ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শর্তের বেড়াজালে আটকা পান রপ্তানি

পান বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল। খাওয়া-দাওয়ার পর পান-সুপারি ছাড়া অনেকেরই তৃপ্তি আসে না্। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবসহ বিয়ে-শাদীতে পানের চাহিদা লক্ষ্যণীয়। শুধু দে‌শেই নয় বিদে‌শের মা‌টি‌তেও আমাদের দেশের পা‌নের চা‌হিদা ব্যাপক। আর তাই‌ দে‌শের চা‌হিদা মি‌টি‌য়ে এই পান রপ্তানী হ‌য় ইউ‌রো‌পের বি‌ভিন্ন দে‌শে।

দেশের আঙিনা ছেড়ে ইউরোপে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও বর্তমানে নানা শর্ত পূরনের বেড়াজালে আটকে পড়েছে পান। আসছে না বৈদেশিক মুদ্রা, স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না কৃষকদের। একের পর এক শর্ত কৃষকদের পান চাষে নিরুৎসাহিত করছে।বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৩৫০কোটি টাকার পান রপ্তানী হলেও এখন তা শর্তের বেড়াজালে আটকে আছে।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের পানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া স্যালমোনেলা থাকার অভিযোগ এনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পান নেয়া বন্ধ বা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেসময় থেকে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়েনের দেশগুলোতে বাংলাদেশের পান রপ্তানী বন্ধ হয়ে যায়।

paan pic-3_43969চলতি বছরের ৩০ জুন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও আবারো নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বেড়ে যাওয়ায় ২০১৮ সালের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বাংলাদেশের পান রপ্তানী হবেনা বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং ও বাংলাদেশ ফ্রুট ভেজিটেবল এলাইড প্রোডাক্ট এক্সপোটারি এ্যাসোসিয়েশন সুত্রে জানা গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এর উপ পরিচালক (রপ্তানী) আনোয়ার হোসেন খান পূর্ব পশ্চিমকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত সপ্তাহে পান রপ্তানীতে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর কথা জানিয়ে দিয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত নতুন করে জারি করা এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

ত‌বে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যাকটেরিয়া ‘স্যালমোনেলা’ পরীক্ষার করা যায় এমন ল্যাবরেটরি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই কিছু শর্ত পূরণ সা‌পে‌ক্ষে ইউরোপের ১৭টি দেশে পান রপ্তানী করা যাবে বলে আনোয়ার হোসেন ব‌লেন।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং সূত্রে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকায় এরইম‌ধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছু শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশ থেকে ফের পান পাতা আমদানীতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ আগ্রহের আলোকে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং চল‌তি বছ‌রের ২১ জানুয়ারীতে রপ্তানীকারকদের পান পাতা থেকে স্যালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়া অপসারণসহ তাদের দেয়া কিছু শর্ত পূরণের অনুরোধ জানায়।

‌যেসব শর্ত পূরণ কর‌লে পান রপ্তানী করা যাবে সেগু‌লো‌র ম‌ধ্যে প্রধান শর্তগু‌লো হ‌লো নিবন্ধিত রপ্তানীকারকরাই শুধুমাত্র পান রপ্তানী করতে পারবে। কনট্রাক্ট ফার্মিং এর আওতায় স্যালমোনেলা মুক্ত পানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পান রপ্তানী করা যাবে। এ্যাকশন প্লান মোতাবেক পান উৎপাদন ও পরিবহণসহ এইচএসিসিপি নীতিমালা অনুসরণ করে সম্পূর্ণ জীবানুমুক্ত অবস্থায় প্যাকেজিং নিশ্চিত করতে হবে। স্যালমোনেলা মুক্ত রপ্তানীযোগ্য পান উৎপাদনের লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৈরী এ্যাকশন প্লান অনুযায়ী নির্বাচিত ১৩টি জেলার ৫৯৫ জন কৃষকের তালিকা হতে কনট্রাক্ট ফার্মিং এর জন্য কৃষক নির্বাচন ও চুক্তি করতে হবে। চুক্তিবদ্ধ কৃষকের তালিকা (নিবন্ধন ফর্মের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ) উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এ জমা দিতে হবে। বিসিএসআইআর থেকে স্যালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়া ফ্রি টেস্ট ফলাফলের ভিত্তিতে পিসি ইস্যু করা হবে ইত্যাদি।

আন‌ন্দের কথা এ নির্দেশনার আলোকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. বাহানুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর লতিফুল বারীকে দিয়ে পানের পাতা থেকে স্যালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়া অপসারণের উপায় আবিস্কার করা হয়।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এবং রপ্তানীকারকদের নানা উদ্যোগের পরেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। আর তাই আবারও শর্তসপেক্ষে পান আমদানীর আগ্রহ জানিয়ে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রুট ভেজিটেবল এলাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টারি এ্যাসোসিয়েশন এর উপদেষ্টা মঞ্জুরুল ইসলাম পূর্ব পশ্চিমকে বলেন, স্যালমোনেলা অপসারণের উপায় উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এখন কন্ট্রাক্ট ফার্মিংসহ অন্যান্য শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালের আগেই পান রপ্তানী করা যাবে আশা করছি।

হরটেক্স ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম পূর্ব পশ্চিমকে বলেন, পান সরাসরি চিবিয়ে খেতে হয় বিধায় স্বাস্থ্যসম্মত দিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার। পান একটি অর্থকারী ফসল। বাংলাদেশ থেকে ৩৫০কোটি টাকার পান বিদেশে রপ্তানী হয়। কাজেই বিদেশী ভোক্তাদের কথা মাথায় নিয়েই আমাদের কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।

নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে পড়ার চেয়ে রপ্তানী না করাই ভাল মন্তব্য করে উপ পরিচালক (রপ্তানী) আনোয়ার হোসেন খান বলেন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মতের বিষয় নিশ্চিত না হয়ে কোনো পণ্য বিদেশে রপ্তানী করা হবেনা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

শর্তের বেড়াজালে আটকা পান রপ্তানি

আপডেট টাইম : ০৩:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জুন ২০১৬

পান বাংলাদেশের একটি অর্থকরী ফসল। খাওয়া-দাওয়ার পর পান-সুপারি ছাড়া অনেকেরই তৃপ্তি আসে না্। বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবসহ বিয়ে-শাদীতে পানের চাহিদা লক্ষ্যণীয়। শুধু দে‌শেই নয় বিদে‌শের মা‌টি‌তেও আমাদের দেশের পা‌নের চা‌হিদা ব্যাপক। আর তাই‌ দে‌শের চা‌হিদা মি‌টি‌য়ে এই পান রপ্তানী হ‌য় ইউ‌রো‌পের বি‌ভিন্ন দে‌শে।

দেশের আঙিনা ছেড়ে ইউরোপে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও বর্তমানে নানা শর্ত পূরনের বেড়াজালে আটকে পড়েছে পান। আসছে না বৈদেশিক মুদ্রা, স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না কৃষকদের। একের পর এক শর্ত কৃষকদের পান চাষে নিরুৎসাহিত করছে।বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৩৫০কোটি টাকার পান রপ্তানী হলেও এখন তা শর্তের বেড়াজালে আটকে আছে।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের পানে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া স্যালমোনেলা থাকার অভিযোগ এনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পান নেয়া বন্ধ বা নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সেসময় থেকে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়েনের দেশগুলোতে বাংলাদেশের পান রপ্তানী বন্ধ হয়ে যায়।

paan pic-3_43969চলতি বছরের ৩০ জুন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কথা থাকলেও আবারো নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বেড়ে যাওয়ায় ২০১৮ সালের আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে বাংলাদেশের পান রপ্তানী হবেনা বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং ও বাংলাদেশ ফ্রুট ভেজিটেবল এলাইড প্রোডাক্ট এক্সপোটারি এ্যাসোসিয়েশন সুত্রে জানা গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এর উপ পরিচালক (রপ্তানী) আনোয়ার হোসেন খান পূর্ব পশ্চিমকে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন গত সপ্তাহে পান রপ্তানীতে নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর কথা জানিয়ে দিয়েছে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত নতুন করে জারি করা এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে।

ত‌বে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ব্যাকটেরিয়া ‘স্যালমোনেলা’ পরীক্ষার করা যায় এমন ল্যাবরেটরি থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেই কিছু শর্ত পূরণ সা‌পে‌ক্ষে ইউরোপের ১৭টি দেশে পান রপ্তানী করা যাবে বলে আনোয়ার হোসেন ব‌লেন।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং সূত্রে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকায় এরইম‌ধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিছু শর্ত সাপেক্ষে বাংলাদেশ থেকে ফের পান পাতা আমদানীতে আগ্রহ প্রকাশ করে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ আগ্রহের আলোকে বাংলাদেশ সরকারের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং চল‌তি বছ‌রের ২১ জানুয়ারীতে রপ্তানীকারকদের পান পাতা থেকে স্যালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়া অপসারণসহ তাদের দেয়া কিছু শর্ত পূরণের অনুরোধ জানায়।

‌যেসব শর্ত পূরণ কর‌লে পান রপ্তানী করা যাবে সেগু‌লো‌র ম‌ধ্যে প্রধান শর্তগু‌লো হ‌লো নিবন্ধিত রপ্তানীকারকরাই শুধুমাত্র পান রপ্তানী করতে পারবে। কনট্রাক্ট ফার্মিং এর আওতায় স্যালমোনেলা মুক্ত পানের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে পান রপ্তানী করা যাবে। এ্যাকশন প্লান মোতাবেক পান উৎপাদন ও পরিবহণসহ এইচএসিসিপি নীতিমালা অনুসরণ করে সম্পূর্ণ জীবানুমুক্ত অবস্থায় প্যাকেজিং নিশ্চিত করতে হবে। স্যালমোনেলা মুক্ত রপ্তানীযোগ্য পান উৎপাদনের লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তৈরী এ্যাকশন প্লান অনুযায়ী নির্বাচিত ১৩টি জেলার ৫৯৫ জন কৃষকের তালিকা হতে কনট্রাক্ট ফার্মিং এর জন্য কৃষক নির্বাচন ও চুক্তি করতে হবে। চুক্তিবদ্ধ কৃষকের তালিকা (নিবন্ধন ফর্মের মাধ্যমে চুক্তিবদ্ধ) উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এ জমা দিতে হবে। বিসিএসআইআর থেকে স্যালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়া ফ্রি টেস্ট ফলাফলের ভিত্তিতে পিসি ইস্যু করা হবে ইত্যাদি।

আন‌ন্দের কথা এ নির্দেশনার আলোকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. বাহানুর রহমান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর লতিফুল বারীকে দিয়ে পানের পাতা থেকে স্যালমোনেলা ব্যাক্টেরিয়া অপসারণের উপায় আবিস্কার করা হয়।

উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইং এবং রপ্তানীকারকদের নানা উদ্যোগের পরেও সন্তুষ্ট হতে পারেনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। আর তাই আবারও শর্তসপেক্ষে পান আমদানীর আগ্রহ জানিয়ে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ফ্রুট ভেজিটেবল এলাইড প্রোডাক্ট এক্সপোর্টারি এ্যাসোসিয়েশন এর উপদেষ্টা মঞ্জুরুল ইসলাম পূর্ব পশ্চিমকে বলেন, স্যালমোনেলা অপসারণের উপায় উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এখন কন্ট্রাক্ট ফার্মিংসহ অন্যান্য শর্ত পূরণ করে ২০১৮ সালের আগেই পান রপ্তানী করা যাবে আশা করছি।

হরটেক্স ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম পূর্ব পশ্চিমকে বলেন, পান সরাসরি চিবিয়ে খেতে হয় বিধায় স্বাস্থ্যসম্মত দিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার। পান একটি অর্থকারী ফসল। বাংলাদেশ থেকে ৩৫০কোটি টাকার পান বিদেশে রপ্তানী হয়। কাজেই বিদেশী ভোক্তাদের কথা মাথায় নিয়েই আমাদের কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।

নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে পড়ার চেয়ে রপ্তানী না করাই ভাল মন্তব্য করে উপ পরিচালক (রপ্তানী) আনোয়ার হোসেন খান বলেন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মতের বিষয় নিশ্চিত না হয়ে কোনো পণ্য বিদেশে রপ্তানী করা হবেনা।