বাংলাদেশের শারমিন আক্তারসহ ১৩ জন নারীকে ‘ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করেন মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প। মায়ের বিরুদ্ধে মামলা করে নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে প্রশংসিত ঝালকাঠির শারমিন আক্তার এ সম্মাননা পান। বুধবার বেলা ১১টায় মেলানিয়া ১৩ নারীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন। এ সময় রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি থমাস এ শ্যানন উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, লৈঙ্গিক সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে জোরালো ভূমিকা ও সাহসী পদক্ষেপের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৭ সাল থেকে এ পুরস্কার দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর। এ পর্যন্ত বিশ্বের ৬০টি দেশের সাহসী শতাধিক নারীকে এ সম্মাননা দিয়েছে তারা। চলতি বছর শারমিনের সঙ্গে আরও যে ১২ নারীকে সাহসিকতার স্বীকৃতির পুরস্কার দেয়া হচ্ছে, তারা হলেন- বতসোয়ানার মালিবোগো মালেফে, কলম্বিয়ার নাতালিয়া পনসে দে লিয়ো, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোর রেবেকা কাবুঘো, ইরাকের জান্নাত আল গাজি, নাইজারের আইশাতু ওসমান ইসাকা, পাপুয়া নিউগিনির ভেরোনিকা সিমোগুন, পেরুর সিন্ডি আর্লেট কন্ট্রেরাস বৌতিস্তা, শ্রীলংকার সন্ধ্যা একনেলিগোদা, সিরিয়ার ক্যারোলিন তাহান ফাচাখ, তুরস্কের সাদেত ওজকান, ভিয়েতনামের নগুয়েন গক নু কুইন এবং ইয়েমেনের ফাদিয়া নাজিব থাবেত।
গত বছর বাংলাদেশের আইনজীবী সারা হোসেন এ সম্মাননা পেয়েছিলেন। ২০১৫ সালে পেয়েছিলেন বাংলাদেশী সাংবাদিক নাদিয়া শারমীন। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধের সময় পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দলের কর্মীদের হামলায় আহত হন নাদিয়া। সে সময় একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদক ছিলেন তিনি।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে জোরপূর্বক বিয়ে ঠেকিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার কিশোরীদের জন্য দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করায় এ বছর শারমিন আক্তারকে ‘সাহসী নারী’ পুরস্কার দেয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের আগস্টের ওই ঘটনায় শারমিন তার মা এবং ৩২ বছর বয়সী ‘হবু স্বামী’ প্রতিবেশী স্বপন খলিফার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। শারমিনের মা গোলনূর মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য চাপ দিয়েও রাজি করাতে পারেনি বলে গণমাধ্যমের খবর। এরপর মিথ্যা কথা বলে খুলনায় নিয়ে গিয়ে স্বপনের সঙ্গে মেয়েকে একঘরে আটকে রাখারও অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। পরদিন সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে গেলেও ধরা পড়ে যান শারমিন। পরে তাকে ঝালকাঠির বাড়িতে আটকে রাখা হয়। ১৬ আগস্ট শারমিন ফের বাড়ি থেকে পালিয়ে এক সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে থানায় মামলা করেন। পুলিশ গোলনূর ও স্বপনকে গ্রেফতার করার পর আদালত শারমিনকে দাদির জিম্মায় দেন। সম্মাননা পাওয়া সবাইকে ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রামের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল তারা আটলান্টা, ডেনভার, মিনিয়াপোলিস, নিউইয়র্ক, পেনসাকোলা, পিটসবার্গ, পোর্টল্যান্ডসহ বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করবেন। পরে ওই নারীরা লস অ্যাঞ্জেলসে তাদের ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানাবেন।