বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ চলতি বছর দেশে কোরবানির উপযোগী পশুর সংকট নেই। চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট পরিমাণে গরু, ছাগল ও মহিষ রয়েছে। যা দিয়ে কোরবানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তবে বন্যার কারণে গরু নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন খামারিরা। সেইসঙ্গে ভারতীয় গরুর আমদানি বাড়ায় ন্যায্যদাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত তারা।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসেবে, বর্তমানে দেশে কোরবানিযোগ্য পশু আছে এক কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার। গত বছর কোরবানি উপলক্ষে সারা দেশে এক কোটি পাঁচ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়। এরআগে ২০১৫ সালে কোরবানি উপলক্ষে বিক্রি হয় ৯৬ লাখ ৩৫ হাজার গবাদিপশু। সে হিসেবে এবার চাহিদার তুলনায় গবাদিপশু বেশি রয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার চাহিদা বাড়লেও পশুর সংকট হওয়ার কারণ নেই।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আইনুল হক বলেছেন, দেশে যে পরিমাণ গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া আছে তা কোরবানির চাহিদা মেটাতে যথেষ্ট। তিনি বলেন, সারা বছর প্রায় দুই কোটি ৩১ লাখ ১৩ হাজার গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই হয়। এর প্রায় ৫০ ভাগ জবাই হয় কোরবানির ঈদের সময়। সে হিসাবে, কোরবানির সময় এক কোটি ১৫ লাখের মতো গবাদিপশু দরকার হবে। বর্তমানে দেশে কোরবানি উপযোগী গবাদিপশুর মধ্যে গরু ও মহিষ রয়েছে ৪৪ লাখ ৫৭ হাজার এবং ছাগল-ভেড়া আছে ৭১ লাখ। তিনি বলেন, কোরবানির জন্য স্বাস্থ্যসম্মতভাবে এসব পশুকে উপযুক্ত করে তোলা হচ্ছে। এজন্য সার্বক্ষণিক খামারিদের পর্যবেক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কোরবানির অযোগ্য অসুস্থ ও ত্রুটিযুক্ত গবাদিপশু যেন হাটবাজারে বিক্রি না হয়, সে বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।
বন্যার কারণে কোরবানির পশু নিয়ে উদ্বিগ্ন খামারিরা
উত্তরাঞ্চলসহ দেশের অনেক জায়গায় বন্যার কারণে কোরবানির পশু নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন খামারিরা। আর মাত্র কয়েকদিন পর যখন পুরোদমে কোরবানির পশু কেনাবেচা শুরু হবে তখন বন্যায় অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন খামারিসহ সাধারণ প্রান্তিক কৃষক। যারা বছরে কষ্ট করে দু’একটি পশু পালন করেন কোরবানির সময় বিক্রির জন্য। যাতে পয়সা একটু বেশি পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খামারিদের পাশাপাশি পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অনেকেই গরু লালনপালন করেন। তারা একটু বেশি দামের আশায় দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করেন।
এ প্রসঙ্গে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোহাম্মদ ছায়েদুল হক বলেছেন, বন্যার কারণে কিছু খামারি তাদের গরু নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। কিন্তু খামারিদের পাশে দাঁড়াতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোনো খামারে বন্যার পানি উঠলে সেখান থেকে পশুগুলোকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া বন্যার কারণে পশুগুলোর কোনো রোগ-বালাই যেন না হয় সেজন্য জেলা-উপজেলায় চিকিত্সকদের সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে।
ভারতীয় গরুর আমদানি বাড়ায় শঙ্কিত খামারিরা
এদিকে কোরবানি উপলক্ষে ভারতীয় গরুর আমদানি বাড়ায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশের খামারিরা। সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা ও কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন সীমান্ত পথে প্রচুর ভারতীয় গরু আসছে। রাজশাহীর পবা, মতিহার, গোদাগাড়ী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের অহেদপুর ও রঘুনাথপুর সীমান্তে সরকার অনুমোদিত বিট/খাটাল দিয়ে ভারত থেকে প্রতিদিন গরু আসছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে, গরু আমদানি তত বাড়বে বলে।
শুল্ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কোরবানির ঈদের আগে জুলাই ও আগস্ট মাসে একমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত পথে ১২ হাজার ৭৯৮টি গরু এসেছিল। অথচ এবছর শুধু জুলাই মাসেই গরু এসেছে ৬৮ হাজার ৫০১টি। যা গতবছরের চেয়ে ৪/৫ গুণ বেশি। চলতি বছর গত জুলাই পর্যন্ত চার লাখ ১৭ হাজার গরু এসেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকে গরু আসা কমেছে। এ অবস্থায় কোরবানির সময় পশুর চাহিদা মেটাতে দেশেই খামারিরা ব্যাপকভাবে পশু পালন শুরু করে। বর্তমানে দেশে ৫ লাখের মতো খামার গড়ে উঠেছে। এখন হঠাত্ করে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় গরু আসলে লোকসান গুণতে হবে খামারিদের। অধিকাংশ খামারি ঋণ করে কোরবানির পশু লালনপালন করেছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ইমরান হোসেন বলেন, দেশে চাহিদার তুলনায় বেশি পরিমাণে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। তাই ভারত থেকে গরু আসলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা পশু পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। তিনি বলেন, এবার চাহিদার চেয়ে বেশি গবাদিপশু দেশেই রয়েছে। তাই ভারতীয় গরু আমদানির প্রয়োজন নেই।
কোরবানির হাটে কাজ করবে মেডিক্যাল টিম
কোরবানির জন্য ক্রেতার কাছে সুস্থ-সবল গবাদিপশু সরবরাহ নিশ্চিত করতে এবং অবৈধ মোটাতাজাকরণ প্রতিরোধে সারাদেশে কোরবানির হাটে ভেটেরিনারি মেডিক্যাল সাপোর্ট টিম কাজ করবে। রাজধানীতে ২৪টি কোরবানির হাট ছাড়াও সারাদেশের হাটগুলোতে মেডিক্যাল টিম কাজ করবে।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালের চিফ ভেটেরিনারি অফিসার ডা. মো. আব্দুল হালিম বলেন, সুস্থ-সবল গবাদিপশু সরবরাহ নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি হাটে একটি মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। প্রতিটি টিমে ৪ জন সদস্য থাকবে। সেইসাথে এসব মেডিক্যাল টিমের কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে ৪টি এবং মন্ত্রণালয় হতে ৩টি টিম কাজ করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে গরু মোটাতাজাকরণের ফলে গরুর কিডনি, ফুসফুস ও কলিজা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে শরীরে পানি জমে। এ ধরনের গরুর মাংস খেলে মানুষের শরীরে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ হতে পারে। এজন্য কোরবানির গরু কেনার সময় ক্রেতাকে সচেতন হতে হবে। প্রয়োজনে গরু কেনার সময় সন্দেহ হলে ক্রেতা মেডিক্যাল টিমের সাহায্য নিতে পারেন।