বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মেহেরপুরে আগাম কপি চাষ করে অনেক চাষি স্বাবলম্বী হয়েছে। আগাম কপি চাষ করে শত শত বেকার যুবক তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে আগাম কপি চাষ। কিন্তু চলতি মৌসুমে কপির লিফ ব্লাইট বা পাতা ঝলসানো রোগ দেখা দেওয়ায় কিছু কিছু চাষি ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে।
মেহেরপুর জেলার কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় আগাম কপি চাষ করছে। বিশেষ করে জেলার সাহার বাটি গ্রামে ব্যাপক হারে এ কপি চাষ দেখা যাচ্ছে। এক সময় সাহারবাটির বালুময় জমিতে ধান-পাট ছাড়া অন্য ফসলের চাষ তেমন একটা হতো না। বিশ বছর আগে এ গ্রামে কপি চাষ শুরু হয়। লাভজনক আবাদ হিসেবে কপি চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠে এলাকার কৃষকেরা। এরপর ৫/৬ বছর আগে থেকে এ এলাকার চাষিরা আগাম কপি চাষের দিকে ঝুকেছে। নিজের অভিজ্ঞতায় চাষিরা এ চাষ শুরু করে। আগাম কপি চাষ সাহার বাটি গ্রাম পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে জেলার বিভিন্ন গ্রামে। এ চাষের মাধ্যমে কৃষকেরা বেশ লাভবানও হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত কপি জেলার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র মতে এ বছর আগাম কপি চাষ হয়েছে ৬শ ৫০ হেক্টর জমিতে বাঁধা কপি ও ফুল কপির চাষ হয়েছে। আগাম কপি চাষি সোহেল জানান, তিনি এবার ২০ বিঘা জমিতে আগাম কপির চাষ করেছেন। এ চাষে তার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। বিঘা প্রতি জমিতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা লাভ হচ্ছে।
একই এলাকার কপি চাষি তুহিন আলী বলেন, এখানকার কৃষকেরা নিজস্ব চিন্তা ধারায় আগাম কপি চাষ করছে। কৃষি বিভাগের লোকেরা এ কপি চাষের কোন খোঁজ খবর রাখে না। কৃষি বিভাগের পরামর্শ পেলে এ চাষে আরও উন্নতি ঘটানো যেত। জেলার আগাম কপি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট সহ দেশের বড় বড় জেলায় সরবরাহ করা হয়। বাজারে আগাম কপির চাহিদাও ভাল। আগাম কপি তোলার পর সে জমিতে আলু সহ অনন্য ফসলের চাষ করা যায়।
সদর উপজেলার আগাম কপি চাষি রহিদুল জানান, চলতি মৌসুমে কপির জমিতে পাতা কুঁকড়ে পচে যাচ্ছ। ফলে জমিতে কপির গুটি আসার পর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ করে কোন কাজ হচ্ছে না।
দিন মজুর ইব্রাহিম বলেন, আগাম কপি চাষের কারণে তাদের বাড়তি আয়ের একটা সুযোগ হচ্ছে। এ সময় সাধারণত কাজ থাকে কম। আগাম কপি চাষ করার ফলে তারা এখন ঐ সব কপির ক্ষেতে দু’বেলা কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কপি সাধারণত একটি শীতকালীন সবজি। ঝুঁকি থাকা স্বত্বেও অনেকেই আগাম কপি চাষ করছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও খরা এ চাষের বড় অন্তরায়। চাষিরা ঝুঁকি নিয়ে আগাম কপি চাষ করে লাভবানও হচ্ছে। কপি, চাষ করে একই জমিতে আলুর চাষ করতে পারছে চাষিরা। এতে জমির ব্যবহার বাড়ছে, লাভবানও হচ্ছে। তবে চলতি বছরে অতিরিক্ত খরার কারণে কপির জমিতে লিফ ব্লাইট বা পাতা ঝলসানো রোগ দেখা দিয়েছে। ছত্রাক নাশক ঔষধ পয়োগ করলে এ রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। আগাম কপিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।