ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাইরাসজনিত ক্যান্সার ক্যাপোসিস সারকোমা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ভাইরাসের মাধ্যমে ক্যান্সারের কথা শুনলেই অনেকেই অবাক হবেন। ক্যাপোসিস সারকোমা সাধারণত এইডস রোগীদের হয়ে থাকে; কিন্তু যখন ক্যাপোসিস সারকোমার সঙ্গে ভাইরাসের সম্পৃক্ত থাকার কথা সাধারণ মানুষ শুনবে তখন সেটি অবশ্যই নতুন কোনো তথ্য মনে হবে। কিছু ধরনের ভাইরাস নির্দিষ্ট ক্যান্সার সৃষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব ভাইরাস স্বাভাবিক কোষকে ক্যান্সার কোষে পরিবর্তন করতে সক্ষম।

উদাহরণস্বরূপ প্যাপিওলোমা ভাইরাসের কারণে সারভাইক্যাল ক্যান্সার হতে পারে। হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে লিভার ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। এপস্টেনবার ভাইরাসের কারণে বারকিটস্ লিম্ফোমা হতে পারে। বারকিটস্ লিম্ফোমা এক ধরনের নন হজকিনস্ লিম্ফোমা যেখানে ক্যান্সার শুরু হয় ইমমিউন বি’সেল থেকে অর্থাৎ বারকিটস্ লিম্ফোমা লিম্ফেটিক সিস্টেমের একটি ক্যান্সার যার সৃষ্টি হয় বি’লিম্ফোসাইট থেকে। বারকিটস্ লিম্ফোমা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলে। ক্যাপোসিস সারকোমা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি বিরল ক্যান্সার যা উৎপত্তি হয় সেসব কোষ থেকে যা লসিকা নালি এবং রক্তনালির আবরণ সৃষ্টি করে থাকে। হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ কে ক্যাপোসিস সারকোমা সম্পৃক্ত হারপিস ভাইরাসও বলা হয়। ধারণা করা হয় ভাইরাসটি অনিরাপদ যৌনমিলন, রক্ত সঞ্চালন অথবা জন্মের সময় মা থেকে শিশুতে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে।

এইডস শনাক্তকরণে ক্যাপোসিস সারকোমা মারাত্মক একটি টিউমার। এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত হলে আপনার ক্যাপোসিস সারকোমা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এইচআইভি ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। ফলে হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ দ্রুত বংশবিস্তার করে যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল থাকে বা থাকে না বললেই চলে। এ হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ ক্যাপোসিস সারকোমা সৃষ্টি করে থাকে। অতএব সার্বিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এইডস রোগীদের ক্ষেত্রে হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ ক্যাপোসিস সারকোমা নামক ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে। এ ক্যান্সারের মাধ্যমে এইডস রোগী শনাক্ত করা যায়।

ক্যাপোসিস সারকোমার উপসর্গ : ১. প্রাথমিক পরিবর্তনে ক্যাপোসিস সারকোমা সৃষ্টির কোনো ব্যথা থাকে না। ২. মিউকোসা অথবা মাড়ির পিগমেন্টেশনযুক্ত সমান স্থান বা এলাকা। ৩. সংক্রমণ আকৃতিতে বৃদ্ধি পেলে সংক্রমণ স্থান উঁচু হয়ে থাকে। ৪. বড় সংক্রমণের কারণে খাবার গ্রহণ করার সময় এবং কথা বলতে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ৫. ধীরে ধীরে আলসারের সৃষ্টি হয় এবং রোগের বিরতিহীন ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। ৬. এ ক্যান্সার অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে আক্রান্ত করে থাকে যেমন- ফুসফুস, পরিপাকতন্ত্র এবং লিম্ফনোড। ৭. ক্যাপোসিস সারকোমা হলে জ্বর, লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয়।

রোগের চিহ্নগুলো : ১. ক্যাপোসিস সারকোমা একটি বা অনেক হতে পারে। নীল, লাল, পার্পল, বাদামি ম্যাকুউলস্, প্যাপুউলস্, নডিউলস্ অথবা আলসার। ২. পুরনো সংক্রমণের মধ্যবর্তী স্থানে আলসার বা ঘা দেখা যেতে পারে।

ক্যাপোসিস সারকোমা সাধারণত তালুতে হয়ে থাকে, যা ওপরের মোলার দাঁতের উল্টোপাশে অবস্থান করে থাকে। ক্যাপোসিস সারকোমার শুরু হয় সমান, নীল অথবা লাল, পার্পল অথবা ম্যাকুউলস্ রূপে। সংক্রমণ যত বাড়তে থাকবে তখন ক্যাপোসিস সারকোমা নডুলার আকৃতির হয় এবং উঁচু হয়। সংখ্যায় একটি বা অনেক হতে পারে। ক্যাপোসিস সারকোমা কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত সাইজ হতে পারে। আলসারের ফ্লোর ধূসর, পচনশীল এবং রক্তপাত হতে পারে, ক্যাপোসিস সারকোমার লিশন বা সংক্রমণ মিউকাস মেমব্রেনের ওপর বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। যেমন- মুখের এবং গলার অভ্যন্তরে এবং চোখের বাইরে এবং চোখের পাতার ভেতরের অংশে। ক্যাপোসিস সারকোমার লিশন ফুসফুসের অভ্যন্তরে এয়ারওয়েতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এবং শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। পাকস্থলীতেও লিশন বা সংক্রমণ হতে পারে এবং অন্ত্রের অ্যাবডোমিনাল ব্যথা এবং ডায়রিয়া সৃষ্টি করে থাকে।

এজেস বা কিনারা : লাল কিন্তু শক্তভাব অর্থাৎ ইনডুরেশন নেই। মাঝে মাঝে ওরাল ক্যাপোসিস সারকোমা অন্য ইমমিউনোসাপ্রেসিভ অবস্থায় দেখা যায়, অর্থাৎ এইচআইভির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। উদাহরণস্বরূপ দীর্ঘমেয়াদি সাইক্লোসপরিন সেবন করলে এমনটি হতে পারে।

তাই মুখের অভ্যন্তরে কোনো শক্তস্থান, ফোলাভাব বা আলসারযুক্ত স্থান লক্ষ করলে বা দীর্ঘদিন অবস্থান করলে অবহেলা না করে দ্রুত যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ ধরা পড়লে সুচিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ভাইরাসজনিত ক্যান্সার ক্যাপোসিস সারকোমা

আপডেট টাইম : ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ অগাস্ট ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ভাইরাসের মাধ্যমে ক্যান্সারের কথা শুনলেই অনেকেই অবাক হবেন। ক্যাপোসিস সারকোমা সাধারণত এইডস রোগীদের হয়ে থাকে; কিন্তু যখন ক্যাপোসিস সারকোমার সঙ্গে ভাইরাসের সম্পৃক্ত থাকার কথা সাধারণ মানুষ শুনবে তখন সেটি অবশ্যই নতুন কোনো তথ্য মনে হবে। কিছু ধরনের ভাইরাস নির্দিষ্ট ক্যান্সার সৃষ্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসব ভাইরাস স্বাভাবিক কোষকে ক্যান্সার কোষে পরিবর্তন করতে সক্ষম।

উদাহরণস্বরূপ প্যাপিওলোমা ভাইরাসের কারণে সারভাইক্যাল ক্যান্সার হতে পারে। হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে লিভার ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে। এপস্টেনবার ভাইরাসের কারণে বারকিটস্ লিম্ফোমা হতে পারে। বারকিটস্ লিম্ফোমা এক ধরনের নন হজকিনস্ লিম্ফোমা যেখানে ক্যান্সার শুরু হয় ইমমিউন বি’সেল থেকে অর্থাৎ বারকিটস্ লিম্ফোমা লিম্ফেটিক সিস্টেমের একটি ক্যান্সার যার সৃষ্টি হয় বি’লিম্ফোসাইট থেকে। বারকিটস্ লিম্ফোমা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলে। ক্যাপোসিস সারকোমা ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট একটি বিরল ক্যান্সার যা উৎপত্তি হয় সেসব কোষ থেকে যা লসিকা নালি এবং রক্তনালির আবরণ সৃষ্টি করে থাকে। হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ কে ক্যাপোসিস সারকোমা সম্পৃক্ত হারপিস ভাইরাসও বলা হয়। ধারণা করা হয় ভাইরাসটি অনিরাপদ যৌনমিলন, রক্ত সঞ্চালন অথবা জন্মের সময় মা থেকে শিশুতে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে।

এইডস শনাক্তকরণে ক্যাপোসিস সারকোমা মারাত্মক একটি টিউমার। এইচআইভি ভাইরাস সংক্রমিত হলে আপনার ক্যাপোসিস সারকোমা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এইচআইভি ভাইরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। ফলে হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ দ্রুত বংশবিস্তার করে যেহেতু রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল থাকে বা থাকে না বললেই চলে। এ হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ ক্যাপোসিস সারকোমা সৃষ্টি করে থাকে। অতএব সার্বিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এইডস রোগীদের ক্ষেত্রে হিউম্যান হারপিস ভাইরাস-৮ ক্যাপোসিস সারকোমা নামক ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে। এ ক্যান্সারের মাধ্যমে এইডস রোগী শনাক্ত করা যায়।

ক্যাপোসিস সারকোমার উপসর্গ : ১. প্রাথমিক পরিবর্তনে ক্যাপোসিস সারকোমা সৃষ্টির কোনো ব্যথা থাকে না। ২. মিউকোসা অথবা মাড়ির পিগমেন্টেশনযুক্ত সমান স্থান বা এলাকা। ৩. সংক্রমণ আকৃতিতে বৃদ্ধি পেলে সংক্রমণ স্থান উঁচু হয়ে থাকে। ৪. বড় সংক্রমণের কারণে খাবার গ্রহণ করার সময় এবং কথা বলতে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। ৫. ধীরে ধীরে আলসারের সৃষ্টি হয় এবং রোগের বিরতিহীন ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। ৬. এ ক্যান্সার অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে আক্রান্ত করে থাকে যেমন- ফুসফুস, পরিপাকতন্ত্র এবং লিম্ফনোড। ৭. ক্যাপোসিস সারকোমা হলে জ্বর, লিম্ফনোড ফুলে যাওয়া, ওজন কমে যাওয়ার মতো লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয়।

রোগের চিহ্নগুলো : ১. ক্যাপোসিস সারকোমা একটি বা অনেক হতে পারে। নীল, লাল, পার্পল, বাদামি ম্যাকুউলস্, প্যাপুউলস্, নডিউলস্ অথবা আলসার। ২. পুরনো সংক্রমণের মধ্যবর্তী স্থানে আলসার বা ঘা দেখা যেতে পারে।

ক্যাপোসিস সারকোমা সাধারণত তালুতে হয়ে থাকে, যা ওপরের মোলার দাঁতের উল্টোপাশে অবস্থান করে থাকে। ক্যাপোসিস সারকোমার শুরু হয় সমান, নীল অথবা লাল, পার্পল অথবা ম্যাকুউলস্ রূপে। সংক্রমণ যত বাড়তে থাকবে তখন ক্যাপোসিস সারকোমা নডুলার আকৃতির হয় এবং উঁচু হয়। সংখ্যায় একটি বা অনেক হতে পারে। ক্যাপোসিস সারকোমা কয়েক মিলিমিটার থেকে কয়েক সেন্টিমিটার পর্যন্ত সাইজ হতে পারে। আলসারের ফ্লোর ধূসর, পচনশীল এবং রক্তপাত হতে পারে, ক্যাপোসিস সারকোমার লিশন বা সংক্রমণ মিউকাস মেমব্রেনের ওপর বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। যেমন- মুখের এবং গলার অভ্যন্তরে এবং চোখের বাইরে এবং চোখের পাতার ভেতরের অংশে। ক্যাপোসিস সারকোমার লিশন ফুসফুসের অভ্যন্তরে এয়ারওয়েতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে এবং শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। পাকস্থলীতেও লিশন বা সংক্রমণ হতে পারে এবং অন্ত্রের অ্যাবডোমিনাল ব্যথা এবং ডায়রিয়া সৃষ্টি করে থাকে।

এজেস বা কিনারা : লাল কিন্তু শক্তভাব অর্থাৎ ইনডুরেশন নেই। মাঝে মাঝে ওরাল ক্যাপোসিস সারকোমা অন্য ইমমিউনোসাপ্রেসিভ অবস্থায় দেখা যায়, অর্থাৎ এইচআইভির সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। উদাহরণস্বরূপ দীর্ঘমেয়াদি সাইক্লোসপরিন সেবন করলে এমনটি হতে পারে।

তাই মুখের অভ্যন্তরে কোনো শক্তস্থান, ফোলাভাব বা আলসারযুক্ত স্থান লক্ষ করলে বা দীর্ঘদিন অবস্থান করলে অবহেলা না করে দ্রুত যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার রোগ ধরা পড়লে সুচিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা সম্ভব।