ইসলামের উপস্থাপিত পারিবারিক রীতি-নীতি ও নিয়ম-কানুনের দৃষ্টিতে বিয়ের প্রস্তাব বর কনে যে কারো পক্ষ থেকেই প্রস্তাব পেশ করতে কোনো লজ্জা-শরম বা মান-অপমানের কোনো কারণ হতে পারে না। এমন কি ছেলে কিংবা মেয়ের পক্ষও স্বীয় মনোনীত বর বা কনের নিকট সরাসরিভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারে, ইসলামী শরীয়তে এ ব্যাপারে কোনো বাধা তো নেই-ই উপরন্তু হাদীসে এমন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়, যা থেকে এ কাজ যে সঙ্গত তা সুস্পষ্টরূ প্রমাণিত হয়।
নবী করীম (স) জুলাইবাব নামক এক সাহাবীর জন্যে এক আনসারী কন্যার বিয়ের প্রস্তাব কন্যার পিতার নিকট পেশ করেন। কন্যার পিতা তার স্ত্রী অর্থাৎ কন্যার মা’র মতামত জেনে এর জবাব দেবেন বলে ওয়াদা করেন। লোকটি তার স্ত্রীর নিকট এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে এ বিয়েতে স্পষ্ট অমত জানিয়ে দেয়। কন্যাটি আড়াল থেকে পিতামাতার কথোপকথন শুনতে পায়। তার পিতা যখন রাসূলের নিকট এ বিয়েতে মত নেই বলে জানাতে রওয়ানা হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন মেয়েটি পিতামাতাকে লক্ষ্য করে বললঃ
তোমরা কি রাসূলে করীম (স)-এর প্রস্তাবটি প্রত্যাহার করতে চাও? তিনি যদি বরকে তোমাদের জন্য পছন্দ করে থাকেন তবে তোমরা এ বিয়ে সম্পন্ন করো।
এ ঘটনা থেকে জানা গেল যে, মেয়ে নিজে তার বিয়ের প্রস্তাবে সম্পূর্ণ সম্মত ছিল এবং পিতামাতার নিকট তার মতামত যা গোপন ও অজ্ঞাত ছিল, যথাসময়ে সে তা জানিয়ে দিতে এবং নিজের পিতামাতার সামনে প্রস্তাবকে গ্রহণ করার জন্যে স্পষ্ট ভাষায়
অনুমতি দিতে কোনো দ্বিধাবোধ করেনি। আর এতে বস্তুতই কোনো লজ্জা-শরমের অবকাশ নেই।
হযরত উমরের কন্যা হাফসা (রা) বিধবা হলে পরে তাঁর পূনর্বিবাহের জন্যে তিনি [হযরত উমর (রা)] প্রথমে হযরত উসমানের সাথে সাক্ষাত করেন এবং হাফসাকে বিয়ে করার জন্যে তাঁর নিকট সরাসরি প্রস্তাব পেশ করেন। তখন হযরত উসমান (রা) বললেনঃ এ সম্পর্কে আমার মতামত শীগঘীরই জানিয়ে দেবো। কয়েকদিন পর তিনি বললেনঃ আমি বর্তমানে বিয়ে করা সম্পর্কে চিন্তা করছি না। অতঃপর হযরত উমর (রা) হযরত আবূ বকর (রা)-এর নিকট এই প্রস্তাব পেশ করেন। কিন্তু তিনি এ ব্যাপারে মতামত জানানো থেকে বিরত থাকলেন। কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর হযরত নবী করীম (স) নিজেই নিজের জন্যে বিয়ের প্রস্তাব হযরত উমরের নিকট প্রেরণ করেন। (বুখারী, ২য় খণ্ড, ৭৬৮ পৃঃ; মুসনাদে আহমাদ, ১৬ খণ্ড, ১৪৮ পৃঃ)
এ ঘটনা থেকে জানা গেল, মেয়ে পক্ষও প্রথমেই বিয়ের প্রস্তাব পেশ করতে পারে –এতে কোনো দোষ নেই। আর ছেলে পক্ষও –কিংবা ছেলে নিজেও বিয়ের প্রস্তাব প্রথমত কন্যা পক্ষের নিকট পেশ করতে পারে। শরীয়তে এতে কোনো আপত্তি নেই কিংবা কারো পক্ষেই কোনো লজ্জা-শরমেরও কারণ নেই।
হযরত আনাস (রা) বলেনঃ একদা একটি মেয়েলোক –সম্ভবত তার নাম লায়লা বিনতে কয়স ইবনুল খাতীম –রাসূলে করীম (স)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে তাঁর সাথে নিজেকে বিয়ের প্রস্তাব সরাসরিভাবে পেশ করেন। সে বলেঃ হে রাসূল! আপনি আমাকে বিয়ে করার কোনো প্রয়োজন মনে করেন?
হযরত আনাস যখন এ কথাটি বর্ণনা করছিলেন, তখন সেখানে তাঁর কন্যা উপস্থিত ছিলেন। তিনি পিতাকে সম্বোধন করে বললেনঃ “মেয়েলোকটি কতইনা নির্লজ্জ ছিল!”
অর্থঅৎ একটি মেয়েলোক নিজে নিজেকে রাসূলের নিকট বিয়ে দেয়ার জন্যে পেশ করেছে শুনে আনাস-তনায়া উমাইনার বিশেষ বিস্ময় বোধ হয়েছে এবং এ কাজকে তিনি নির্লজ্জতার চরম বলে মনে করেছেন। তখন হযরত আনাস (রা) কন্যাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ সে তোমার তুলনায় অনেক ভালো ছিল। সে রাসূলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এবং সে নিজেই নিজেকে রাসূলের নিকট বিয়ের জন্যে পেশ করেছিল।
হযরত সহল ইবনে সায়াদ সায়েদী বলেনঃ একটি মেয়েলোক রাসূলের নিকট এসে বললঃ আমি আপনার খেদমতে এসেছি এজন্যে যে, আমি নিজেকে আপনার নিকট সোপর্দ করব।
তখন নবী করীম (স) তার প্রতি উদার দৃষ্টিতে তাকালেন, পা থেকে মাথার দিকে দেখলেন। অনেক সময় ধরে তিনি নির্বাক হয়ে থাকলেন –কোন জবাব দিলেন না। তখন উপস্থিত একজন সাহাবী বুঝতে পারলেন যে, নবী করীম (স) স্ত্রীলোকটিকে বিয়ে করতে রাজি নহেন। তাই তিনি দাঁড়িয়ে বললেনঃ হে রাসূল! এ মেয়েলোকটিতে আপনার যদি কোনো প্রয়োজন না থাকে তবে আমাকে অনুমতি দিন তাকে বিয়ে করার। (বুখারী, মুসলিম)
এ থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, কোনো মেয়ে যদি বিশেষ কোনো পুরুষের প্রতি মনের আকর্ষণ বোধ করে তবে সে নিজেই ছেলের নিকট বিয়ের প্রস্তাব পেশ করতে পারে। এতে না আছে কোনো দোষ, না লজ্জা-শরমের কোনো অবকাশ।