ঢাকা , শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৫ শতাংশ

আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম ক্রমাগত বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪.৫৮ শতাংশ হারে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে। এর আগের বছরের চেয়ে অর্থাৎ দুই বছর আগে তুলনা করলে সন্দেহজনক লেনদেনের ব্যবধান তিন গুণে পৌঁছেছে। গত সোমবার (১৯-০২-২৪) বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্টিং হয়েছে ১৪ হাজার ১০৬টি। আগের অর্থবছর এ ধরনের রিপোর্ট হয়েছিল আট হাজার ৫৭১টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসটিআর হয় পাঁচ হাজার ২৮০টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিন হাজার ৬৭৫টি এবং এর আগের অর্থবছরে তিন হাজার ৫৭৩টি সন্দেহজনক লেনদেন ছিল।

খাত অনুযায়ী, এসটিআর সবচেয়ে বেশি ব্যাংক খাতে। এই খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ হাজার ৮০৯টি, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল সাত হাজার ৯৯৯টি। নন-ব্যাংকিং খাতে ১২১টি, আগের অর্থবছরে ছিল ১০৬টি। সিএমআই যথাক্রমে পাঁচ ও চারটি।

রেমিট্যান্স হিসাবে ৯০০টি, যা আগের বছরে ৪৫৭টি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফরম, যেমন অনলাইন জুয়া বা বেটিং, ক্রিপ্টো ট্রেডিং ও ডিজিটাল হুন্ডিতে প্রতারণামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে বলে জানায় বিএফআইইউ।বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে বিএফআইইউয়ের প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস সাংবাদিকদের সামনে বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। পরে রিপোর্টের ওপর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। তিনি বলেন, এসটিআর বৃদ্ধি মানেই আর্থিক খাতে যে অপরাধ হয়েছে, তা নাও হতে পারে।

এসব ক্ষেত্রে তথ্য খতিয়ে দেখা হয়। এসটিআরের বিপরীতে প্রমাণ পেলে বিএফআইইউ তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।  তিনি বলেন, বরং রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিএফআইইউয়ের তত্পরতার কারণে এ ধরনের রিপোর্ট বেড়েছে।মাসুদ বিশ্বাস বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের ৮০ শতাংশ হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক যদি এটি বন্ধে সহযোগিতা না করে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ একবার মানি লন্ডারিং হয়ে গেলে তা ফেরত আনা যায় না। তিনি আরো জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও সহযোগিতার জন্য ১০ দেশের সঙ্গে এমওইউ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত বছর দেশের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার এক হাজার ৭১টি তথ্য বিনিময় হয়েছে। এর মধ্যে সিআইডিসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা নিয়েছে ৬৮০টি। বাকি তথ্য নিয়েছে দুদক, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। নগদ লেনদেন রিপোর্টিংও (সিটিআর) অনেক বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সিটিআর হয়েছে ২২ হাজার ৮৫৯টি। আগের অর্থবছর যা ছিল ২১ হাজার ১১৩টি।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিএফআইইউয়ের প্রধান বলেন, বিএফআইইউয়ের তথ্যের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত অর্থপাচারের ৫৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুদক করেছে ৪৭টি মামলা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মধ্যে সিআইডি ১০টি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুটি মামলা করেছে। সব মামলাই চলমান।

বিএফআইইউ নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক এবং সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন ও সাঈদা খানম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৬৫ শতাংশ

আপডেট টাইম : ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
আর্থিক খাতে সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) ও সন্দেহজনক কার্যক্রম ক্রমাগত বাড়ছে। এক বছরের ব্যবধানে ৬৪.৫৮ শতাংশ হারে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে। এর আগের বছরের চেয়ে অর্থাৎ দুই বছর আগে তুলনা করলে সন্দেহজনক লেনদেনের ব্যবধান তিন গুণে পৌঁছেছে। গত সোমবার (১৯-০২-২৪) বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্টিং হয়েছে ১৪ হাজার ১০৬টি। আগের অর্থবছর এ ধরনের রিপোর্ট হয়েছিল আট হাজার ৫৭১টি। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসটিআর হয় পাঁচ হাজার ২৮০টি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিন হাজার ৬৭৫টি এবং এর আগের অর্থবছরে তিন হাজার ৫৭৩টি সন্দেহজনক লেনদেন ছিল।

খাত অনুযায়ী, এসটিআর সবচেয়ে বেশি ব্যাংক খাতে। এই খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২ হাজার ৮০৯টি, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল সাত হাজার ৯৯৯টি। নন-ব্যাংকিং খাতে ১২১টি, আগের অর্থবছরে ছিল ১০৬টি। সিএমআই যথাক্রমে পাঁচ ও চারটি।

রেমিট্যান্স হিসাবে ৯০০টি, যা আগের বছরে ৪৫৭টি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফরম, যেমন অনলাইন জুয়া বা বেটিং, ক্রিপ্টো ট্রেডিং ও ডিজিটাল হুন্ডিতে প্রতারণামূলক কার্যক্রম বৃদ্ধির কারণে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে বলে জানায় বিএফআইইউ।বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে বিএফআইইউয়ের প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাস সাংবাদিকদের সামনে বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন। পরে রিপোর্টের ওপর বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। তিনি বলেন, এসটিআর বৃদ্ধি মানেই আর্থিক খাতে যে অপরাধ হয়েছে, তা নাও হতে পারে।

এসব ক্ষেত্রে তথ্য খতিয়ে দেখা হয়। এসটিআরের বিপরীতে প্রমাণ পেলে বিএফআইইউ তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে।  তিনি বলেন, বরং রিপোর্ট প্রদানকারী সংস্থার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বিএফআইইউয়ের তত্পরতার কারণে এ ধরনের রিপোর্ট বেড়েছে।মাসুদ বিশ্বাস বলেন, মানি লন্ডারিংয়ের ৮০ শতাংশ হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক যদি এটি বন্ধে সহযোগিতা না করে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। কারণ একবার মানি লন্ডারিং হয়ে গেলে তা ফেরত আনা যায় না। তিনি আরো জানান, পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও সহযোগিতার জন্য ১০ দেশের সঙ্গে এমওইউ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত বছর দেশের মধ্যে বিভিন্ন সংস্থার এক হাজার ৭১টি তথ্য বিনিময় হয়েছে। এর মধ্যে সিআইডিসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থা নিয়েছে ৬৮০টি। বাকি তথ্য নিয়েছে দুদক, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা। নগদ লেনদেন রিপোর্টিংও (সিটিআর) অনেক বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সিটিআর হয়েছে ২২ হাজার ৮৫৯টি। আগের অর্থবছর যা ছিল ২১ হাজার ১১৩টি।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিএফআইইউয়ের প্রধান বলেন, বিএফআইইউয়ের তথ্যের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত অর্থপাচারের ৫৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুদক করেছে ৪৭টি মামলা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মধ্যে সিআইডি ১০টি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুটি মামলা করেছে। সব মামলাই চলমান।

বিএফআইইউ নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক এবং সহকারী মুখপাত্র সরোয়ার হোসেন ও সাঈদা খানম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।