যৌন সম্পর্কের ঘটনা ধামাচাপা দিতে পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগের মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাজা হওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন একজন বিচারক। আগামী ১০ জানুয়ারি এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।
তবে নিউইয়র্কের বিচারক জুয়ান মার্চান ট্রাম্পকে কারাদণ্ড বা জরিমানা না দিয়ে ‘শর্তহীন খালাস’ দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি তার আদেশে লিখেছেন যে ট্রাম্প সশরীরে কিংবা ভার্চুয়ালি শুনানিতে অংশ নিতে পারবেন।
আজ শনিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, দুই সপ্তাহের মধ্যেই দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে ট্রাম্পের।
সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টে ডোনাল্ড ট্রাম্প বিচারকের ওই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘অবৈধ রাজনৈতিক হামলা’ এবং ওই মামলাকে একটি ‘সাজানো পরিহাস’ বলে বর্ণনা করেছেন।
পর্ণ তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার দেওয়ার বিষয়টি জালিয়াতির মাধ্যমে নথিতে গোপন রাখার বিষয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ৩৪টি অভিযোগ আনা হয়েছিল।
২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের শেষ দিকে ট্রাম্পের আইনজীবী মাইকেল কোহেন ওই অর্থ ড্যানিয়েলসের হাতে তুলে দিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে এ মামলায় নির্দোষ দাবি করেছেন। তার দাবি, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণায় ক্ষতি করার জন্য এই মামলা করা হয়েছে।
বিবিসি বলছে, গতকাল শুক্রবার দণ্ড দেওয়ার আদেশ দেওয়ায় বিচার মার্চানের সমালোচনা করেছেন ট্রাম্পের মুখপাত্র স্টিভেন চিয়াং। তিনি বলছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবশ্যই প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা এবং প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে এবং উইচ হান্টিংর নামে তাকে বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোনো দণ্ড হওয়া উচিত নয় এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার লড়াই অব্যাহত রাখবেন।’
এ মামলার বিরুদ্ধে তার শেষ আবেদনে ট্রাম্প বলেছিলেন যে এটি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের সময় তার মাথা ব্যাথার কারণ হতে পারে এবং দায়িত্ব পালনে তার সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বিচারক মার্চান বলেছেন, ট্রাম্পের উদ্বেগের বিষয়গুলোতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ তিনি পেয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তার হাতে যেসব বিকল্প আছে তার একটি হলো- দণ্ডাদেশ বাস্তবায়ন ২০২৯ সালে তার হোয়াইট ছাড়া পর্যন্ত বিলম্বিত করা কিংবা দণ্ড দিলেও তার সঙ্গে জেলে থাকার বিষয়টি থাকবে না।
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প সুপ্রিম কোর্টের আদেশে প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন প্রাতিষ্ঠানিক কাজের জন্য তিনি দায়মুক্ত থাকবেন বলে যে আদেশ দিয়েছিল, সেটিকে আদালতের সামনে যুক্তি হিসেবে নিয়ে আসার চেষ্টা করে সফল হননি। গত জুলাই সুপ্রিম কোর্ট ওই আদেশ দিয়েছিল।
গত মাসে ট্রাম্পের ঘুষের মামলা খারিজ চেয়ে যে আবেদন করা হয়েছিল তা খারিজ করে দিয়েছিলেন বিচারক মার্চান। এর ফলে ট্রাম্প এখন হোয়াইট হাউজের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে দণ্ড পেতে যাচ্ছেন। তবে দণ্ড পাওয়ার পর তিনি আপিলের উদ্যোগ নিতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রে নথি জালিয়াতির মামলায় চার বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান আছে কিন্তু নূন্যতম দণ্ড বা কারাবাস অবশ্য পালনীয় নয়। তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প জেলে যাবেন না বলেই মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। এর কারণ হিসেবে তারা ব্যাখ্যা করেছেন, ট্রাম্প একজন প্রবীণ ব্যক্তি এবং ‘ফার্স্ট টাইম অফেন্ডার’ অর্থাৎ প্রথমবার কোনো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাই তাকে কারাগারে পাঠানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আরও তিনটি রাজ্যে অভিযোগ ও ফেডারেল ক্রিমিনাল মামলা আছে। এর একটি গোপনীয় নথি বিষয় আর দুটি হলো ২০২০ সালের নির্বাচনী ফল সংক্রান্ত। এর আগে গত ২৬ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে দণ্ড দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জেতায় বিচারক তা পিছিয়ে দিয়েছিলেন।