ভারতের আসাম রাজ্য থেকে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীপথে ভাটির দিকে ভেসে আসা বন্য হাতিটি কিছুদিন সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার যুক্তিগাছাচর থেকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলার লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। পরদিন সকালে কামরাবাদ ইউনিয়নের চর বড় বাড়িয়া বিলের পানিতে হাতিটি দাড়িয়ে থাকতে দেখে স্থানীয় শতশত দর্শনার্থী বিলের পাড়ে ভীড় করেছে।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার ছিন্নারচর, মনসুর নগরচর, পিরগাছা, পঁচাত্তুর চর, খাসরাজবাড়ী ও ছিন্নারচরে টানা কয়েকদিন অবস্থানের পর বৃহস্পতিবার ভোরে হাতিটি যমুনা নদী সাঁতরে সরিষাবাড়ী উপজেলার সাতপোয়া ইউনিয়নের লোকালয়ে প্রবেশ করে। পরে হাতিটি সাতপোয়া ইউনিয়নের চর রৌহা, নান্দিনা ও ছাতারিয়া এলাকা ঘুরে বৃহষ্পতিবার সকালে কামরাবাদ ইউনিয়নের শুয়াকৈর গ্রামে প্রবেশ করে। এ সময় স্থানীয় আতঙ্কিত লোকজন জড়ো হয়ে হৈ চৈ, টিনের শব্দ ও আগুন জ্বালিয়ে হাতিটি তাড়ানোর চেষ্টা করে। এতে হাতিটি দিগি¦দিক ছুটোছুটি করে কয়েকটি বাড়িঘর ভাঙচুর এবং বেশ কিছু গাছপালা ও ফসল বিনষ্ট করে।
লোকজনের ধাওয়ায় ডিগ্রি পাচবাড়ি, শুয়াকৈর, বড়বাড়িয়াসহ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে অবশেষ হাতিটি চর বড়বাড়িয়া বিলে বন্যার পানিতে আশ্রয় নেয়। সারাদিন হাজার হাজার উৎসুক জনতা হাতিটি দেখতে বিলের পাশে জড়ো হয়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, বন্য হাতি আক্রমন চালিয়ে তার একটি ঘরসহ শুয়াকৈর গ্রামের বুদু ও পাগু মিয়ার গোয়াল ঘর ভেঙে ফেলে। এছাড়া হাতিটি দিগি¦দিক ছুটোছুটি করায় ফসল ও গাছপালার ক্ষতিসহ লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলে বন্যাদুর্গতদের দুর্ভোগের মধ্যে নতুন করে এলাকায় বন্য হাতি প্রবেশ করায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ আরো বেড়ে গেছে।
সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয় জান-মালের নিরাপত্তা ও আতঙ্কিত লোকজনকে সচেতন করতে ঘটনাস্থলে পুলিশ কাজ করছে। এছাড়াও হাতিটির খাদ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তারা সার্বক্ষনিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোবিন্দ রায় জানান, সরিষাবাড়ী উপজেলা বন কর্মকর্তা খলিলুর রহমান এর নেতৃত্বে স্থানীয় একটি প্রতিনিধি দল হাতিটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন এছাড়াও হাতিটি উদ্ধার করতে ভারতীয় একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন বলেও তিনি জানান।
বন্য প্রানী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক অসিত রঞ্জন পাল জানান, হাতিটি উদ্ধারের জন্য ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের সাথে চুড়ান্ত আলোচনা হয়েছে। আগামী ৩ আগষ্ট ভারতের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে আসবেন। পরদিন ৪ আগষ্ট বাংলাদেশ এবং ভারতের প্রতিনিধি দলের যৌথ সমন্বয়ে হাতিটি উদ্ধার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালানো হবে।