প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু শিক্ষা নয়, ধর্মীয় শিক্ষাকেও আমরা বাধ্যতামূলক করেছি। কিন্তু ধর্মান্ধতা যেন না আসে। ইসলাম অত্যন্ত পবিত্র ধর্ম, শান্তির ধর্ম। এই ধর্ম কাউকে খুন করার অধিকার দেয়নি। শিশুরা যেন বিপথে না যায় সে বিষয়ে অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ নজর দিতে হবে। তারা যেন জঙ্গি ও মাদকাশক্ত হয়ে না পড়ে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় আয়োজিত শিশু সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শিশু প্রতিনিধি উপমা বিশ্বাস। বিশিষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শিশু ও মহিলা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, শিশুদের পক্ষ থেকে শিশু ফাইয়াদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ স্বাগত বক্তব্য প্রদান করে।
মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শিশু ও মহিলা বিষয়ক সচিব নাছিমা বেগম এনডিসি, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মনির হোসেন ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেক ধর্মের মর্মবাণী হল শান্তির বানী প্রচার করা। কাজেই যে যে ধর্মই গ্রহণ করুক না কেন, সবাইকে মাথায় রাখতে হবে– যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। ধর্মে সব সময় শান্তি, ভাতৃত্ব, সৌহার্দ্যের কথা বলা হয়েছে। সেটা সকলকে মেনে চলতে হবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শৈশব থেকেই পরোপকারী ছিলেন জানিয়ে সমাবেশে আসা শিশুদের তা অনুসরণ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে বড় হতে হবে। দেশের মানুষকে ভালবাসতে হবে।একদিন তোমরা দেশের কর্ণধার হবে। আমার মত প্রধানমন্ত্রী হতে পার। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে বড় হতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে ধাপে ধাপে এ জাতিকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। এই কাজ করতে গিয়ে জীবনে অনেক বছর তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন, বারবার মৃত্যুর মুখে দাঁড়াতে হয়েছে তাকে। তিনি ছিলেন অদম্য সাহসী, নীতি ও লক্ষ্যে স্থির থেকে এগিয়ে গেছেন।
দাদীর কাছে শোনা বাবার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ছোটবেলা থেকেই মানুষকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন বঙ্গবন্ধু। বালক বয়স থেকেই তিনি মানুষের উপকারে বিভিন্ন কাজ করতেন। নিজের জামা, খাবার ও অন্যান্য ব্যবহার্য জিনিস অভাবী মানুষকে বিলিয়ে দিতেন। দুর্ভিক্ষের সময় বঙ্গবন্ধু তার বাবার গোলা থেকে ধান বিলিয়ে দিয়েছিলেন বলেও জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে স্কুলে যাওয়ার বদলে তাকে দেখতে জেলখানায় যেতে হয়েছে। কলেজে ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ারা সময়ও বাবার সঙ্গে জেলে দেখা করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন, এ দেশের প্রতিটি শিশু শিক্ষিত হবে। আমরা সেই চেষ্টা করছি। প্রত্যেকটা শিশুর মাঝে সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে, তা বিকাশের সুযোগ করে দিচ্ছি।
শিশু সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা, চিত্রাংকন, আবৃত্তি ও ৭ মার্চের ভাষণ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। পরে শিশু ও মহিলা অধিদপ্তরের উদ্যোগে টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার ১০০ দুস্থ মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে আসেন। ১০টার পর রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানান।
পরে সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ বেদী পাশে নিরবে দাঁড়িয়ে থাকার পর পবিত্র ফাতেহা পাঠ করেন। তারা বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করেন।
এর পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বঙ্গবন্ধু সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক পেশাজীবী ও শ্রমজীবি সংগঠনের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।