ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন আর নেই

উপমহাদেশের কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

জাকির হোসেন দীর্ঘদিন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানা গেছে। আজ সোমবার জাকির হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে।

তার ব্যবস্থাপক নির্মলা বাচানী বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ফুসফুসজনিত অসুস্থতার জন্য দুই সপ্তাহ আগে জাকির হোসেনকে সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

এর আগে গতকাল রবিবার রাতে জাকির হোসেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শোক জানান। টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, এনডিটিভিসহ আরও বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যমও খবরটি প্রচার করে। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শোক প্রকাশের কথাও জানানো হয়।

পরে আমির আউলিয়া নামের একজন এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, তিনি জাকির হোসেনের ভাতিজা। জাকির হোসেন মারা যাননি। চাচার শারীরিক সুস্থতার জন্য তারা সবার কাছে দোয়া চান।

এর পরপর ওস্তাদ জাকির হোসেনের বোন খুরশিদ আউলিয়া পিটিআইকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমার ভাই গুরুতর অসুস্থ। আমরা ভারত ও বিশ্বব্যাপী তার সব ভক্ত-অনুরাগীর প্রতি তার সুস্থতার জন্য দোয়া করতে অনুরোধ করছি।’

১৯৫১ সালের ৯ মার্চ ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন জাকির হোসেন। তার বাবা ওস্তাদ আল্লারাখা খানও একজন প্রখ্যাত তবলাবাদক ছিলেন। জাকির হোসেন শৈশব থেকেই তবলা বাজানোয় দক্ষতা অর্জন করেন। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণের মতো একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পান। এ ছাড়া তিনবার গ্রামি পেয়েছিলেন তিনি। ভারতের কোনো শিল্পীর ঝুলিতে আর এমন সম্মান আসেনি।

ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সংগীতের একজন পুরোধা হিসেবে বিবেচনা করা হয় জাকির হোসেনকে। ১৯ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। পণ্ডিত রবিশঙ্করের সাহচর্যে ১৯৭০ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংগীতানুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। নিউইয়র্কে থাকা অবস্থায় ইংলিশ গিটারিস্ট জন ম্যাকলাফলিনকে নিয়ে ব্যান্ডদল ‘শক্তি’ প্রতিষ্ঠা করেন জাকির হোসেন। ভারত ও ভারতের বাইরে অনেক বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও মিউজিক গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি-যার মধ্যে রয়েছেন প্রখ্যাত আইরিশ গায়ক ভ্যান মরিসন ও ব্রিটিশ মিউজিক গ্রুপ ‘লন্ডন স্ট্রিং কোয়ার্টলেট’।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’–এর অন্যতম সদস্য ছিলেন ওস্তাদ জাকির হোসেনের বাবা আল্লারাখা খান। স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওস্তাদ আল্লারাখাকে সম্মাননা জানাতে ২০১১ সালে প্রথম আলো ও ট্রান্সকম গ্রুপ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় আসেন জাকির হোসেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন আর নেই

আপডেট টাইম : ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

উপমহাদেশের কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। গতকাল রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।

জাকির হোসেন দীর্ঘদিন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছিলেন বলে জানা গেছে। আজ সোমবার জাকির হোসেনের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করা হয়েছে।

তার ব্যবস্থাপক নির্মলা বাচানী বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেছেন, ফুসফুসজনিত অসুস্থতার জন্য দুই সপ্তাহ আগে জাকির হোসেনকে সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।

এর আগে গতকাল রবিবার রাতে জাকির হোসেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শোক জানান। টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, এনডিটিভিসহ আরও বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যমও খবরটি প্রচার করে। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শোক প্রকাশের কথাও জানানো হয়।

পরে আমির আউলিয়া নামের একজন এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, তিনি জাকির হোসেনের ভাতিজা। জাকির হোসেন মারা যাননি। চাচার শারীরিক সুস্থতার জন্য তারা সবার কাছে দোয়া চান।

এর পরপর ওস্তাদ জাকির হোসেনের বোন খুরশিদ আউলিয়া পিটিআইকে বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমার ভাই গুরুতর অসুস্থ। আমরা ভারত ও বিশ্বব্যাপী তার সব ভক্ত-অনুরাগীর প্রতি তার সুস্থতার জন্য দোয়া করতে অনুরোধ করছি।’

১৯৫১ সালের ৯ মার্চ ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন জাকির হোসেন। তার বাবা ওস্তাদ আল্লারাখা খানও একজন প্রখ্যাত তবলাবাদক ছিলেন। জাকির হোসেন শৈশব থেকেই তবলা বাজানোয় দক্ষতা অর্জন করেন। পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, পদ্মবিভূষণের মতো একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৯ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান পান। এ ছাড়া তিনবার গ্রামি পেয়েছিলেন তিনি। ভারতের কোনো শিল্পীর ঝুলিতে আর এমন সম্মান আসেনি।

ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সংগীতের একজন পুরোধা হিসেবে বিবেচনা করা হয় জাকির হোসেনকে। ১৯ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। পণ্ডিত রবিশঙ্করের সাহচর্যে ১৯৭০ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংগীতানুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি। নিউইয়র্কে থাকা অবস্থায় ইংলিশ গিটারিস্ট জন ম্যাকলাফলিনকে নিয়ে ব্যান্ডদল ‘শক্তি’ প্রতিষ্ঠা করেন জাকির হোসেন। ভারত ও ভারতের বাইরে অনেক বিখ্যাত সংগীত শিল্পী ও মিউজিক গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি-যার মধ্যে রয়েছেন প্রখ্যাত আইরিশ গায়ক ভ্যান মরিসন ও ব্রিটিশ মিউজিক গ্রুপ ‘লন্ডন স্ট্রিং কোয়ার্টলেট’।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’–এর অন্যতম সদস্য ছিলেন ওস্তাদ জাকির হোসেনের বাবা আল্লারাখা খান। স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওস্তাদ আল্লারাখাকে সম্মাননা জানাতে ২০১১ সালে প্রথম আলো ও ট্রান্সকম গ্রুপ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় আসেন জাকির হোসেন।