বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আমাদের চারপাশেই নানা প্রজাতির ঔষধি গাছপালা, লতাপাতা, ঘাস ইত্যাদি রয়েছে। যেগুলো হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। এগুলো হতে পারে পুষ্টিকর খাবার কিংবা ঔষধি গুণে ভরপুর। তেমনি গুণ সম্পন্ন একটি উদ্ভিদ হচ্ছে দূর্বাঘাস।
ছোট বেলায় খেলাধুলা করছি। নিজের অথবা বন্ধুদের কোথাও কেটে গেলে দেখেছি বয়সে যারা বড় তারা দৌড়ে গিয়ে দুর্বা ঘাস চিবিয়ে কেটে যাওয়া স্থানে লাগিয়ে দিলেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে কয়েকদিনের মধ্যেই কেটে যাওয়া স্থান জোড়া লেগে যেত। সেই দুর্বা ঘাস এখনও বাংলার আনাচে কানাচে সর্বত্রই পাওয়া যায়।
দূর্বাঘাস শুধুমাত্র প্রাণিদেরই খাদ্য নয়। এটি মানুষেরও পুষ্টিকর আহার! ঔষধি গুণে ভরপুর হওয়ায় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে একে মহাঔষধ বলে।
প্রচলিত নাম- দুর্বা ঘাস, ইউনানী নাম- দুর্বা-দুব, আয়ুর্বেদিক নাম-দুব, ইংরেজী নাম বৈজ্ঞানিক নাম পরিবার।
জেনে নেওয়া যাক দূর্বাঘাসের বিভিন্ন গুণাগুণ সম্পর্কে:-
১। রক্তশূণ্যতাঃ দূর্বার রসকে সবুজ রক্ত বলা হয়। কারণ রস পান করলে রক্তশূণ্যতার সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে। এই রস রক্ত পরিষ্কারক এবং লোহিত রক্তকণিকা বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলো ছাড়াও চোখের জ্যোতি বাড়াতেও সহায়তা করে। এজন্য নগ্ন পায়ে ঘাসের উপর হাঁটতে হয়।
২। দুর্বা ঘাস শরীরের রেচনতন্ত্রের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রস্রাবে কষ্ট হয় অথচ পাথুরী রোগ হয়নি এ’রকম ক্ষেত্রে দুর্বার রস দুধ ও পানি মিশিয়ে খেলে ভাল ফল দেয়। তবে অর্শরোগ থাকলে এটা খাওয়া যাবেনা।
৩। কাটা ও পোড়াঃ কেটে যাওয়া বা আঘাত জনিত রক্তক্ষরনে দুর্বা ঘাসে সামান্য পানি মিশিয়ে পিষে কাটা স্থানে বেধে দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। কাটা স্থান দ্রুত জোড়া লাগে এবং শুকিয়ে যায়। তবে এ ক্ষেত্রে দুর্বার শিকড় ব্যবহার করলে বেশী উপকার পাওয়া যায়।
৪। ত্বকের সমস্যাঃ দূর্বাঘাসে বিদ্যমান প্রদাহরোধী ও জীবাণুরোধী গুণের কারণে তা ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা যেমন চুলকানি, লাল লাল ফুসকুড়ি, একজিমা ইত্যাদি থেকে রক্ষা করে। এজন্য দূর্বাঘাস ও হলুদ পিসে ত্বকে লাগাবেন। দূর্বার রস পান করলে ঘনঘন পিপাসা লাগা থেকে মুক্তি মেলে।
৫। হজম শক্তি বৃদ্ধিঃ দূর্বাঘাস নিয়মিত সেবন করলে পেটের অসুখ থেকে মুক্তি মেলে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিটি থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। এর রস পানে পিত্তজনিত কারণে সৃষ্ট বমি ঠিক হয়ে যায়।
৬।চুল পড়া প্রতিরোধেঃ চুল পড়া প্রতিরোধে একটি পাত্রে এক লিটার নারিকেল তেল মৃদুতাপে জ্বাল করে ফেনা দুর করে নিতে হবে। তারপর দুর্বার ঘাসের টাটকা রস ২০০ মিলি সম্পূর্ণ তেলে মিশিয়ে পুনরায় জ্বাল দিয়ে চুলা হতে নামিয়ে ছেঁকে তা সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিদিন গোসলের ১ ঘন্টা আগে ঐ তেল চুলে মাখতে হবে। নিয়মিত২-৩ মাস প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যাবে।
৭। বমি ভাব বন্ধেঃ বমি ভাব বন্ধের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ১ চা চামচ চিনি সহকারে ১ ঘন্টা পর পর খেতে হবে, বমি ভাব কেটে গেলে খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
৮। আমাশয় রোগের জন্যঃ আমাশয় রোগের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ ডালিম পাতা কিংবা ডালিমের ছালের
রস৪-৫ চামচ মিশিয়ে প্রতিদিন ৩-৪ বার খেতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে আমাশয়
ভাল হয়ে যাবে।
৯। অধিক ঋতুস্রাব রোগের জন্য অধিক ঋতুস্রাব রোগের জন্য দুর্বা ঘাসের রস ২-৩ চামচ প্রতিদিন মধু সহ ৩-৪ বার খেতে হবে। এভাবে ১০-১৫ দিন খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
১০ । আয়ুর্বেদীয় মতে রক্ত পিত্তে দুর্বা ঘাস মহৌষধ। এরোগে মুখ, নাক ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশ দিয়ে রক্তস্রাব হতে পারে। এক্ষেত্রে দুর্বা ঘাসের রসের সাথে কাঁচা দুধ মিশিয়ে খাওয়ালে রোগের উপশম হয়।
১১ । শ্বেতপ্রদরজনিত দূর্বলতায় দুর্বা ঘাস ও কাঁচা হলুদের রস সমপরিমাণে মিশিয়ে খেলে রোগী দূর্বলতা কাটিয়ে ওঠে।
১২ । দুর্বা ঘাস সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও সম্ভাবনাময় ওষুধ। গর্ভধারণে অসমর্থ হলে দুর্বা ও আতপ চাল এক সাথে বেটে বড়া করে ভাতের সাথে সপ্তাহে তিন/চারদিন খেলে উপকার পাওয়া যায়।