মাননীয় কর্তৃপক্ষ,
আমার হালুম নেবেন। পর সমাচার এই যে আমরা আপাতত ভালোই আছি। সেই কবে তেলের জাহাজ ডোবার পর আপনাকে চিঠি লিখেছিলাম। আপনি জেনে খুশি হবেন, নদীর পানিতে এখনো তেল ভেসে বেড়াচ্ছে। আপনাদের দয়ায় সেই কষ্টের দিন আর নেই! হরিণ-খরগোশ আর কাঁচা খেতে হয় না। আমরা এখন নদীর পানি দিয়েই এসব রান্না করি। বনের তৃণভোজী প্রাণীরাও নাকি ঘাস-লতাপাতা দিয়ে সবজির বড়া বানিয়ে নদীর তেল মানে পানিতে ভেজে দিব্যি আরামে খাচ্ছে।
সেসব কথা থাক, আপনাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাতে চিঠি লিখতে বসেছি। রামপাল চুক্তি সই হওয়ার খবরে আমি, আমাদের বাঘসমাজ এবং বনের পশুপাখি—সবাই বিশেষ আনন্দিত। কত্ত দিন ধরে এই জংলা এলাকায় পড়ে আছি, কোনো উন্নয়ন নেই, অগ্রগতি নেই। এই
প্রথম যেন কেউ এই জঙ্গলবাসীর দিকে মুখ তুলে তাকাল। জঙ্গলে বিদ্যুৎ আসবে, বড় বড় ফ্যাক্টরি হবে, ভাবতেই চোখ চকচক করে ওঠে। পাশের গ্রামে গিয়ে ফোন চার্জ দিতে গেলেই এত দিন বাঘ বাঘ বলে চেঁচিয়ে গ্রামবাসী বড় ত্যক্ত করত। ‘ফোনের চার্জ শেষ, ফোনটা একটু চার্জ দিতে এসেছি।’—এ কথা তারা শুনবেই না, আগেই দৌড়াদৌড়ি, হুড়োহুড়ি।
মাননীয়, শান্তিতে ফেসবুকিং পর্যন্ত করতে পারি না। ভাই-ব্রাদাররা মাঠে ক্রিকেট খেলে একের পর এক ম্যাচ জিতে বাঘসমাজের মুখ উজ্জ্বল করছে, অথচ তাদের একটা খেলা পর্যন্ত বিদ্যুতের অভাবে দেখতে পারলাম না! জঙ্গলে সময় কাটানো বড় কঠিন হয়ে গেছে, বড় একা একা লাগে। আপনি তো জানেন, বাঘের সংখ্যা দিন দিন কমতে কমতে বিলুপ্তির কাছাকাছি চলে গেছে। তা নাহয় হলো, তাতে আর ক্ষতি কী! দেশের আর বনের উন্নতির জন্য এইটুকু ত্যাগ না করলে কি হয়! জঙ্গলে বিদ্যুৎ এলে পশুপাখিদের হাতে থাকবে স্মার্টফোন। ফেসবুকে বিদেশি বাঘদের সঙ্গে আড্ডা মেরে সময়টা বেশ কাটবে।
আশা করি, এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর পুরো জঙ্গল তেল-কয়লার পাশাপাশি বিদ্যুতেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। হে মাননীয়, আপনাদের আবারও অনেক ধন্যবাদ এত দিন বাদে বনের পশুপাখিদের নিয়ে একটু ভাবার জন্য। সুন্দরবন যেন অচিরেই ডিজনির জুটোপিয়ার চেয়েও বড় আর উন্নত শহর হয়, এই কামনায় আজ এখানেই শেষ করলাম। আপনার খবর পত্র মারফত জানাবেন।-প্রথম আলো