আন্দোলনের সময় দেওয়া ২৪ জন বিশিষ্টজনের একটি বিবৃতির কথা জানিয়েছেন। আমি কিন্তু সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমিতে “ময়ূর সিংহাসন” নাটকে অভিনয় করেছি, মহিলা সমিতির মঞ্চেও অভিনয় করেছি, তাতেও কোনো সমস্যা হয়নি। শিল্পকলা একাডেমির অসুবিধার জায়গাটা কোথায়? অবশ্যই অসুবিধার একটা জায়গা আছে। কারণ হলো “নিত্যপুরাণ”কে তারা বন্ধ করেছে, পরে এর প্রতিবাদ সভায় আমার ওপর হামলা করেছে। পরদিন আমাদের শো ছিল, কিন্তু তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম। তখন থেকেই এই কথাগুলোর সূচনা হলো, আমি যদি অভিনয় করি তাহলে হামলা হবে।’

এদিকে, শিল্পকলায় মামুনুর রশীদের অভিনয় করা থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গে একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমি মামুনুর রশীদকে নিজে ফোন করে তাদের “রাঢ়াঙ” নাটকের শো করতে বলেছিলাম। এই নাটকটি করা দরকার। এই নাটকে উনি ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। তাকে অনুরোধ করেছি, সেই চরিত্র যদি অন্য কাউকে দিয়ে করানো যায়। কারণ, আপনি যেহেতু আন্দোলনের সময় রাজাকার নিয়ে কিছু বলেছিলেন, এটা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ, কষ্ট আছে। আপনি গেলে মানুষের সেই কষ্টটা বাড়বে। সেই জন্য আপনি ছাড়া যদি নাটকটির প্রদর্শনী সম্ভব হয়, এটা আপনি দেখেন।’

এমন অনুরোধে ক্ষোভ জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি কি অভিনয় করতে পারব না! আমার কোনো অপরাধ নেই, অথচ আমাকে অভিনয় করতে দেবে না। রাজাকার স্লোগান নিয়ে ২৪ জন বিশিষ্টজন বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেখানে আমার নাম ছিল। ওই বিবৃতিতে কী অপরাধ আছে? এখন তো বলা হচ্ছে, আপনারা কথা বলেন। সেই কথাই বলতে পারব না? এমন একটা সময় চলে এসেছে এই বাংলাদেশে, একটি মহল তো চাচ্ছেই শিল্পসাহিত্য-সংস্কৃতি বন্ধ হয়ে যাক। আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি, “রাঢ়াঙ” আমরা করব না, “কম্পানি”ও করব না। চলুক যত দিন এই ব্যবস্থা চলে।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

কোনো অপরাধ নেই, অথচ অভিনয় করতে পারব না

আপডেট টাইম : ১১:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

শিল্পকলা একাডেমিতে দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’র প্রদর্শনী বন্ধ করে দেওয়া, নাট্যকর্মীদের প্রতিবাদ সভায় হামলা- সব মিলিয়ে নাটকপাড়ায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। এবার শিল্পকলার মঞ্চে অভিনয় থেকে নাট্যজন মামুনুর রশীদকে সাময়িক দূরে থাকার অনুরোধ করেছেন একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ। এমন অনুরোধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন একুশে পদকজয়ী নাট্যজন মামুনুর রশীদ।

কিংবদন্তি এই অভিনেতার কথায়, ‘শিল্পকলার ডিজি সাহেব ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন, আমি যাতে শিল্পকলায় অভিনয় না করি। “রাঢ়াঙ” নাটকের ২০০তম প্রদর্শনী হয়েছে। এখন আমাকে বলা হচ্ছে, এই নাটকে যেন অভিনয় না করি। কারণ, হিসেবে তিনি ছাত্র আন্দোলনের সময় দেওয়া ২৪ জন বিশিষ্টজনের একটি বিবৃতির কথা জানিয়েছেন। আমি কিন্তু সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমিতে “ময়ূর সিংহাসন” নাটকে অভিনয় করেছি, মহিলা সমিতির মঞ্চেও অভিনয় করেছি, তাতেও কোনো সমস্যা হয়নি। শিল্পকলা একাডেমির অসুবিধার জায়গাটা কোথায়? অবশ্যই অসুবিধার একটা জায়গা আছে। কারণ হলো “নিত্যপুরাণ”কে তারা বন্ধ করেছে, পরে এর প্রতিবাদ সভায় আমার ওপর হামলা করেছে। পরদিন আমাদের শো ছিল, কিন্তু তা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম। তখন থেকেই এই কথাগুলোর সূচনা হলো, আমি যদি অভিনয় করি তাহলে হামলা হবে।’

এদিকে, শিল্পকলায় মামুনুর রশীদের অভিনয় করা থেকে বিরত থাকা প্রসঙ্গে একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘আমি মামুনুর রশীদকে নিজে ফোন করে তাদের “রাঢ়াঙ” নাটকের শো করতে বলেছিলাম। এই নাটকটি করা দরকার। এই নাটকে উনি ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন। তাকে অনুরোধ করেছি, সেই চরিত্র যদি অন্য কাউকে দিয়ে করানো যায়। কারণ, আপনি যেহেতু আন্দোলনের সময় রাজাকার নিয়ে কিছু বলেছিলেন, এটা নিয়ে মানুষের ক্ষোভ, কষ্ট আছে। আপনি গেলে মানুষের সেই কষ্টটা বাড়বে। সেই জন্য আপনি ছাড়া যদি নাটকটির প্রদর্শনী সম্ভব হয়, এটা আপনি দেখেন।’

এমন অনুরোধে ক্ষোভ জানিয়ে মামুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি কি অভিনয় করতে পারব না! আমার কোনো অপরাধ নেই, অথচ আমাকে অভিনয় করতে দেবে না। রাজাকার স্লোগান নিয়ে ২৪ জন বিশিষ্টজন বিবৃতি দিয়েছিলেন, সেখানে আমার নাম ছিল। ওই বিবৃতিতে কী অপরাধ আছে? এখন তো বলা হচ্ছে, আপনারা কথা বলেন। সেই কথাই বলতে পারব না? এমন একটা সময় চলে এসেছে এই বাংলাদেশে, একটি মহল তো চাচ্ছেই শিল্পসাহিত্য-সংস্কৃতি বন্ধ হয়ে যাক। আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি, “রাঢ়াঙ” আমরা করব না, “কম্পানি”ও করব না। চলুক যত দিন এই ব্যবস্থা চলে।’