বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আপনি কি জানেন, একটি আমলকীতে প্রায় ২০টি কমলার সমান ভিটামিন সি থাকে ? অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই ! হ্যাঁ, ১০০ গ্রাম তাজা আমলকীতে থাকে প্রায় ৪৭০-৬৮০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এই ফলকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে দেখা হচ্ছে । আমলকী ফল হিসেবে একটি অনন্য ফল। এছাড়া এটি ভেষজ চিকিৎসায় একটি কার্যকরী উদ্ভিদ। আমাদের দেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ৫০০০ হাজার বছরের বেশি সময় ধরে দেহের প্রতিরোধক ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এবং দেহের পুনর্যৌবন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হলদে সবুজ রঙের এই ফলটির রয়েছে আশ্চর্য ক্ষমতা।
সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ঋতুতে, বিভিন্ন আবহাওয়ায় মানুষ এই ফলটি খেয়ে থাকেন এবং ব্যবহার করে বিশেষ করেন এর টক, ঝাল, মিষ্টি ও তেঁতো স্বাদের জন্য। আমলকীর কিছু উপকারিতা আসুন জেনে নেয়া যাক:
যকৃতের বিষাক্ততা দূর করে
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আমলকী যকৃতে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ বিশেষ করে যক্ষ্মা রোগের ঔষধের নেতিবাচক প্রভাব পরার ফলে যেসব বিষাক্ততার সৃষ্টি হয় তা দূর করতে সাহায্য করে।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে
যখন দেহ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে তখন দেহের জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি অনেক সময় ক্যান্সার প্রতিরোধও করতে পারে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের প্রদাহ এবং নষ্ট হওয়ার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী
যকৃতের এবং অগ্নাশয়ের প্রদাহ, ফোলা, ব্যাথা দূর করতে এবং সঠিকভাবে অগ্নাশয়ের কাজে সাহায্য করে। নিয়মিত আমলকী খেলে তা ইন্সুলিনের নির্গমনকে নিয়ন্ত্রণ করে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে। গবেষণায় দেখা যায় যে মাত্র ৩ গ্রাম আমলকীর গুঁড়ো অন্য যেকোনো ডায়াবেটিসের ঔষধের চেয়ে বেশি কার্যকরী।
পেটের ব্যাথা দূর করতে
পেটের ব্যাথা, ডায়রিয়া, বমি, পেট মোচড়ানো, প্রদাহ সহ বিভিন্ন ধরনের হজমজনিত পেটের সমস্যা আমলকীর দ্বারা দূর করা সম্ভব।
সুন্দর ত্বক, চুল এবং নখের জন্য
আমলকী দেহ কোষের পুনর্গঠনে যার ফলে দেহে পুনর্যৌবন লাভ করে। নিয়মিত আমলকী খেলে এবং ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হয়, বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়, অকালে চুল পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করে এবং চুলের খুশকি দূর করার প্রাকৃতিক ঘরোয়া উপায় হচ্ছে এই আমলকী। শ্যাম্পু, ফেসিয়াল ক্রিম, চুলের মাস্ক এবং অন্যান্য আরো অনেক কিছুতেই আমলকী ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ত্বকের সমস্যা দূর করতে
ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে আমলকীর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ব্রণ, ফুসকুড়ি, রুক্ষ ত্বক, ইত্যাদি ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাসহ ত্বকের অনেক ধরনের প্রদাহ দূর করতে পারে এই আমলকী।
চুলের সুরক্ষায়
শুকনো আমলকীর গুঁড়ো সামান্য কুসুম গরম পানিতে মিশিয়ে ১ ঘন্টা রেখে দিয়ে তারপর সেই মিশ্রণটি পুরো চুলে ম্যাসেজ করে লাগিয়ে আধা থেকে ১ ঘণ্টা রাখতে হবে। তারপর ধুয়ে ফেলুন। এর ফলে দ্রুত চুলের বৃদ্ধি হবে, আর্দ্রতা বজায় থাকবে, চুল হবে মসৃন এবং উজ্জ্বল।
ফ্রিজে ডিম রাখলে কি হতে পারে জানেন ?
১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৯০ জন এই ভুল কাজটা করে থাকেন। আর এই কারণে তাদের শরীরকেও যে বেশ ভোগান্তি পোয়াতে হয়, সে বিষযে কোনও সন্দেহ নেই !
একাধিক গবেষণায় একথা প্রণামিত হয়ে গেছে যে ফ্রিজের দরজার যে অংশে ডিম রাখার ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে ভুলেও ডিম রাখা উচিত নয়। কারণ বিশেষজ্ঞদের মতে রেফ্রিজেরেটরের এই অংশে চাপমাত্রা মারাত্নকভাবে ওঠা-নামা করে। যে কারণে ডিম খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তো থাকেই। সেই সঙ্গে নানাবিধ ব্যাকটেরিয়া আক্রামণে ডিম খারাপ হয়ে যায়। এইসব ডিম খেলে শরীরের যে কী হাল হতে পারে, তা নিশ্চয় আর বলে দিতে হবে না। সেই কারণে এবার থেকে ভুলেও ফ্রিজের দরজায় ডিম রাখবেন না।
পরিবর্তে একটি এয়ার টাইট পাত্রে ডিম রেখে তা ফ্রিজের পেটের ভিতরে রাখবেন। এমনটা করলে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় ডিমগুলি থাকবে। ফলে সেগুলি খারাপ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমবে। প্রসঙ্গত, আরও কতগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন- রান্না করা ডিম ভুলেও ৩-৪ দিনের বেশি ফ্রিজে রাখা চলবে না। এর বেশি সময় ফ্রিজে রেখে সেই খাবার খেলে শরীর খারাপ হতে পারে। আর কাঁচা ডিম কখনই ৩০ দিনের বেশি রেখে খাবেন না।
এই নিয়মগুলি মেনে ফ্রিজে ডিম রাখলে খাবারটির শরীরে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান, যেমন- ভিটামিন-এ, ভিটামিন বি২, বি১২, বি৫, ভিটামিন ডি, ই, বায়োটিন, কোলিন, ফলিক অ্যাসিড এবং আয়রন একেবারে ঠিক ঠিক অবস্থায় থাকবে। ফলে এমন ডিম খেলে নানাভাবে শরীরের উপকারও হবে। যেমন…
১. পেশির শক্তি বাড়বে:
ডিমে উপস্থিত প্রোটিন শরীরে প্রবেশ করার পর পেশির গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই কারণেই তো বডি বিল্ডারদের নিয়মিত ৪-৫ টা করে ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
২. ব্রেন পাওয়ার বাড়বে:
আপনি কি ফেলুদা বা ব্যোমকেশের মতো বুদ্ধিমান হয়ে উঠতে চান? তাহলে নিয়মিত ২০ সেন্ট্রিগ্রেটে ফ্রিজে স্টোর করা ডিম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন অল্প দিনেই সুফল পাবেন। আসলে ডিমের মধ্যে থাকা নানাবিধ ভিটামিন এবং মিনারেল শরীরে প্রবেশ করার পর নার্ভাস সিস্টেমের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধিরও বিকাশ ঘটে।
৩. এনার্জির ঘাটতি দূর করে:
শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষেদের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার মধ্যে দিয়ে সার্বিকভাবে শরীরের এনার্জির ঘাটতি দূর করতে যে যে ভিটামিন এবং মিনারেলের প্রয়োজন পরে, তা সবই মজুত রয়েছে ডিমের অন্দরে। সেই কারণেই তো নিয়মিত ব্রেকফাস্টে ডিম খেলে সারাদিন শরীর চনমনে থাকে। সেই সঙ্গে কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ৪. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে:
ডিমে উপস্থিত ভিটামিন এ, ভিটামিন বি১২ এবং সেলেনিয়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে এতটাই মজবুত করে তোলে যে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। তাই যদি সুস্থ জীবন পেতে চান, তাহলে প্রতিদিন ডিম খেতে ভুলবেন না যেন ! ৫. হার্টের রোগ দূরে থাকে:
ডিমের অন্দরে থাকা কোলিন নামক একটি উপাদান আমাদের শরীরের মধ্যে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড হোমোসিস্টিনকে ভেঙে দেয়। ফলে হার্টের কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, নিয়মিত ডিম খেলে শরীরে উপকারি কোলেস্টেরলের মাত্রাও বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমানোর মধ্যে দিয়ে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা নেয়।
৬. দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়:
ডিমে উপস্থিত লুটেইন এবং জিয়েজ্যান্থিন নামক দুটি উপাদান দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো যাদের সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করতে হয়, তাদের নিয়মিত ডিম খাওয়া উচিত। প্রসঙ্গত, ডিমের অন্দরে থাকা বেশ কিছু ভিটামিনও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো চোখের যত্নে ডিমকে কাজে লাগাতে ভুলবেন না যেন !
৭. ওজন কমায়:
অতিরিক্ত ওজনের কারণে কপালে চিন্তার ভাঁজ পরেছে? ফিকার নট ! নিয়মিত শরীরচর্চা করার পাশাপাশি ডিম খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন ওজন কমতে সময় লাগবে না। আসলে ডিমের মধ্যে থাকা প্রোটিন অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরিয়ে রাখে। ফলে বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। আর কম খাবার খেলে যে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, তা নিশ্চয় আর আলাদ করে বলে দিতে হবে না।
সূত্রঃ বোল্ডস্কাই