এবার রমজানে নতুন অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ১ জুন বৃহস্পতিবার বেলা ১টা ৩০ মিনিটে তিনি জাতীয় সংসদে ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি বাজেট উপস্থাপন করবেন। গত বছর বাজেট ঘোষণা রমজানের আগে হলেও, বাজেট কণ্ঠভোটে পাস হয় রমজান মাসে। এবার বাজেট পাস হবে ২৯ জুন। অর্থাৎ ঈদের পরপরই। এবারের বাজেটের অস্বতিকর বিষয় হচ্ছে, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন। তবে বাজেটের যে শিরোনাম দেয়া হয়েছে তা চমৎকার। আর শিরোনাম হচ্ছে, ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের’।
কিন্তু এরপরও সাধারণ ভোক্তা থেকে শুরু করে আপামর মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমার কাছে এবার সবচেয়ে আলোচিত ও কঠিন বিষয় হচ্ছে নতুন ভ্যাট আইন। এরপরও তিনি জানান, ১৫ শতাংশে ভ্যাটে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কোনো সুযোগ নেই। বরং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তাদের মূল্যায়নে বলেছে, নতুন ভ্যাট আইনে কিছু পণ্যের দাম কমতে পারে। রমজান মাসে বিভিন্ন অজুহাতে কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে কিছূ পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকেন। আর এর ভার সাধারণ মানুষকে বইতে হয়। রমজান মাসে বাজেট ঘোষণা তাই অনেকের কাছে বেশ কিছুটা অস্বস্তিকর আভাস দিচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই ইঙ্গিত মিলছে। সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভটাচার্য বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ১৫ শতাংশে ভ্যাটে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। কিন্তু যদি বাড়ে তাহলে সেটা হবে অস্বস্তিদায়ক। আর ভ্যাট তো ভোক্তারা দেবে। সেই করভার মূলত ভোক্তাদের ওপর আসবে। বলা হচ্ছে, ভ্যাটের আওতামুক্ত পণ্যের তালিকা দীর্ঘ হবে। এরপরও বলতে হয়, রাজস্ব আহরণের যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা আদৌ পূরণ হবে কিনা। গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তার প্রভাব কি পড়বে তা এখনই বিবেচনা করা প্রয়োজন। চালের উৎপাদন মূল্য চাষিরা পাবে কিনা। প্রকল্প বাস্তবায়ন সময় মতো হবে কিনা। এসব প্রশ্নের উত্তর না মিললে তখন দেখা দেবে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ১৫ শতাংশ ভ্যাট তো আগেও ছিল। কিন্তু এবার সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, নতুন ভ্যাট আইনে যে সংস্কারের কথা বলা হয়েছে তা কিভাবে বাস্তবায়ন হবে তার ওপর নির্ভর করছে স্বস্তিকর আর অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। ভ্যাট অবশ্যই অভিন্ন হার হওয়া প্রয়োজন। তবে ১২ শতাংশে ছাড় দেয়ার বিষয়টি সরকার একবার বিবেচনা করতে পারত। ভ্যাটের আওতামুক্ত পরিধি বাড়িয়ে সরকার কতটুকু রাজস্ব পুষিয়ে নিতে পারবে তা এখন দেখার বিষয়। এখানেও সরকারের স্বস্তিকর বিষয়টি জড়িত রয়েছে। আর ভোক্তারা যদি নতুন ভ্যাট আইনে কোনো ধরনের ছাড় না পায় তা হলে তো অস্বস্তিকর পরিস্থিতি উদ্ভব হতেই পারে। সেটা সময় বলে দেবে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না। যদি নাই বাড়ে তা হলে সবার জন্য হবে স্বস্তিকর। আমরা ভেবেছিলাম ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে আসবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী ১৫ শতাংশের ওপর স্থির হলেন। তবে বাজেট ঘোষণা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে পারি। বাজেট কতটুকু স্বস্তিকর আর অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। তিনি মনে করেন, আগামীতে এই হার কমাতে হবে।
এদিকে একাধিক ভোক্তা জানিয়েছেন, নতুন আইনটি কার্যকর হলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। বাজার এর সুযোগ নিতে পারে। তার ওপর রমজান মাসে বাজেট ঘোষণা হচ্ছে। ভ্যাটের অজুহাতে দাম বাড়ানো অযৌক্তিক নয়।
যারা নিয়মিতভাবে ফাস্টফুডের দোকানে যান তাদের জন্য এবারের বাজেট বেশ কিছুটা অস্বস্তিকর বার্তা বয়ে আনতে পারে। কারণ, ফাস্টফুডে বসছে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক। এটি এই প্রথম বসতে যাচ্ছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এমনকি, যারা ফাস্টফুডের দোকান থেকে কিংবা দোকানে বসে পানির বোতল কিনবেন তাদেরও দিতে হবে সম্পূরক শুল্ক। তিন লিটার পর্যন্ত মিনারেল ওয়াটারের বোতলের ৫ শতাংশ আর কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকের ওপর ২৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বসার সম্ভাবনা রয়েছে। যারা শহরে বসে ই-সিগারেটে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন তাদের জন্য এবারের বাজেটে কোনো স্বস্তিকর বার্তা থাকছে না। এখানেও আমদানির ক্ষেত্রে যেমন শুল্ক বসছে, তেমনি বসছে সম্পূরক শুল্ক। অস্বস্তির মধ্যেও স্বস্তিকর বার্তা রয়েছে। আর তা হলো কমবে জমির রেজিস্ট্রেশন ফি।