২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচার প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে শিগগিরই ই এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ এ গ্রেনেড হামলার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষ যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করেছেন। শেষ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকটাক থাকলে এ মামলার রায়ে বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার পাবেন বলে তারা আশা করছেন।
ঘটনায় নিহতের পরিবার এবং আহতদের দাবী, মামলার প্রধান আসামি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমানে ঘটনায় জড়িত থাকার যে সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে এতে তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি হয়।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে অর্থ পাচার মামলায় তারেক রহমানকে সাত বছর কারাদণ্ড ও ২০ কোটি জরিমানা করেছেন হাইকোর্ট। বিএনপির সিনিয়র এ ভাইস চেয়ারম্যানের সামনে এখন আরেকটি মামলার রায় অপেক্ষা করছে।সংশ্লিষ্টারা মনে করছেন, বিদেশ পলাতক তারেক রাহমানের এ মামলায়ও দণ্ড হতে পারে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারপ্রক্রিয়া প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এ হত্যার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে আছে। আমার বিশ্বাস যে আগামী কিছুদিনের মধ্যে এই মামলায় রায় হবে।ওই মামলায় পলাতক আসামিদের খুঁজে বের করতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে শুধু বলব, আমরা তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
সেদিনের নৃশংস ও বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় শিকার হয়ে দেহের মধ্যে ১ হাজার ৮শ স্প্লিন্টার নিয়ে আজো বেঁচে আছেন সাভারের মাহবুবা পারভীন। তিনি বলেন, মৃত্যুর আগে আমি দেখে যেতে চাই হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। সে অপেক্ষায় রয়েছি।
২১ আগস্ট হামলার পরিকল্পনা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নান নিজেও। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০০৪ সালের ১৪ আগস্ট বৈঠক হয়।তার নির্দেশ মতোই এ ঘটনা ঘটে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মতোই ২০০৪ সালে ২১ আগস্টের হামলার ছক তৈরি করা হয়েছিল। ওই সময়ের কিছু সামরিক কর্মকর্তা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও জঙ্গি নেতাদের সমন্বয়ে হাওয়া ভবনে বসেই বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সবকিছু চূড়ান্ত করেন।
আসামিদের জবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য এবং তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে কারা জড়িত সেটা বেরিয়ে আসে। ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এ হামলার যোগসূত্র রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশে না থাকায় সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনা। কিন্তু থেমে থাকেনি ষড়যন্ত্র। আশির দশকের শুরুতে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে দফায় দফায় বিভিন্নস্থানে হামলা চালানো হয়েছিল। এরমধ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ।
এ হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আহত হয়েছিলেন প্রায় চারশ’ মানুষ। সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে পড়েছেন অনেকেই।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বেঁচে থাকা দুই সদস্য শেখ হাসিনা ও শেখ রেহেনাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করা হয়। তবে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির উত্তরাধিকার হিসেবে প্রথমে শেখ হাসিনাকেই হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়।