ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভালো আম পেতে অপেক্ষা ১ জুন: আমে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারে বিশেষজ্ঞদের দ্বিমত

ভালো আম নেন, ১০০ টাকা কেজি। দেখতে ভালো, খেতে মজা। এভাবেই রাজধানীর মতিঝিলে আরিফ নামে এক ফল ব্যবসায়ী সাতক্ষীরার হিমসাগর আম বিক্রি করছেন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের রইসউদ্দিনও বলেন, লেন লেন ভালো আম, সাতক্ষীরার হিমসাগর আম, প্রতি কেজি ৯০ টাকা। শুধু ওই দুজনই নন, রাজধানীর অলিগলি অন্যান্য ফলের সঙ্গে বাহারি রঙের আমে ছেয়ে গেছে। গতকাল রোজার প্রথম দিনে এভাবেই ভোক্তাদের কাছে আম বিক্রির চেষ্টা করেন বিক্রেতারা। কেউ আবার বলছেন, রাজশাহীর ন্যাংড়া আম, ভালো আম ৮০ টাকা কেজি। কিন্তু আমের রাজধানী বলে খ্যাত ‘কানসাট বাজার’-এর আড়তে এখনো খিরসা বা ন্যাংড়া আম ওঠেনি। তবে ১ জুন থেকে ওই এলাকায় আম পাড়া (গাছ থেকে নামা) শুরু হবে।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রোজা মানবকণ্ঠকে বলেন, ভালোমানের অর্থাৎ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর হিমসাগর এবং খিরসা আম পাওয়া যাবে জুনের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এমএ রহিমও বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের হিমসাগর ও খিরসা পাওয়া যাবে ১ জুন থেকে। যা সাতক্ষীরা অঞ্চলে ১ মে ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে ১৫ মে থেকে আম পাড়া শুরু হয়েছে। তবে সংরক্ষণের নামে আমে যে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে তা নিয়ে তাদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে দ্বিমত।
আমের রাজধানী বলে খ্যাত অর্থাৎ চাঁপাইনবাগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় ভালো মানের আম উৎপাদন হয়, সেখানে গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হয়েছে গত ২৫ মে থেকে। জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছরের মতো এবারো আম পাড়ার উদ্বোধন করেন। তাই কিছু আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। যা গুটি ও গোপালভোগ।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক নিয়ামত আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, বাজারে আম নামতে শুরু করেছে। কিন্তু তেমন স্বাদের নয়। কারণ ভালো মানের আম হচ্ছে খিরসা ও ন্যাংড়া। যা এখানো বাজারে আসেনি। একই কথা বলেন, কানসাট বাজারের নিহার বানু সুমি। তিনি বলেন, কয়েকদিন থেকে বাজারে গুটি ও গোপালভোগ আম পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো তো খিরসা ও ন্যাংড়ার মতো বেশি স্বাদের নয়। কারণ গোপালভোগ আমে আঁশ থাকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বারির আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব কেন্দ্র তথা চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রোজা বলেন, আমের জাতগুলোর পরিপক্কতার সময় এক নয়। তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর থেকেই ব্যবসায়ীরা বাজারে তা বিক্রি করতে পারবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজধানীর জন্য গোপালভোগ আমের মৌসুম শুরু মের ৪র্থ সপ্তাহ। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে নির্দেশনা মোতাবেক গত ২৫ মে আম পাড়া শুরু হয়েছে। এরপরে বাজারেও বেচাকেনা শুরু হয়েছে। হিমসাগর ও খিরসা শুরু হবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে। ন্যাংড়া জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। ফজলি আম পাওয়া যাবে দ্বিতীয় জুলাই থেকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অঞ্চল ভেদে একই আমের স্বাদ মাটির কারণে কিছুটা কম-বেশি হয়। যা ভোক্তার কাছেও অনুভব হচ্ছে।
বিএইউর প্রফেসর ড. রহিম আমের ওপর বিস্তারিত গবেষণা করে তার তথ্য উপাত্ত বর্ণনা করেন। তাতেও আমের মৌসুম অঞ্চলভেদে সময়ের তারতম্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে রাজশাহী, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও পার্বত্য অঞ্চলে আম চাষ হচ্ছে। তাই দেখা যায় গুটি আম ১ মে সাতক্ষীরা ও পার্বত্য অঞ্চলে, ৫ মে চুয়াডাঙ্গা, মধ্য মে’তে রাজশাহীতে পাওয়া যায়। এরপরে দ্বিতীয় সপ্তাতে সাতক্ষীরায় হিমসাগর, ১৫ মে চুয়াডাঙ্গা ও পার্বত্য অঞ্চলে এবং ১ জুনে রাজশাহী অঞ্চলে হিমসাগর, খিরসা ও ন্যাংড়া আম পাওয়া যাবে। অপরদিকে, ন্যাংড়া আম ২৫ মে সাতক্ষীরা ও পার্বত্য অঞ্চলে এবং ২০ মে চুয়াডাঙ্গায় পাওয়া যাবে।
এ আমের বাজার অল্প সময়ে শেষ হয়ে গেলেও একটু উদ্যোগী হলে মাস খানেক তা ধরে রাখা সম্ভব। এ ব্যাপারে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জমির উদ্দন বলেন, ধানি জমি ও অন্যান্য শস্যের চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা আমের দিকে ঝুঁকছে বেশি। এখন পর্যন্ত যে যাই করুক স্বাভাবিক নিয়মেই আমের রং ভালো থাকার পাশাপাশি কোয়লিটিও ঠিক থাকে। তবে আমকে সতেজ রাখতে চীন থেকে এনে বাগানে সাদা ও ব্রাউন চাইনিজ ফ্রুট ব্যাগে আম ঢুকিয়ে কোনো কোনো জায়গায় আমচাষিদের প্ররোচিত করা হচ্ছে। এতে লাভের কথা বলা হলেও পরিশেষে এর ফল উল্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, মুকুলের সময় থেকেই সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় ও সঠিক পদ্ধতিতে আম বাগানের পরিচর্যা, সেচ ও সারপ্রয়োগ এবং অনুমোদিত মাত্রায় বালাইনাশক প্রয়োগ করলেই ভালো মানের আম বাজারজাত করা যায়। তিনি আরো বলেন, ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ২১ দিন বা এক মাস আম রাখা যাবে। তবে উদ্যোগ ও প্রচারণার অভাবেই তা অজানা থেকে যাচ্ছে।
তবে ড. জমিরের এ বক্তব্য মানতে নারাজ ড. রেজা। তিনি বলেন, ফ্রুট ব্যাগিং ছাড়া আমের কোয়ালিটি ঠিক রাখা সম্ভব নয়। সারা বিশ্বে এটার ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশে হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোনো ব্যাপারে নতুন কিছু আয়ত্ত করতে একটু সময় লাগবে। এটা ছাড়া বিশ্বে আম রফতানি হবে না। তাই খুব অল্প সময়ে হাইড্রোলিক মইয়ের ব্যবহার হবে আম বাগানে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের জন্য।
আমে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারে তাদের দ্বিমত দেখা দেয়ায় প্রফেসর রহিমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমের ব্যাপারে গবেষণা করে আমি ১৫টি জাত উদ্ভাবন করেছি। তবে আমে ফ্রুট ব্যাগের ব্যবহার নিয়ে কিছু করা হয়নি। এর ব্যবহার কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে ব্যাপারে তিনি বলেন, এর ভালো বা খারাপ কিছু আমি বলতে পারব না। কারণ স্বাভাবিকভাবেই পরিমিত কীটনাশক ব্যবহার করলে আমের কোনো ক্ষতি হবে না।
ঢাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকেন আমে। তার প্রভাবে ২০১৪ ও ১৫ সালে অনেক আম ধ্বংস করে প্রশাসন। তবে ফরমালিনের ব্যবহার আতঙ্ক এবারে তেমন নেই। তাই আম ব্যবসায়ীরা এবার ভালোভাবে আম ব্যবসা করতে পারবেন বলে জানান।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, গত ১০ বছরে দেশে আমের উৎপাদন চার গুণ বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ টন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে মাত্র আড়াই লাখ টন আম উৎপাদন করে বিশ্বের ১৪তম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় ছিল। যা বর্তমানে সপ্তম স্থানে চলে এসেছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আমের চাষ। তবে প্রকৃতপক্ষে দেশের মোট কত একর জমিতে আম চাষ হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ দিতে পারেনি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ভালো আম পেতে অপেক্ষা ১ জুন: আমে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারে বিশেষজ্ঞদের দ্বিমত

আপডেট টাইম : ০৪:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০১৭

ভালো আম নেন, ১০০ টাকা কেজি। দেখতে ভালো, খেতে মজা। এভাবেই রাজধানীর মতিঝিলে আরিফ নামে এক ফল ব্যবসায়ী সাতক্ষীরার হিমসাগর আম বিক্রি করছেন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের রইসউদ্দিনও বলেন, লেন লেন ভালো আম, সাতক্ষীরার হিমসাগর আম, প্রতি কেজি ৯০ টাকা। শুধু ওই দুজনই নন, রাজধানীর অলিগলি অন্যান্য ফলের সঙ্গে বাহারি রঙের আমে ছেয়ে গেছে। গতকাল রোজার প্রথম দিনে এভাবেই ভোক্তাদের কাছে আম বিক্রির চেষ্টা করেন বিক্রেতারা। কেউ আবার বলছেন, রাজশাহীর ন্যাংড়া আম, ভালো আম ৮০ টাকা কেজি। কিন্তু আমের রাজধানী বলে খ্যাত ‘কানসাট বাজার’-এর আড়তে এখনো খিরসা বা ন্যাংড়া আম ওঠেনি। তবে ১ জুন থেকে ওই এলাকায় আম পাড়া (গাছ থেকে নামা) শুরু হবে।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রোজা মানবকণ্ঠকে বলেন, ভালোমানের অর্থাৎ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর হিমসাগর এবং খিরসা আম পাওয়া যাবে জুনের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এমএ রহিমও বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের হিমসাগর ও খিরসা পাওয়া যাবে ১ জুন থেকে। যা সাতক্ষীরা অঞ্চলে ১ মে ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে ১৫ মে থেকে আম পাড়া শুরু হয়েছে। তবে সংরক্ষণের নামে আমে যে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে তা নিয়ে তাদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে দ্বিমত।
আমের রাজধানী বলে খ্যাত অর্থাৎ চাঁপাইনবাগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় ভালো মানের আম উৎপাদন হয়, সেখানে গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হয়েছে গত ২৫ মে থেকে। জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছরের মতো এবারো আম পাড়ার উদ্বোধন করেন। তাই কিছু আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। যা গুটি ও গোপালভোগ।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক নিয়ামত আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, বাজারে আম নামতে শুরু করেছে। কিন্তু তেমন স্বাদের নয়। কারণ ভালো মানের আম হচ্ছে খিরসা ও ন্যাংড়া। যা এখানো বাজারে আসেনি। একই কথা বলেন, কানসাট বাজারের নিহার বানু সুমি। তিনি বলেন, কয়েকদিন থেকে বাজারে গুটি ও গোপালভোগ আম পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো তো খিরসা ও ন্যাংড়ার মতো বেশি স্বাদের নয়। কারণ গোপালভোগ আমে আঁশ থাকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বারির আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব কেন্দ্র তথা চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রোজা বলেন, আমের জাতগুলোর পরিপক্কতার সময় এক নয়। তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর থেকেই ব্যবসায়ীরা বাজারে তা বিক্রি করতে পারবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজধানীর জন্য গোপালভোগ আমের মৌসুম শুরু মের ৪র্থ সপ্তাহ। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে নির্দেশনা মোতাবেক গত ২৫ মে আম পাড়া শুরু হয়েছে। এরপরে বাজারেও বেচাকেনা শুরু হয়েছে। হিমসাগর ও খিরসা শুরু হবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে। ন্যাংড়া জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। ফজলি আম পাওয়া যাবে দ্বিতীয় জুলাই থেকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অঞ্চল ভেদে একই আমের স্বাদ মাটির কারণে কিছুটা কম-বেশি হয়। যা ভোক্তার কাছেও অনুভব হচ্ছে।
বিএইউর প্রফেসর ড. রহিম আমের ওপর বিস্তারিত গবেষণা করে তার তথ্য উপাত্ত বর্ণনা করেন। তাতেও আমের মৌসুম অঞ্চলভেদে সময়ের তারতম্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে রাজশাহী, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও পার্বত্য অঞ্চলে আম চাষ হচ্ছে। তাই দেখা যায় গুটি আম ১ মে সাতক্ষীরা ও পার্বত্য অঞ্চলে, ৫ মে চুয়াডাঙ্গা, মধ্য মে’তে রাজশাহীতে পাওয়া যায়। এরপরে দ্বিতীয় সপ্তাতে সাতক্ষীরায় হিমসাগর, ১৫ মে চুয়াডাঙ্গা ও পার্বত্য অঞ্চলে এবং ১ জুনে রাজশাহী অঞ্চলে হিমসাগর, খিরসা ও ন্যাংড়া আম পাওয়া যাবে। অপরদিকে, ন্যাংড়া আম ২৫ মে সাতক্ষীরা ও পার্বত্য অঞ্চলে এবং ২০ মে চুয়াডাঙ্গায় পাওয়া যাবে।
এ আমের বাজার অল্প সময়ে শেষ হয়ে গেলেও একটু উদ্যোগী হলে মাস খানেক তা ধরে রাখা সম্ভব। এ ব্যাপারে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জমির উদ্দন বলেন, ধানি জমি ও অন্যান্য শস্যের চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা আমের দিকে ঝুঁকছে বেশি। এখন পর্যন্ত যে যাই করুক স্বাভাবিক নিয়মেই আমের রং ভালো থাকার পাশাপাশি কোয়লিটিও ঠিক থাকে। তবে আমকে সতেজ রাখতে চীন থেকে এনে বাগানে সাদা ও ব্রাউন চাইনিজ ফ্রুট ব্যাগে আম ঢুকিয়ে কোনো কোনো জায়গায় আমচাষিদের প্ররোচিত করা হচ্ছে। এতে লাভের কথা বলা হলেও পরিশেষে এর ফল উল্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, মুকুলের সময় থেকেই সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় ও সঠিক পদ্ধতিতে আম বাগানের পরিচর্যা, সেচ ও সারপ্রয়োগ এবং অনুমোদিত মাত্রায় বালাইনাশক প্রয়োগ করলেই ভালো মানের আম বাজারজাত করা যায়। তিনি আরো বলেন, ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ২১ দিন বা এক মাস আম রাখা যাবে। তবে উদ্যোগ ও প্রচারণার অভাবেই তা অজানা থেকে যাচ্ছে।
তবে ড. জমিরের এ বক্তব্য মানতে নারাজ ড. রেজা। তিনি বলেন, ফ্রুট ব্যাগিং ছাড়া আমের কোয়ালিটি ঠিক রাখা সম্ভব নয়। সারা বিশ্বে এটার ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশে হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোনো ব্যাপারে নতুন কিছু আয়ত্ত করতে একটু সময় লাগবে। এটা ছাড়া বিশ্বে আম রফতানি হবে না। তাই খুব অল্প সময়ে হাইড্রোলিক মইয়ের ব্যবহার হবে আম বাগানে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের জন্য।
আমে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারে তাদের দ্বিমত দেখা দেয়ায় প্রফেসর রহিমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমের ব্যাপারে গবেষণা করে আমি ১৫টি জাত উদ্ভাবন করেছি। তবে আমে ফ্রুট ব্যাগের ব্যবহার নিয়ে কিছু করা হয়নি। এর ব্যবহার কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে ব্যাপারে তিনি বলেন, এর ভালো বা খারাপ কিছু আমি বলতে পারব না। কারণ স্বাভাবিকভাবেই পরিমিত কীটনাশক ব্যবহার করলে আমের কোনো ক্ষতি হবে না।
ঢাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকেন আমে। তার প্রভাবে ২০১৪ ও ১৫ সালে অনেক আম ধ্বংস করে প্রশাসন। তবে ফরমালিনের ব্যবহার আতঙ্ক এবারে তেমন নেই। তাই আম ব্যবসায়ীরা এবার ভালোভাবে আম ব্যবসা করতে পারবেন বলে জানান।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, গত ১০ বছরে দেশে আমের উৎপাদন চার গুণ বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ টন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে মাত্র আড়াই লাখ টন আম উৎপাদন করে বিশ্বের ১৪তম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় ছিল। যা বর্তমানে সপ্তম স্থানে চলে এসেছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আমের চাষ। তবে প্রকৃতপক্ষে দেশের মোট কত একর জমিতে আম চাষ হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ দিতে পারেনি।