ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ধনিয়া চাষের অপার সম্ভাবনা

ধনিয়া চাষের অপার সম্ভাবনাকম সময়ের মধ্যে মসলা ফসল উৎপাদনে ধনিয়া উল্লেখযোগ্য। ধনিয়া রবি ফসল হলেও এখন প্রায় সারা বছরই এর চাষ করা যায়। ধনিয়ার কচিপাতা সালাদ ও তরকারিতে সুগন্ধি মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ধনিয়ার পুষ্ট বীজ বেঁটে বা গুঁড়া করে তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে মিরসরাই-সীতাকুণ্ড অংশে রয়েছে বিশাল আকারের একাধিক পাহাড়। এই পাহাড়গুলোয় জনবসতি গড়ে ওঠার ফলে একাধিক পাহাড়ই এখন ঢালু আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়াও পাহাড় সংলগ্ন থাকা এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর উঁচু জমি সারা বছরই ধনিয়া চাষের সবচেয়ে উপযোগী। কৃষকদের শুধু উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগ নিলেই পাহাড়ের পাদদেশের সব অনাবাদি জমি অর্থকরী এই ধনিয়া চাষের আওতায় আনা সম্ভব।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শীত মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১৫০ হেক্টর জমিতে ধনিয়া চাষ হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে সারা বছরই বিভিন্ন জাতের ধনিয়া চাষের জন্য মিরসরাই-সীতাকুণ্ড উপজেলার পাহাড়ের পাদদেশসহ বিভিন্ন উঁচু জমি প্রযোজ্য। দ্রুত পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে শেডের ভেতর চারা করেই ধনিয়া চাষের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এতে স্থানীয় কৃষাণ কৃষাণীদের উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগ নিলে পাহাড় ঘেঁষা এলাকায় আরো ১০০ হেক্টর জমিতে ধনিয়া আবাদের আওতায় আনা সম্ভব।
মিরসরাই উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি এবার ধনিয়া চাষ করে পাতা হিসেবেই বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আবার সেই জমিতে তিতা করলা ও চিচিংগা চাষ করছি। কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় আমি ধনিয়া চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। একই জমিতে বার বার ধনিয়া চাষ করা যায়। তাই আগামী বছরও আমি কিছু জমিতে শুধু ধনিয়াই চাষ করব। তিনি জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ধনিয়া চাষে সাধারণ কৃষকরা আরো আগ্রহী হবেন।
ধনিয়া ফসলের গুণাগুণ: ধনিয়া একটি পুষ্টিকর মসলা। প্রতি ১০০ গ্রাম ধনিয়া পাতায় ৩৩ গ্রাম আমিষ, ৪১ গ্রাম শর্করাসহ ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) ৬ হাজার ৭২ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লাভিন ১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি ১৩৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ২০১ মিলিগ্রাম ও ক্যালসিয়াম ২৯০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।
ধনিয়ার জাত ও পাতা উৎপাদন: সব ধরনের জমিতে ধনিয়া জন্মালেও দোআঁশ এবং বেলে দোআঁশ মাটিতে ফলন ভালো হয়। তবে ধনিয়ার জমিতে কোনো অবস্থায়ই পানি জমতে দেয়া যাবে না। ভালো নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখা ধনিয়া চাষের পূর্বশর্ত। ধনিয়ার পাতা উৎপাদনকারী জাতের মধ্যে বারি ধনিয়া-১ বেশ ভালো ফলন দেয়। এ ছাড়াও রয়েছে লালতীরের সুগন্ধা, এলবি-৬০ ও এলবি-৬৫। লালতীরের ধনিয়ার জাতগুলো সারা বছরই চাষ করা যায়। এই জাতগুলোর রং উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের সুগন্ধযুক্ত ও দেরিতে ফুল উৎপাদনকারী অর্থাৎ অনেকদিন ধরে পাতা উৎপাদন করে। যেখানে বন্যার পানি ওঠে সেখান থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধনিয়ার বীজ ছিটিয়ে বোনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জমি চাষের প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে মাটির রস কমে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আগাম চাষে দাম যেমন বেশি পাওয়া যায়, তেমনি বাজারে এর সরবরাহ বাড়িয়ে মানুষের জন্য পুষ্টিকর সালাদ এবং মসলার চাহিদাও পূরণ করা যায়।
বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর পাতা সংগ্রহ শুরু করা যায়। পরবর্তী সময়ে মাসখানেক ধরে এ সংগ্রহ চালিয়ে যাওয়া যায়। এতে ১ শতক জমিতে ১৫ থেকে ২০ কেজি পাতা পাওয়া যায়। আবার বীজ সংগ্রহের জন্য গাছ রেখে দিলে এবং বীজ যখন সম্পূর্ণভাবে পাকে কিন্তু গাছ প্রায় সবুজ থাকে তখন বীজ সংগ্রহ করলে ৮ থেকে ১০ কেজি বীজ পাওয়া যায়। প্রতি শতকে ধনিয়া চাষে খরচ প্রায় ২০০ টাকা। আগাম চাষ করলে প্রতি কেজি পাতার দাম ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা হিসেবে প্রতি শতকে প্রায় ২০০০ টাকা পাওয়া যায়। বিঘাপ্রতি চাষে অবশ্য এ খরচ কমে আসে যা প্রায় ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকার মতো এবং ৫৫০ থেকে ৬০০ কেজি পাতায় গড়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা আয় করা যায়। অর্থাৎ ধনিয়া চাষ করে প্রতি বিঘা থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ধনিয়া চাষের অপার সম্ভাবনা

আপডেট টাইম : ০৬:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৬
ধনিয়া চাষের অপার সম্ভাবনাকম সময়ের মধ্যে মসলা ফসল উৎপাদনে ধনিয়া উল্লেখযোগ্য। ধনিয়া রবি ফসল হলেও এখন প্রায় সারা বছরই এর চাষ করা যায়। ধনিয়ার কচিপাতা সালাদ ও তরকারিতে সুগন্ধি মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ধনিয়ার পুষ্ট বীজ বেঁটে বা গুঁড়া করে তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পাশে মিরসরাই-সীতাকুণ্ড অংশে রয়েছে বিশাল আকারের একাধিক পাহাড়। এই পাহাড়গুলোয় জনবসতি গড়ে ওঠার ফলে একাধিক পাহাড়ই এখন ঢালু আকার ধারণ করেছে। এ ছাড়াও পাহাড় সংলগ্ন থাকা এলাকার কয়েক হাজার হেক্টর উঁচু জমি সারা বছরই ধনিয়া চাষের সবচেয়ে উপযোগী। কৃষকদের শুধু উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগ নিলেই পাহাড়ের পাদদেশের সব অনাবাদি জমি অর্থকরী এই ধনিয়া চাষের আওতায় আনা সম্ভব।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে শীত মৌসুমে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ১৫০ হেক্টর জমিতে ধনিয়া চাষ হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে সারা বছরই বিভিন্ন জাতের ধনিয়া চাষের জন্য মিরসরাই-সীতাকুণ্ড উপজেলার পাহাড়ের পাদদেশসহ বিভিন্ন উঁচু জমি প্রযোজ্য। দ্রুত পানি সরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে শেডের ভেতর চারা করেই ধনিয়া চাষের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এতে স্থানীয় কৃষাণ কৃষাণীদের উদ্বুদ্ধকরণের উদ্যোগ নিলে পাহাড় ঘেঁষা এলাকায় আরো ১০০ হেক্টর জমিতে ধনিয়া আবাদের আওতায় আনা সম্ভব।
মিরসরাই উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি এবার ধনিয়া চাষ করে পাতা হিসেবেই বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আবার সেই জমিতে তিতা করলা ও চিচিংগা চাষ করছি। কম সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় আমি ধনিয়া চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি। একই জমিতে বার বার ধনিয়া চাষ করা যায়। তাই আগামী বছরও আমি কিছু জমিতে শুধু ধনিয়াই চাষ করব। তিনি জানান, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ধনিয়া চাষে সাধারণ কৃষকরা আরো আগ্রহী হবেন।
ধনিয়া ফসলের গুণাগুণ: ধনিয়া একটি পুষ্টিকর মসলা। প্রতি ১০০ গ্রাম ধনিয়া পাতায় ৩৩ গ্রাম আমিষ, ৪১ গ্রাম শর্করাসহ ক্যারোটিন (ভিটামিন এ) ৬ হাজার ৭২ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি২ বা রিবোফ্লাভিন ১৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি ১৩৫ মিলিগ্রাম, আয়রন ২০১ মিলিগ্রাম ও ক্যালসিয়াম ২৯০ মিলিগ্রাম পাওয়া যায়।
ধনিয়ার জাত ও পাতা উৎপাদন: সব ধরনের জমিতে ধনিয়া জন্মালেও দোআঁশ এবং বেলে দোআঁশ মাটিতে ফলন ভালো হয়। তবে ধনিয়ার জমিতে কোনো অবস্থায়ই পানি জমতে দেয়া যাবে না। ভালো নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখা ধনিয়া চাষের পূর্বশর্ত। ধনিয়ার পাতা উৎপাদনকারী জাতের মধ্যে বারি ধনিয়া-১ বেশ ভালো ফলন দেয়। এ ছাড়াও রয়েছে লালতীরের সুগন্ধা, এলবি-৬০ ও এলবি-৬৫। লালতীরের ধনিয়ার জাতগুলো সারা বছরই চাষ করা যায়। এই জাতগুলোর রং উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের সুগন্ধযুক্ত ও দেরিতে ফুল উৎপাদনকারী অর্থাৎ অনেকদিন ধরে পাতা উৎপাদন করে। যেখানে বন্যার পানি ওঠে সেখান থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধনিয়ার বীজ ছিটিয়ে বোনা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জমি চাষের প্রয়োজন নাও হতে পারে। তবে মাটির রস কমে আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আগাম চাষে দাম যেমন বেশি পাওয়া যায়, তেমনি বাজারে এর সরবরাহ বাড়িয়ে মানুষের জন্য পুষ্টিকর সালাদ এবং মসলার চাহিদাও পূরণ করা যায়।
বীজ বপনের ৩০ থেকে ৩৫ দিন পর পাতা সংগ্রহ শুরু করা যায়। পরবর্তী সময়ে মাসখানেক ধরে এ সংগ্রহ চালিয়ে যাওয়া যায়। এতে ১ শতক জমিতে ১৫ থেকে ২০ কেজি পাতা পাওয়া যায়। আবার বীজ সংগ্রহের জন্য গাছ রেখে দিলে এবং বীজ যখন সম্পূর্ণভাবে পাকে কিন্তু গাছ প্রায় সবুজ থাকে তখন বীজ সংগ্রহ করলে ৮ থেকে ১০ কেজি বীজ পাওয়া যায়। প্রতি শতকে ধনিয়া চাষে খরচ প্রায় ২০০ টাকা। আগাম চাষ করলে প্রতি কেজি পাতার দাম ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকা হিসেবে প্রতি শতকে প্রায় ২০০০ টাকা পাওয়া যায়। বিঘাপ্রতি চাষে অবশ্য এ খরচ কমে আসে যা প্রায় ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকার মতো এবং ৫৫০ থেকে ৬০০ কেজি পাতায় গড়ে প্রায় ১৫ হাজার টাকা আয় করা যায়। অর্থাৎ ধনিয়া চাষ করে প্রতি বিঘা থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব।