ঢাকা , শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অবশেষে ভারত থেকে এল ২৫৭ ট্রাক পেঁয়াজ

অবশেষে ছুটির দিন শুক্রবার বিশেষ ব্যবস্থায় হিলি ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ঢুকেছে ২৫৭ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমার থেকে ২০ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। এছাড়া মিসরের পেঁয়াজের চালানও ঢাকায় পৌঁছেছে।

ট্রাক ঢোকার পর হিলি স্থলবন্দরে এদিন ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিদরে। চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকার পাইকারি বাজারেও। এদিন ঢাকার শ্যামবাজারে (পাইকারি) ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা কেজিদরে। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকা কেজিতে। দেশি পেঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকা।

তবে খুচরা বাজারের চিত্র খুব একটা বদলায়নি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে (খুচরা) শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ বৃহস্পতিবারের মতোই বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকায় (ভালোটা ১২০ টাকা), ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকায়, মিসরের পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকায়। রাজধানীর অন্যান্য বাজার এবং চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বাজারের চিত্রও প্রায় একই ছিল।

ঢুকল ভারতীয় পেঁয়াজবাহী ট্রাক : দিনাজপুর ও শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হিলি স্থলবন্দরের ওপারে টানা ৫ দিন আটকে থাকার পর শুক্রবার দেশে ঢোকে পেঁয়াজবাহী ৫৭টি ট্রাক। এসব ট্রাকে ভারত থেকে ৯৪৬ টন পেঁয়াজ এলেও বন্দরে আটকে থাকায় বেশিরভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন হিলি বন্দরের আমদানিকারকরা।

অন্যদিকে ভারতের মহদিপুরে ৭ দিন আটকে থাকার পর এদিন পেঁয়াজবাহী ২০০টি ট্রাক সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে। দুই স্থলবন্দর দিয়ে দেশে পেঁয়াজ আসায় কমেছে দাম। শুক্রবার হিলিবন্দরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫২ টাকায়।

হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে প্রায় ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলেন হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা। কিন্তু রোববার বিকালে হঠাৎ করে এক নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ রফতানিকারকদের বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি না করতে আদেশ জারি করে ভারত সরকার। হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি আমদানিকারকদের এলসি করা পেঁয়াজবাহী ৭০টি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের মুখে ভারতের হিলি স্থলবন্দরে আটকা পড়ে। অবশেষে ছুটির দিন দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলো বন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, এদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আটকে পড়া ৭০টি ট্রাকের মধ্যে ৫৭টি ট্রাকে ৯৪৬ টন পেঁয়াজ হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছে।

আমদানিকারক বাবলুর রহমান বলেন, ৫ দিন আটকে থাকায় গরমে বেশিরভাগ পোঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। গাড়ি বেয়ে পেঁয়াজ পচা পানি ঝরছে। গুদামে নিয়ে বাছাই করে তারপর এসব পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের দায়িতরত্ব কাস্টমস পরিদর্শক বুলবুল জানিয়েছেন, ভারতের মহদিপুর স্থলবন্দরে ৭ দিন আটকে থাকা পেঁয়াজ ভর্তি ২০০ ট্রাক শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করে।

চট্টগ্রাম নগরীতে ৯০, উপজেলায় এখনও ১০০ টাকার বেশি : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও খুচরায় দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। নগরীতে খুচরা বাজারে ভারতীয় বা মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও উপজেলা পর্যায় ও প্রত্যন্ত এলাকায় পেঁয়াজ এখনও ১০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু হাটহাজারী উপজেলা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিনের তৎপরতার কারণে সেখানে আড়তদাররা অতিরিক্ত দাম নেয়ার সাহস পাচ্ছেন না বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজিতে জড়িত কয়েকজন পাইকার ও আড়তদার গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আর খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস জানিয়েছেন, ভারত থেকে কয়েকশ’ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসছে।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার নেপথ্যে রয়েছেন আমদানিকারকরা। আমদানিকারকরা জোর করে কমিশন এজেন্ট বা আড়তদারদের বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য করছেন। ফলে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রশাসন আড়তদারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও আমদানিকারকরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমদানিকারকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ৭০-৭৫ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকায়। তবে মানভেদে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা কমবেশি রয়েছে কোথাও কোথাও। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন বলতে গেলে দেশি পেঁয়াজ দেখা যায়নি।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের এক আড়তের বিক্রেতা জয়নাল আবেদীন যুগান্তরকে বলেন, ‘২৯ সেপ্টেম্বরের পর অতিরিক্ত দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। ফলে এখনও অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা লোকসান দিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারি না।’

উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বৃহস্পতিবার লোহাগাড়া উপজেলা সদরের বটতলী মোটর স্টেশন, পদুয়া বাজার, চুনতি বাজার ও আধুনগর বাজারে অভিযান চালিয়ে সাত মুদি দোকানকে জরিমানা করা হয়। এরপরও শুক্রবার লোহাগাড়ার বিভিন্ন এলাকায় ১০০ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ (ভারতীয় বা মিয়ানমারের) বিক্রি হয়েছে। খুচরা বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে জানান, আমরা এখনও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি করছি। কারণ এসব পেঁয়াজ আমাদের কিনতে হয়েছে ৯০ টাকার বেশি দামে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস যুগান্তরকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এখনও কমেনি। পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০-৭৫ টাকা, মিয়ানমারের পেয়াঁজ কেজিপ্রতি ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমার থেকে ২০ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে। আরও কিছু পাইপলাইনে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত থেকেও কয়েকশ’ ট্রাক পেঁয়াজ আসছে। এসব ট্রাক সীমান্তে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে পেঁয়াজের দাম আর ঊর্ধ্বমুখী থাকবে না।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, পেঁয়াজের দাম নিয়ে কাউকে কারসাজি করতে দেয়া হবে না। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। উপজেলাগুলোতেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

অবশেষে ভারত থেকে এল ২৫৭ ট্রাক পেঁয়াজ

আপডেট টাইম : ০৭:০২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ অক্টোবর ২০১৯

অবশেষে ছুটির দিন শুক্রবার বিশেষ ব্যবস্থায় হিলি ও সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ঢুকেছে ২৫৭ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমার থেকে ২০ ট্রাক পেঁয়াজ ঢুকেছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। এছাড়া মিসরের পেঁয়াজের চালানও ঢাকায় পৌঁছেছে।

ট্রাক ঢোকার পর হিলি স্থলবন্দরে এদিন ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা কেজিদরে। চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০-৭৫ টাকা ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানী ঢাকার পাইকারি বাজারেও। এদিন ঢাকার শ্যামবাজারে (পাইকারি) ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকা কেজিদরে। মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৬০ টাকা কেজিতে। দেশি পেঁয়াজ ৯০-৯৫ টাকা।

তবে খুচরা বাজারের চিত্র খুব একটা বদলায়নি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে (খুচরা) শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ বৃহস্পতিবারের মতোই বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকায় (ভালোটা ১২০ টাকা), ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকায়, মিসরের পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকায়। রাজধানীর অন্যান্য বাজার এবং চট্টগ্রামসহ সারা দেশের বাজারের চিত্রও প্রায় একই ছিল।

ঢুকল ভারতীয় পেঁয়াজবাহী ট্রাক : দিনাজপুর ও শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, হিলি স্থলবন্দরের ওপারে টানা ৫ দিন আটকে থাকার পর শুক্রবার দেশে ঢোকে পেঁয়াজবাহী ৫৭টি ট্রাক। এসব ট্রাকে ভারত থেকে ৯৪৬ টন পেঁয়াজ এলেও বন্দরে আটকে থাকায় বেশিরভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন হিলি বন্দরের আমদানিকারকরা।

অন্যদিকে ভারতের মহদিপুরে ৭ দিন আটকে থাকার পর এদিন পেঁয়াজবাহী ২০০টি ট্রাক সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে। দুই স্থলবন্দর দিয়ে দেশে পেঁয়াজ আসায় কমেছে দাম। শুক্রবার হিলিবন্দরে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৫২ টাকায়।

হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত থেকে প্রায় ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলেন হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারকরা। কিন্তু রোববার বিকালে হঠাৎ করে এক নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষসহ রফতানিকারকদের বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি না করতে আদেশ জারি করে ভারত সরকার। হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশি আমদানিকারকদের এলসি করা পেঁয়াজবাহী ৭০টি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের মুখে ভারতের হিলি স্থলবন্দরে আটকা পড়ে। অবশেষে ছুটির দিন দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাকগুলো বন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করে। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, এদিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আটকে পড়া ৭০টি ট্রাকের মধ্যে ৫৭টি ট্রাকে ৯৪৬ টন পেঁয়াজ হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এসেছে।

আমদানিকারক বাবলুর রহমান বলেন, ৫ দিন আটকে থাকায় গরমে বেশিরভাগ পোঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। গাড়ি বেয়ে পেঁয়াজ পচা পানি ঝরছে। গুদামে নিয়ে বাছাই করে তারপর এসব পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে সোনামসজিদ স্থলবন্দরের দায়িতরত্ব কাস্টমস পরিদর্শক বুলবুল জানিয়েছেন, ভারতের মহদিপুর স্থলবন্দরে ৭ দিন আটকে থাকা পেঁয়াজ ভর্তি ২০০ ট্রাক শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রবেশ করতে শুরু করে।

চট্টগ্রাম নগরীতে ৯০, উপজেলায় এখনও ১০০ টাকার বেশি : চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও খুচরায় দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। নগরীতে খুচরা বাজারে ভারতীয় বা মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও উপজেলা পর্যায় ও প্রত্যন্ত এলাকায় পেঁয়াজ এখনও ১০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ব্যতিক্রম শুধু হাটহাজারী উপজেলা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিনের তৎপরতার কারণে সেখানে আড়তদাররা অতিরিক্ত দাম নেয়ার সাহস পাচ্ছেন না বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজিতে জড়িত কয়েকজন পাইকার ও আড়তদার গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছে। তাদের কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আর খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস জানিয়েছেন, ভারত থেকে কয়েকশ’ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে আসছে।

পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার নেপথ্যে রয়েছেন আমদানিকারকরা। আমদানিকারকরা জোর করে কমিশন এজেন্ট বা আড়তদারদের বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য করছেন। ফলে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে। প্রশাসন আড়তদারদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও আমদানিকারকরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমদানিকারকদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।

শুক্রবার চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভারতীয় পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি ৭০-৭৫ টাকা, মিয়ানমারের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকায়। তবে মানভেদে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা কমবেশি রয়েছে কোথাও কোথাও। চট্টগ্রামের বাজারে এদিন বলতে গেলে দেশি পেঁয়াজ দেখা যায়নি।

রিয়াজউদ্দিন বাজারের এক আড়তের বিক্রেতা জয়নাল আবেদীন যুগান্তরকে বলেন, ‘২৯ সেপ্টেম্বরের পর অতিরিক্ত দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। ফলে এখনও অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা লোকসান দিয়ে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারি না।’

উপজেলা পর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বৃহস্পতিবার লোহাগাড়া উপজেলা সদরের বটতলী মোটর স্টেশন, পদুয়া বাজার, চুনতি বাজার ও আধুনগর বাজারে অভিযান চালিয়ে সাত মুদি দোকানকে জরিমানা করা হয়। এরপরও শুক্রবার লোহাগাড়ার বিভিন্ন এলাকায় ১০০ টাকার বেশি দামে পেঁয়াজ (ভারতীয় বা মিয়ানমারের) বিক্রি হয়েছে। খুচরা বিক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম যুগান্তরকে জানান, আমরা এখনও প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকায় বিক্রি করছি। কারণ এসব পেঁয়াজ আমাদের কিনতে হয়েছে ৯০ টাকার বেশি দামে।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস যুগান্তরকে বলেন, ‘পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমলেও খুচরা বাজারে এখনও কমেনি। পাইকারি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৭০-৭৫ টাকা, মিয়ানমারের পেয়াঁজ কেজিপ্রতি ৬০ টাকা থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে মিয়ানমার থেকে ২০ ট্রাক পেঁয়াজ এসেছে। আরও কিছু পাইপলাইনে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভারত থেকেও কয়েকশ’ ট্রাক পেঁয়াজ আসছে। এসব ট্রাক সীমান্তে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে। ফলে পেঁয়াজের দাম আর ঊর্ধ্বমুখী থাকবে না।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, পেঁয়াজের দাম নিয়ে কাউকে কারসাজি করতে দেয়া হবে না। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। উপজেলাগুলোতেও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।