ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাঙালী কন্ঠঃ বাংলাদেশের সাথে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে, উত্তর রাখাইন অঞ্চলে সহায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সাথে নিজেদের আবাসস্থলে ফেরত যেতে উৎসাহিত করতে জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমারকে আহবান জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের চলতি ৪২তম অধিবেশনে এ আহ্বান জানানো হয়।

একই সাথে, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ সরকারে ভূয়সী প্রশংসা করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাগণ ফেরত যাওয়া পর্যন্ত এ গুরূভার বহনে বাংলাদেশের সাথে অংশীদার হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যহত রাখার আহবান জানানো হয়।

বাংলাদেশের উদ্যোগে, ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবৃন্দ যৌথভাবে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমা রের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি শীর্ষক এ প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করেন। নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপোষ-আলোচনা শেষে জাতিসঙ্ঘের প্রায় একশত সদস্যরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট এ প্রস্তাবটি মানবাধিকার পরিষদে পেশ করা হয়।

প্রস্তাবটির ওপর অনুষ্ঠিত আলোচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ করে জাতিসঙ্ঘের আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার বিষয়টি সক্রিয় আলোচনায় রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।

গৃহীত এ প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সকল প্রকার নির্মম নির্যাতন, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের মানবাধিকার লংঘন সংশ্লিষ্ট সকল আন্তর্জাতিক বিধান ও আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়া তথা জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রতি গুরূত্বারোপ করা হয়।

এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরূদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বর্তমানে চলমান প্রক্রিয়ার পাশাপাশি গাম্বিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ নেতৃত্বে গঠিত ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার ‘এড-হক মিনিস্টেরিয়াল কমিটি’ কর্তৃক আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) শরণাপন্ন হওয়ার উদ্যোগকে বিশ্ব পরিসরে উৎসাহিত করা হয়েছে।

সদ্য কার্যক্রম সম্পন্ন করা মিয়ানমার বিষয়ক ‘নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন’- এর প্রতিবেদনসমূহ জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে এবং, সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে, জাতিসঙ্ঘের সংশ্লিষ্ট সকল অঙ্গ-সংগঠনের বিবেচনার্থে প্রেরণ করারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সকল প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এরূপ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

অধিবেশনে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শামীম আহসান বলেন, ‘মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য সীমানা উম্মুক্ত করে দেন। তবে, দু’ বছর পেরিয়ে গেলেও মিয়ানমার অদ্যাবধি উত্তর রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথে বর্তমান প্রস্তাবটি একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।’

প্রস্তাবটি বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উত্থাপিত হলে চীনের প্রতিনিধি প্রস্তাবটির ওপর ভোট গ্রহণের দাবী জানান। প্রস্তাবটি ৩৭-২ ভোটে গৃহীত হয়। ৭টি দেশের প্রতিনিধি ভোটদানে বিরত থাকেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

আপডেট টাইম : ০১:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাঙালী কন্ঠঃ বাংলাদেশের সাথে সম্পাদিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি অনুসারে, উত্তর রাখাইন অঞ্চলে সহায়ক পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানের সাথে নিজেদের আবাসস্থলে ফেরত যেতে উৎসাহিত করতে জাতিসঙ্ঘ মিয়ানমারকে আহবান জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের চলতি ৪২তম অধিবেশনে এ আহ্বান জানানো হয়।

একই সাথে, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ সরকারে ভূয়সী প্রশংসা করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাগণ ফেরত যাওয়া পর্যন্ত এ গুরূভার বহনে বাংলাদেশের সাথে অংশীদার হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যহত রাখার আহবান জানানো হয়।

বাংলাদেশের উদ্যোগে, ইসলামিক সম্মেলন সংস্থা (ওআইসি) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সকল সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিবৃন্দ যৌথভাবে ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমা রের অন্যান্য সংখ্যালঘুদের মানবাধিকার পরিস্থিতি শীর্ষক এ প্রস্তাবটি চূড়ান্ত করেন। নিবিড় ও সুদীর্ঘ আপোষ-আলোচনা শেষে জাতিসঙ্ঘের প্রায় একশত সদস্যরাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট এ প্রস্তাবটি মানবাধিকার পরিষদে পেশ করা হয়।

প্রস্তাবটির ওপর অনুষ্ঠিত আলোচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ করে জাতিসঙ্ঘের আলোচ্যসূচিতে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সুরক্ষার বিষয়টি সক্রিয় আলোচনায় রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন।

গৃহীত এ প্রস্তাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যৌন অপরাধসহ সকল প্রকার নির্মম নির্যাতন, মানবতা বিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের মানবাধিকার লংঘন সংশ্লিষ্ট সকল আন্তর্জাতিক বিধান ও আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়া তথা জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার আওতায় আনার জন্য তদন্ত প্রক্রিয়া জোরদার করার প্রতি গুরূত্বারোপ করা হয়।

এর মাধ্যমে প্রকারান্তরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরূদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বর্তমানে চলমান প্রক্রিয়ার পাশাপাশি গাম্বিয়া ও বাংলাদেশের যৌথ নেতৃত্বে গঠিত ইসলামিক সম্মেলন সংস্থার ‘এড-হক মিনিস্টেরিয়াল কমিটি’ কর্তৃক আন্তর্জাতিক আদালতের (আইসিজে) শরণাপন্ন হওয়ার উদ্যোগকে বিশ্ব পরিসরে উৎসাহিত করা হয়েছে।

সদ্য কার্যক্রম সম্পন্ন করা মিয়ানমার বিষয়ক ‘নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধানী মিশন’- এর প্রতিবেদনসমূহ জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে এবং, সাধারণ পরিষদের মাধ্যমে, জাতিসঙ্ঘের সংশ্লিষ্ট সকল অঙ্গ-সংগঠনের বিবেচনার্থে প্রেরণ করারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবটিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চলমান সকল প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে এরূপ পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এখতিয়ারের কথা পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

অধিবেশনে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শামীম আহসান বলেন, ‘মানবতার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্মম নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের জন্য সীমানা উম্মুক্ত করে দেন। তবে, দু’ বছর পেরিয়ে গেলেও মিয়ানমার অদ্যাবধি উত্তর রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পক্ষে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার পথে বর্তমান প্রস্তাবটি একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।’

প্রস্তাবটি বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে উত্থাপিত হলে চীনের প্রতিনিধি প্রস্তাবটির ওপর ভোট গ্রহণের দাবী জানান। প্রস্তাবটি ৩৭-২ ভোটে গৃহীত হয়। ৭টি দেশের প্রতিনিধি ভোটদানে বিরত থাকেন।