ঢাকা , রবিবার, ২০ অক্টোবর ২০২৪, ৪ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বসতঘর তালা দিয়ে রাজধানীমুখী হাওরের অনেক মানুষ

‘আশ্বিন মাসে বিয়ে করেছি দাদা, এখনোও এক বছর হয়নি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এবার কোন না কোন ভাবে গৃহস্তিতে সময় দিয়েছি। নিজের এবং অন্যের মিলিয়ে ৩ হাল জমি করছিলাম। সবই পানির নিচে গেছে। একটা গরু ছিল। বিক্রি করে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ঢাকা রওয়ানা দিয়েছি। ওখানে ভাই এবং বোন আগে থেকেই গার্মেন্টসে চাকুরি করে। দেখি তারা যদি কোন চাকুরি’র ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে বাঁচার পথ খুঁজবো। ঘর তালা দিয়ে জেঠাতো (চাচাতো ভাই) ভাইয়ের কাছে চাবি দিয়ে এসেছি।’
শাল্লা উপজেলার হবিবপুর গ্রামের তাপস দাস ও তার স্ত্রী মণিকা দাস’এর ঢাকায় কাজের সন্ধানে যাবার দুঃখের কথা এগুলো।
‘নিজের জমি ৫ হাল, রংজমা ও চুক্তি মিলিয়ে ৮ হাল জমি চাষ করেছিলাম। গত বছর ৮ হাল জমি করে ৮০০ মণ ধান বিক্রি করেছি। এবার ধানের শীষও দেখিনি। ১৬ টি গরু’র ১১ টি গত কয়েকদিনে অর্ধেক দামে বিক্রি করেছি, ৫ টি জামালগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি’র পাশে পাগনার হাওর (এখনো ডুবেনি) পাড়ের কাশিপুরে পাঠিয়েছি। গরু বিক্রি’র কিছু টাকা দিয়ে জাল কিনেছিলাম, কিছু জেলেদের সঙ্গে কথা হয়েছিল, জালের বিনিময়ে তারা মাছের ব্যবসায় শেয়ারে রাখবে আমাকে। এখন হাওরের মাছের মড়ক দেখে জেলেরা কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। গতকাল ঢাকায় এবং সিলেটে পরিচিতজনদের
সঙ্গে কথা বলেছিলাম- গেলে কাজ পাওয়া যাবে কী না, এ নিয়ে। তারা জানালো, এতো বড় সংসার নিয়ে এসে হঠাৎ এখানে এসে কী করবে?’
শাল্লার বাহাড়া ইউনিয়নের নাইন্দা গ্রামের লোকেশ তালুকদারের বেদনার কথা এগুলো।
এমন অবস্থা কেবল শাল্লার লোকেশ কিংবা তাপসের নয়। পুরো জেলার হাওরাঞ্চলে একই চিত্র।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বললেন,‘মানুষের বাঁচার কোন অবলম্বন নেই। আমার উপজেলার বড়দল-রতনশ্রী’র কিছু পরিবার ইতিমধ্যে নিজের বসতঘর তালা দিয়ে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছে। আরও অনেক পরিবার চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা বলেন,‘আমরা চেষ্টা করছি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলরা সকল বিষয় অবগত রয়েছেন। আজ দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী সুনামগঞ্জে এসেছেন, তাঁর কাছে মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই সরকার কৃষক বান্ধব সরকার। কৃষক ও কৃষি বাঁচাতে সবকিছুই করবেন সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ২ দিন হাওরের দুর্দশা দেখে সোমবার রাতে সুনামগঞ্জের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছেন,‘মানুষের পাশে দাঁড়ানো না গেলে, রাজধানী’র দিকে মানুষের ‘লড়’ (লাইন) শুরু হবে। তখন রাজধানীও বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়বে।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বসতঘর তালা দিয়ে রাজধানীমুখী হাওরের অনেক মানুষ

আপডেট টাইম : ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০১৭

‘আশ্বিন মাসে বিয়ে করেছি দাদা, এখনোও এক বছর হয়নি। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই এবার কোন না কোন ভাবে গৃহস্তিতে সময় দিয়েছি। নিজের এবং অন্যের মিলিয়ে ৩ হাল জমি করছিলাম। সবই পানির নিচে গেছে। একটা গরু ছিল। বিক্রি করে স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ঢাকা রওয়ানা দিয়েছি। ওখানে ভাই এবং বোন আগে থেকেই গার্মেন্টসে চাকুরি করে। দেখি তারা যদি কোন চাকুরি’র ব্যবস্থা করে দেয়। তাহলে বাঁচার পথ খুঁজবো। ঘর তালা দিয়ে জেঠাতো (চাচাতো ভাই) ভাইয়ের কাছে চাবি দিয়ে এসেছি।’
শাল্লা উপজেলার হবিবপুর গ্রামের তাপস দাস ও তার স্ত্রী মণিকা দাস’এর ঢাকায় কাজের সন্ধানে যাবার দুঃখের কথা এগুলো।
‘নিজের জমি ৫ হাল, রংজমা ও চুক্তি মিলিয়ে ৮ হাল জমি চাষ করেছিলাম। গত বছর ৮ হাল জমি করে ৮০০ মণ ধান বিক্রি করেছি। এবার ধানের শীষও দেখিনি। ১৬ টি গরু’র ১১ টি গত কয়েকদিনে অর্ধেক দামে বিক্রি করেছি, ৫ টি জামালগঞ্জে শ্বশুরবাড়ি’র পাশে পাগনার হাওর (এখনো ডুবেনি) পাড়ের কাশিপুরে পাঠিয়েছি। গরু বিক্রি’র কিছু টাকা দিয়ে জাল কিনেছিলাম, কিছু জেলেদের সঙ্গে কথা হয়েছিল, জালের বিনিময়ে তারা মাছের ব্যবসায় শেয়ারে রাখবে আমাকে। এখন হাওরের মাছের মড়ক দেখে জেলেরা কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। গতকাল ঢাকায় এবং সিলেটে পরিচিতজনদের
সঙ্গে কথা বলেছিলাম- গেলে কাজ পাওয়া যাবে কী না, এ নিয়ে। তারা জানালো, এতো বড় সংসার নিয়ে এসে হঠাৎ এখানে এসে কী করবে?’
শাল্লার বাহাড়া ইউনিয়নের নাইন্দা গ্রামের লোকেশ তালুকদারের বেদনার কথা এগুলো।
এমন অবস্থা কেবল শাল্লার লোকেশ কিংবা তাপসের নয়। পুরো জেলার হাওরাঞ্চলে একই চিত্র।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বললেন,‘মানুষের বাঁচার কোন অবলম্বন নেই। আমার উপজেলার বড়দল-রতনশ্রী’র কিছু পরিবার ইতিমধ্যে নিজের বসতঘর তালা দিয়ে কাজের সন্ধানে অন্যত্র চলে গেছে। আরও অনেক পরিবার চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
দিরাই-শাল্লার সংসদ সদস্য ড. জয়া সেন গুপ্তা বলেন,‘আমরা চেষ্টা করছি দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলরা সকল বিষয় অবগত রয়েছেন। আজ দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী সুনামগঞ্জে এসেছেন, তাঁর কাছে মানুষের দুর্দশার কথা তুলে ধরা হয়েছে। এই সরকার কৃষক বান্ধব সরকার। কৃষক ও কৃষি বাঁচাতে সবকিছুই করবেন সরকার প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ২ দিন হাওরের দুর্দশা দেখে সোমবার রাতে সুনামগঞ্জের বিশিষ্টজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেছেন,‘মানুষের পাশে দাঁড়ানো না গেলে, রাজধানী’র দিকে মানুষের ‘লড়’ (লাইন) শুরু হবে। তখন রাজধানীও বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়বে।’