‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে দ্বিতীয় দফায় বুধবার মালয়েশিয়ায় যাচ্ছেন ১০০ কর্মী। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে এদিন রাত ৮টায় ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে তাদের। ফ্যাক্টরি, ফার্নিচার, বিমানবন্দরে কার্গো লোডার’সহ বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করবেন তারা।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের সংগঠন রুহুল আমিন স্বপন জানান, পর্যায়ক্রমে মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়ার হার আরও বাড়বে। এর আগে গত ৯ মার্চ রাতে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে প্রথম ধাপে ৯৮ জন কর্মী যাওয়ার মধ্য দিয়ে বড় পরিসরে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজারের দ্বার উন্মোচন হয়। এদিন ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম শামসুন নাহার ও জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে বায়রা সভাপতি বেনজির আহমেদ ও মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপনসহ জনশক্তি কর্মসংস্থানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থেকে প্রথম ফ্লাইটে যাওয়া কর্মীদের বিদায় জানান। কর্মীদের সঙ্গে বিএমইটি ও রিক্রুটিং এজেন্সির ৬ কর্মকর্তাকেও পাঠানো হয় ওই ফ্লাইটে।
প্রথম ফ্লাইটে যাওয়া ৯৮ বাংলাদেশি কর্মীকে বহনকারী বিমানের ফ্লাইটটি ১০ মার্চ মালেশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম শেষে তাদের বুঝে নেন রিফ্লেকস কেয়ার এমএসডিএন বিএইচডির নিয়োগকর্তারা। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম এবং দূতাবাসের শ্রম শাখার কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও ইমিগ্রেশন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মালয়েশিয়ার এ শ্রমবাজার নিয়ে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে দেশটির শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেও ‘সিন্ডিকেট’-এর অভিযোগ তুলে ম্যান পাওয়ার ব্যবসায়ীদের একটি অংশ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। যদিও শুরু থেকেই প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী বলে আসছেন, মালয়েশিয়াতে ক্লিন ইমেজের রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠাবে।
সর্বশেষ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) প্রবাসী কল্যাণ ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি জানিয়েছেন, মালয়েশিয়াতে কোনো সিন্ডিকেট নেই। ১০-১২ রিক্রুটিং এজেন্সি সেখানে কাজ করছে। তবে সিন্ডিকেটের অনেক চেষ্টা হয়েছে। আমি করতে দিইনি।
সিন্ডিকেটের অভিযোগ অস্বীকার করে প্রবাসী কল্যাণ সচিব বেগম শামসুন নাহার বলেন, বর্তমানে দেশে ১০৮১টি রিক্রুটিং এজেন্সি আছে। কোনো দেশেই সব এজেন্সি একসাথে লোক পাঠায় না। সৌদি আরব, কাতারসহ অন্যান্য দেশে ২০-৫০টি এজেন্সি লোক পাঠাচ্ছে। কোন দেশে কয়টি এজেন্সি শ্রমিক পাঠাবে তা নির্ভর করে চাহিদা সংগ্রহের ওপরে। আর চাহিদা সংগ্রহ এজেন্সিগুলোর কাজ।
তিনি বলেন, উভয় দেশের প্রাইভেট সেক্টরের যোগসাজসে ‘জিটুজি’ (সরকার হতে সরকার) পদ্ধতি মুখ থুবরে পড়লো। এরপর দুই দেশের প্রাইভেট সেক্টরকে যুক্ত করে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি হলো। আমরা মালয়েশিয়াকে আমাদের বৈধ লাইসেন্সের তালিকা পাঠিয়েছি। তারা সেখান থেকে ১০টি এজেন্সিকে বাছাই করেছে। মানবপাচারসহ বিভিন্ন কারণে তারা অল্প সংখ্যক এজেন্সিকে বাছাই করেছে। এমওইউতে উল্লেখ আছে, আমরা রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠাবো আর সেখান থেকে বাছাই করবে মালয়েশিয়া। তাই-ই করেছে তারা। প্রথম ফ্লাইটে ৯৮ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছে। আরও অনেকগুলো ডিমান্ড আছে। পরবর্তীতে এসব কর্মী যাবে। ১০ এজেন্সির সাথে পরবর্তীতে আরও ২০টি এজেন্সি কাজ করবে।
উল্লেখ্য, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নানা অনিয়মের ফলে ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ার কলিং ভিসা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১২ সাল থেকে শুধুমাত্র সরকারিভাবে (জিটুজি) দেশটিতে কর্মী পাঠাতে উভয় দেশের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন হয়। তবে জিটুজি পদ্ধতি ফ্লপ করার পর বিদায়ী ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর সুযোগ রেখে মালয়েশিয়ার সঙ্গে ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। কিন্তু চুক্তির পরদিনই মালয়েশিয়া সরকার বিদেশি কর্মী নেওয়া বন্ধ ঘোষণা করে। কয়েক মাস আগে সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। এর পরই জিটুজি প্লাস চুক্তির আলোকে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় অবশেষে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।