তুরস্কে ভূমিকম্পের প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশি ছাত্র গোলাম সাঈদ রিংকুকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত নয়টায় তাকে উদ্ধার করা হয়। তবে রিংকুর শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে তুরস্কের আঙ্কারায় বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র। এর আগে সোমবার আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, গোলাম সাঈদ রিংকু তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কয়েক বছর আগে উচ্চশিক্ষা নিতে তুরস্কে যান তিনি। সোমবার ভোরে ভূমিকম্পের পর তার মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। পরিচিতজনরা কেউ তার খোঁজ পাচ্ছিলেন না। পরে গোলাম সাঈদ রিংকুর পরিবার বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করে। ছেলের নিখোঁজের বিষয়টি দূতাবাসকে জানান বাবা গোলাম রাব্বানি।
তুরস্ক সরকারের অর্থায়নে দেশটির রাজধানী আঙ্কারার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী অধ্যাপক নাজমুস সাকিব। মঙ্গলবার রাত সাড়ে নয়টায় জাগো নিউজকে নাজমুস সাকিব বলেন, গোলাম সাঈদ রিংকু তুরস্কের কাহরামানমারাশ সুতচু ইমাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ভূমিকম্পের প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর আজ তাকে গুরতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নূরে আলমকে গতকাল সোমবার উদ্ধার করা হয়েছে। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে। আর কোনো বাংলাদেশি নিখোঁজের তথ্য পাওয়া যায়নি বলেও জানান নাজমুস সাকিব।
এদিকে, ভূমিকম্প আঘাত হানার পর হটলাইন চালু করেছে তুরস্কের আঙ্কারায় বাংলাদেশের দূতাবাস ও ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয়। এ হটলাইনে জরুরি যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। তুরস্কে বাংলাদেশের আঙ্কারা দূতাবাস ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার প্রবাসীদের এ দুটি হটলাইনে যোগাযোগ করতে বলেছে- +৯০ ৫৪৬ ৯৯৫ ০৬৪৭ ও +৯০ ৫৩৮ ৯১০ ৯৬৩৫।
এছাড়া ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল কার্যালয় এক বার্তায় তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। তুরস্কে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজনে কনস্যুলেটের হটলাইন নম্বরে (+৯০৮০০২৬১০০২৬) যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টা ১৭মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮।
ভূমিকম্পটি যখন আঘাত হানে, তখন বেশিরভাগ মানুষ ঘুমাচ্ছিলেন। এরপর দুপুরে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি ভূমিকম্পের পরের আঘাত ছিল না।
বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে উদ্ধারকারী দল রাতভর অভিযান চালিয়েছে। এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। এখন পর্যন্ত এই দুর্যোগে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩০০ জনে। গোটা বিশ্ব যখন যুদ্ধ, শরণার্থী সংকট ও গভীর অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত তখন আরও একটি মানবিক বিপর্যয় দেখছে।