ভারত সরকার রপ্তানিমূল্য বাড়িয়ে দেয়ার পরই দেশের বাজারেও পিয়াজের দাম বেড়ে যায়। পরে নানামুখী উদ্যোগ নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই নিত্যপণ্যের দাম কমে যাবে বলে বাণিজ্য সচিব আশ্বাস দিলেও ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। খুচরা বাজারে এখনও ৬৫ থেকে ৮০ টাকার মধ্যে রয়েছে পিয়াজের দাম। এদিকে, হঠাৎ করে বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। আর বাজারে বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার উপরে।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা। যে পিয়াজের দাম গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। আর আমদানিকৃত পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। কাওরান বাজারে প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। আর আমদানিকৃত ভারতীয় পিয়াজ প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা। পিয়াজ আমদানিকারক আব্দুস সালাম বলেন, সমপ্রতি অতিবৃষ্টি ও বন্যায় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে পিয়াজের ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে এর উৎপাদন কমে গেছে এবং এ কারণে ওই দেশের বাজারেই পিয়াজের সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়ছে দামে। ফলে দেশে পিয়াজ আমদানিও কমে গেছে।
হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া পিয়াজের দামে লাগাম টানতে গত রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির ট্রাক সেল শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। এ ছাড়া বন্দরে পিয়াজ দ্রুত খালাস ও পরিবহনের প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়। এসব পদক্ষেপের সুফল বাজারে পড়েনি।
এদিকে, খোলাবাজারে পিয়াজ বিক্রির পাশাপাশি মঙ্গলবার পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে করণীয় ঠিক করতে সরকারি বিভিন্ন দফতর, পিয়াজের আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকের পর নতুন বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান আল বিরুনি ঘোষণা দেন, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিয়াজের দাম কমবে। সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা আসা এবং খোলাবাজারে পিয়াজ বিক্রি করা হলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে কমেনি পিয়াজের দাম।
হিলি স্থলবন্দরের পিয়াজ আমদানিকারক সাইফুল ইসলাম জানান, দেশের বাজারে পিয়াজের সরবরাহ কমেছে, যার প্রভাব পড়ছে দামে। আগে যেখানে ভারতের মোকামগুলো থেকে প্রতি কেজি পিয়াজ ৯-১০ রুপি দরে কিনতেন, এখন তা ২১-২২ রুপিতে কিনতে হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রতি কেজিতে পরিবহন খরচ যোগ হচ্ছে ৫-৬ রুপি করে।
এদিকে, বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি। আর লাল লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২০০ টাকা। গরুর মাংস বাজার ভেদে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮৫০ টাকা কেজি।
এদিকে, ডিমের দাম কিছুটা কম থাকলেও আবারও বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে ডিমের ডজন ১০০ থেকে ১০৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে তা বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকা। আর প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা।
কাওরান বাজারে আশা এনজিও কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, বাজারে শাকসবজির দাম আগে থেকেই চড়া। এখন দেখি ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০ টাকা। আর পিয়াজ কেনা তো দায় হয়ে গেছে। বর্তমান বাজারে আমাদের মত মধ্যবিত্তদের চলা আসলেই খুব কঠিন।
এদিকে, কাঁচাবাজারে আগের মতোই পাকা টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি। আর শিম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। তারপরেই দামের সাথে পাল্লা দিয়ে গাজর, বরবটি ও উস্তে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আর প্রতি কেজি করলা বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি। বেগুন, বরবটি ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে, প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। আর গত সপ্তাহের মতই ঢেঁড়স, শসা, ঝিঙ্গে, ধুন্দুল, কচুর লতি ও কচুর মুখি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। আর পটল ও কাকরোল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। বাজারে কম দামের তালিকায় রয়েছে মিষ্টি কুমড়া আর পেঁপে। প্রতি কেজি মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি। তবে কিছুটা দাম কমে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি।
বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহ বেশি হলেও বড় সাইজের ইলিশের দাম হাজার টাকার নিচে নামছে না। বড় সাইজের ইলিশ কিনতে গেলেই গুনতে হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। আর একটু ছোট সাইজের গুলো বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আর কেজিতে তিনটে হয় সেই ইলিশ গুলো বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। তবে কম নেই অন্যান্য মাছেও। বাজারে রুই, মৃগেল, কাতল ও সিলভার কার্প মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি। আর কই, পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।