বাঙালী কন্ঠ ডেস্কঃ পাঁচটি ব্যাংকের কাছে নতুন করে ঋণ চেয়েছে বিতর্কিত বিসমিল্লাহ গ্রুপ। এ ঋণ নিয়ে ব্যবসা করে অর্জিত মুনাফা থেকে ব্যাংকের দেনা পরিশোধ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এ গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের ঋণ জালিয়াতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও একটি ব্যাংকের দায়েরকৃত মামলা বিচারাধীন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা সোলায়মান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নতুন ঋণ চেয়ে প্রস্তাব দেয়া হয়।
যেসব ব্যাংকের কাছে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেগুলো হল- সরকারি খাতের জনতা, বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক।
প্রস্তাবে ব্যাংকগুলোর কাছে বিসমিল্লাহ গ্রুপের মূল ঋণের বকেয়া কত, সুদসহ এখন কত হয়েছে, গ্রুপের বিরুদ্ধে করা মামলা কিভাবে নিষ্পত্তি করা যায়- এসব তথ্য জানতে চেয়েছে।
একই সঙ্গে ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলার ‘ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিটসংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালার’ আওতায় ঋণ নবায়নের বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোর কাছে।
বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্যাডে এর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ঢাকা অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে এসব চিঠি পাঠানো হয়। ওই ঠিকানায় ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে রেজিস্ট্রি ডাকে পৃথকভাবে চিঠির জবাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ব্যাংকের চিঠি কেউ গ্রহণ করেননি।
ফলে ওই চিঠি ব্যাংগুলোর কাছে ফেরত এসেছে। ব্যাংকের দেয়া চিঠিতে গ্রুপের ঋণের স্থিতি উল্লেখ করা হয়েছে।
পাশাপাশি ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট বাবদ অর্থ পরিশোধ করে ঋণ নবায়নের জন্য ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে বলা হয়। ওই আবেদন পেলে ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
২০১২ ও ২০১৩ সালে বিসমিল্লাহ গ্রুপ ৫টি ব্যাংক থেকে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে। পরে ভুয়া এলসির মাধ্যমে পুরো অর্থই বিদেশে পাচার করে।
যেসব ব্যাংক থেকে গ্রুপটি ঋণ নিয়েছে সেগুলো হচ্ছে- জনতা ব্যাংক থেকে ৫২৭ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ৩২৭ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৬১ কোটি, যমুনা ব্যাংক ১৫৪ কোটি এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক থেকে ১১০ কোটি টাকা।
এসব ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি-চেয়ারম্যানসহ গ্রুপের অন্যান্য কর্মকর্তা ও গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে।
জানা গেছে, বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি খাজা সোলায়মান ও চেয়ারম্যান নওরিন হাবিবসহ গ্রুপের কিছু কর্মকর্তা দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। এর মধ্যে এমডি ও চেয়ারম্যান এখন দুবাইয়ে আছেন। ওখানে তারা একটি অভিজাত হোটেলের ব্যবসা করছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে। এখন আদালতই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
সূত্র জানায়, বিসমিল্লাহ গ্রুপ ছাড়াও ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আলোচ্য সার্কুলারের আওতায় অনেক ঋণ খেলাপি নবায়নের আবেদন করছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- হলমার্ক, ক্রিসেন্ট, মুন্নু, সোনালী ও প্যারাগন গ্রুপ।
ওই সার্কুলারের আওতায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে খেলাপি ঋণ নবায়ন করা যাবে। ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। নবায়নের পর নতুন ঋণও দিতে পারবে ব্যাংকগুলো। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ দেয়া হবে।
জানা গেছে, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত জামানত নেই। আর গ্রাহক পালিয়ে যাওয়ার পর ব্যাংক কোনো ঋণই আদায় করতে পারেনি।
এ বিষয়ে শাহজালাল ব্যাংকের বিনিয়োগ ও আইন বিভাগের কর্মকর্তা পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, গ্রাহক ব্যাংকারদের বিভ্রান্ত করে ঋণ নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় যেসব ব্যাংক কর্মকর্তা জড়িত তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্যাংকের পক্ষ থেকেও মামলা করা হয়েছে।