ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজা যেভাবে আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  রোজা ইসলাম ধর্মের পাঁচটি প্রধান স্তম্ভের অন্যতম। রমজান নিঃশেষ রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ। মুসলমানরা রমজান মাসে রোজা পালন করেন কারণ এটি ফরজ ইবাদাত। মহান আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারাহ’র ১৮৩ নং আয়াতে বলেছেন ‘হে ঈমানদারগন; তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে যেমন করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, সম্ভবত তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোজা পালনে শিথিলতা রয়েছে। রমজানে ধৈর্য, আত্মসংযম, নিয়মানুবর্তীতার সঙ্গে রোজাপালনের মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের প্রভুর নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ লাভ করে। ধর্মীয় অনুপ্রেরণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও রোজার উপকারিতা সম্পর্কে জানালেন ইউনাইটেড হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট(বক্ষব্যাধী) ডাঃ রওশন আরা খানম।

বিষক্রিয়ার প্রশমন : সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাদ্য থেকে আমাদের দেহের চর্বিকোষে কিছু কিছু বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে থাকে। রোজা এইসব বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্তি লাভের জন্য দারুণ এক সুযোগ তৈরি করে দেয়। রোজা রাখার ফলে লম্বা সময় না খেয়ে থাকায় চর্বি দহনের মাধ্যমে শরীর থেকে এই বিষাক্ত পদার্থগুলো বের হয়ে যায়। লিভার, কিডনি সহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রাম : সারাদিন ব্যাপী পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রামের সময় নির্ধারিত শ্লথ গতিতে হজমের জন্য তরল নিঃসৃত হতে থাকে। খাদ্য হজমও হয় একইভাবে। এতে আত্তীকরণ প্রক্রিয়া জোরদার হয় এবং শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পুষ্টিকনা শোষণ করতে পারে। এটি ‘এডিপোনেকটিন’ নামক হরমোনের প্রভাবে হয় যা অনেকটা সময় না খেয়ে থাকা ও শেষ রাতে খাবার গ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কিত।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : আত্তীকরণ প্রক্রিয়া শ্লথ হওয়ার কারণে এড্রেনালিন ও নরএড্রেনালিন হরমোন কম নিঃসৃত হয়, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ : রোজার সময়ে প্রথমে গ্লুকোজ ও পরে চর্বি দহনের মাধ্যমে শরীরে শক্তি তৈরি হয়। এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে আসে। শরীরে ইনসুলিন ও কম তৈরি হয় অর্থাৎ অগ্ন্যাশয় বিশ্রামে থাকে, যা ডায়াবেটিস এর জন্যও উপকারী। তবে প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর রোজার শুরুতেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

রোজা ওজন কমাতে সাহায্য করে : যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক রমযান তাদের জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের অসাধারণ সুযোগ। প্রথমত রোজা ক্ষুধা ও জাগতিক ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লম্বা সময় না খেয়ে থাকার ফলে পাকস্থলী ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসে, ফলে কম খাবার খেয়েই পেট ভরে যায়। এর সঙ্গে নিয়ম মাফিক স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব। তারাবীর নামাযও মাঝারি মানের ব্যায়াম হিসাবে কাজে লাগে। এছাড়া রোজা চর্বি দহনেও সাহায্য করে। রোজা-পরবর্তীতে এ অভ্যাস ধরে রাখলে ওজন আর বাড়েনা।

রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে : নিয়মিত রোজা পালনের ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব। ‘Annals of nutrition and metabolizom ‘ এ প্রকাশিত আর্টিকেলের তথ্য অনুযায়ী এল ডি এলো কোলেস্টেরল কমে ৮%, ট্রাইগ্লিসারাইড কমে ৩০%, এইচ ডি এল কোলেস্টেরল বাড়ে ১৪.৩%, যা হার্ট এটাক, স্ট্রোক, রক্তনালীতে চর্বি জমা প্রতিহত করে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

রোজা যেভাবে আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারে

আপডেট টাইম : ০৫:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ জুন ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ  রোজা ইসলাম ধর্মের পাঁচটি প্রধান স্তম্ভের অন্যতম। রমজান নিঃশেষ রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ। মুসলমানরা রমজান মাসে রোজা পালন করেন কারণ এটি ফরজ ইবাদাত। মহান আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারাহ’র ১৮৩ নং আয়াতে বলেছেন ‘হে ঈমানদারগন; তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে যেমন করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, সম্ভবত তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোজা পালনে শিথিলতা রয়েছে। রমজানে ধৈর্য, আত্মসংযম, নিয়মানুবর্তীতার সঙ্গে রোজাপালনের মাধ্যমে মুসলমানরা তাদের প্রভুর নিকটবর্তী হওয়ার সুযোগ লাভ করে। ধর্মীয় অনুপ্রেরণার পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও রোজার উপকারিতা সম্পর্কে জানালেন ইউনাইটেড হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট(বক্ষব্যাধী) ডাঃ রওশন আরা খানম।

বিষক্রিয়ার প্রশমন : সাধারণত প্রক্রিয়াজাত খাদ্য থেকে আমাদের দেহের চর্বিকোষে কিছু কিছু বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে থাকে। রোজা এইসব বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্তি লাভের জন্য দারুণ এক সুযোগ তৈরি করে দেয়। রোজা রাখার ফলে লম্বা সময় না খেয়ে থাকায় চর্বি দহনের মাধ্যমে শরীর থেকে এই বিষাক্ত পদার্থগুলো বের হয়ে যায়। লিভার, কিডনি সহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রাম : সারাদিন ব্যাপী পরিপাকতন্ত্রের বিশ্রামের সময় নির্ধারিত শ্লথ গতিতে হজমের জন্য তরল নিঃসৃত হতে থাকে। খাদ্য হজমও হয় একইভাবে। এতে আত্তীকরণ প্রক্রিয়া জোরদার হয় এবং শরীর স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পুষ্টিকনা শোষণ করতে পারে। এটি ‘এডিপোনেকটিন’ নামক হরমোনের প্রভাবে হয় যা অনেকটা সময় না খেয়ে থাকা ও শেষ রাতে খাবার গ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কিত।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ : আত্তীকরণ প্রক্রিয়া শ্লথ হওয়ার কারণে এড্রেনালিন ও নরএড্রেনালিন হরমোন কম নিঃসৃত হয়, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ : রোজার সময়ে প্রথমে গ্লুকোজ ও পরে চর্বি দহনের মাধ্যমে শরীরে শক্তি তৈরি হয়। এতে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমে আসে। শরীরে ইনসুলিন ও কম তৈরি হয় অর্থাৎ অগ্ন্যাশয় বিশ্রামে থাকে, যা ডায়াবেটিস এর জন্যও উপকারী। তবে প্রত্যেক ডায়াবেটিস রোগীর রোজার শুরুতেই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।

রোজা ওজন কমাতে সাহায্য করে : যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক রমযান তাদের জন্য খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের অসাধারণ সুযোগ। প্রথমত রোজা ক্ষুধা ও জাগতিক ইচ্ছা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। লম্বা সময় না খেয়ে থাকার ফলে পাকস্থলী ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসে, ফলে কম খাবার খেয়েই পেট ভরে যায়। এর সঙ্গে নিয়ম মাফিক স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব। তারাবীর নামাযও মাঝারি মানের ব্যায়াম হিসাবে কাজে লাগে। এছাড়া রোজা চর্বি দহনেও সাহায্য করে। রোজা-পরবর্তীতে এ অভ্যাস ধরে রাখলে ওজন আর বাড়েনা।

রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে : নিয়মিত রোজা পালনের ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব। ‘Annals of nutrition and metabolizom ‘ এ প্রকাশিত আর্টিকেলের তথ্য অনুযায়ী এল ডি এলো কোলেস্টেরল কমে ৮%, ট্রাইগ্লিসারাইড কমে ৩০%, এইচ ডি এল কোলেস্টেরল বাড়ে ১৪.৩%, যা হার্ট এটাক, স্ট্রোক, রক্তনালীতে চর্বি জমা প্রতিহত করে।