বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চার সদস্যের পরিবার রাহেলাদের। নিজে বাসা-বাড়িতে কাজ করেন, মেয়ে গার্মেন্টসে, ছেলে রিকশা চালায়। এবারের বর্ষা তাদের জন্য ‘আকাল’ উল্লেখ করে রাহেলা বলেন, ‘মেয়ের জমজ সন্তানকে সবজি-খিচুড়ি খাওয়াতে হয় একবেলা। আমরা তিনজনে আয়-রোজগার করেও সেটা জোগাড় করতে পারছি না। গত কয়েকদিন শুধু খিচুড়ি খাওয়াচ্ছি। নিজেরা ডাল-ভাত আর যে একপদের সবজি (বাজারের সবচেয়ে কম দামি) খাই, কোলের সন্তানদের সেটা পানি দিয়ে ধুয়ে খাওয়াই। আলাদা করে রান্না করার সুযোগ নাই।’
রাজধানীর এলাকাভিত্তিক বাজারগুলোতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকায়। অধিকাংশ সবজি প্রতি কেজির দাম এখন ৫০ টাকার বেশি। লাল শাক এক আঁটি ৩০টাকা, পুঁইশাক ৩৫ টাকা। কমেনি চালের দামও, মোটা চালের কেজিও এখন কোথাও কোথাও ৫০ টাকা রয়ে গেছে।
শনিবার সকালে শ্যাওড়াপাড়া ও ইব্রাহিমপুর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায় বৃষ্টির মধ্যে বিভিন্ন সবজির কেজি প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা দাম বেড়েছে গত সপ্তাহের তুলনায়। প্রতি কেজি করলা ৭০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৭০ টাকা।
অবসরে থাকা সরকারি কর্মকর্তা শফিকুর রহমান শ্যাওড়াপাড়া কাঁচাবাজারেই বাজার করেন। তিনি বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে বাজার চড়ে গেছে। নিচু জমির সবজি বর্ষাকালে এমনিতেই দাম বাড়ে, ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। তাই বলে আলু-পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়াটা অস্বস্তিকর।’
তিনি আরও বলেন, ‘করলা জাতীয় সবজি এখন বারোমাসই হয় এবং উঁচু জমিতে হয়। বৃষ্টিতে যাতায়াত বিঘ্নিত হওয়ায় আমরা সাধাররণ মানুষ হয়রানিতে পড়ছি এবং এই বাজার নিয়ে প্রশাসনের কারও কোনও মাথাব্যথা নেই।’
এদিকে মিরপুর-১০ এর পাইকারি দোকানদার বেলায়েত হোসেন বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে মিনিকেটের ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা, বিআর ২৮ এর বস্তা ২৩শ করে বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা, মিনিকেট কেজি প্রতি মিনিকেট বাজার ভেদ মান ভেদে ৫৬ থেকে ৬০, নাজিরশাইল মানভেদে ৫৮ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’
ইব্রাহিমপুর কাঁচাবাজারে নিয়মিত বাজার করে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত রাসেল মাহমুদ। শনিবার সকালে বাজারে এসে তিনি সবজির দাম শুনে হতবাক। গত সপ্তাহের তুলনায় সবজির দাম এত বেড়ে গেছে কিন্তু কারও কোনও মনিটরিং নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ আয় করে ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রোটিন দূরে থাক, সবজিই তো নাগালের বাইরে।’
এখানকার দোকানি রহমান মনে করেন, পেঁয়াজের বাজারে বড় ধরনের কারসাজি চলছে। তারা চড়া দামে কেনেন বলে চড়া দামে বিক্রি করেন। কিন্তু দামটা কেন বাড়ছে সে বিষয়ে পাইকারি দোকানদাররা তাদের কোনও সদুত্তর দিতে পারে না।