বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ আসামের ‘বিদেশি নাগরিক’ ইস্যুতে ফের হুংকার ছাড়লেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতা ও সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বললেন, সব অনুপ্রবেশকারীকে তাড়ানো হবে। আসামের প্রকাশিত নাগরিক তালিকা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে রোববার রাজ্যের গোহাটিতে একদলীয় সমাবেশে এ হুংকার ছাড়েন তিনি।
বলেন, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে বিভিন্নজন বিভিন্ন রকম প্রশ্ন তুলেছেন। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ভারত সরকার একজন অনুপ্রবেশকারীকেও এ দেশে থাকতে দেবে না।
এটা আমাদের প্রতিশ্রুতি। আরও বলেছেন, জম্মু-কাশ্মীরের মতো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর বিশেষ মর্যাদা ও সুবিধা বাতিল করা হবে না। সংবিধান থেকে কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা বাতিলের ন্যায় সংবিধানের ৩৭১ ধারা বাতিলের কোনো উদ্দেশ্য নেই তার সরকারের।
৩৭০ এবং ৩৭১ ধারার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জম্মু ও কাশ্মীরের মতো উত্তর-পূর্বেও পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ নিয়ে অমিত শাহ বলেন, সংসদে আমি স্পষ্টভাবে বলেছি, এটা হবে না এবং আমি উত্তর-পূর্বের ৮ মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আজ আবারও বলছি, ৩৭১ ধারায় হাত দেবে না সরকার। খবর এনডিটিভির।
এদিকে আসামের নির্মাণাধীন বিশালাকার বন্দিশিবিরের নির্মাণ শ্রমিকরাই আটকের আশঙ্কায় সময় পার করছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। নাগরিক তালিকা প্রকাশের পর রাজ্যটির নদীতীরবর্তী এলাকায় সাতটি বড় ফুটবল মাঠের সমান জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে অবৈধ অভিবাসীদের আটক কেন্দ্র। অন্তত তিন হাজার লোকের ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই আটক কেন্দ্রটিতে স্কুল, হাসপাতাল, বিনোদন কেন্দ্র এবং নিরাপত্তা কর্মীদের আবাসনের ব্যবস্থা থাকছে। রয়টার্স আটক কেন্দ্রের নির্মাণ শ্রমিক ও ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে এর বিশদ একটি চিত্র পেয়েছে।
এই শ্রমিকদেরই কেউ কেউ জানিয়েছেন, গত সপ্তাহে যে বিতর্কিত নাগরিকপঞ্জি আসাম সরকার প্রকাশ করেছে, তাতে নাম নেই তাদের। এর মানে- নিজেদের নির্মাণ করা আটক কেন্দ্রেই বন্দি হতে যাচ্ছেন নির্মাণ শ্রমিকরা।
আটক কেন্দ্রের কাছাকাছি এক গ্রামের বাসিন্দা শেফালি হাজং নামে এক উপজাতি নারী জানান, নাগরিকপঞ্জিতে তার নাম আসেনি। ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে যে ২০ লাখ লোককে জন্মসনদ ও জমির মালিকানার কাগজপত্র দাখিল করতে হবে সেই তালিকায় তিনিও রয়েছেন।
কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হলে তাদের আশ্রয় হবে এই আটক কেন্দ্রে। হংজং উপজাতির শেফালি জানান, পরিস্থিতির কারণে তিনি বেশ উদ্বেগে আছেন। আটক কেন্দ্রের নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কর্মরত শেফালি বলেন, আমার তো পেট ভরার প্রয়োজন।
শেফালি তার প্রকৃত বয়স কত জানেন না। তবে তার ধারণা, ২৬ বছর হবে। কেন নাগরিকপঞ্জিতে তার নাম আসেনি, তা-ও জানেন না এই নারী। নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন শেফালির মা মালতি হাজং। তিনি বলেন, আমাদের জন্মসনদ নেই।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গোয়ালপারা শহরের কাছে নির্মিতব্য আটক কেন্দ্রটির মতো অন্তত ১০টি আটক কেন্দ্র রাজ্যে নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। দাতব্য সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে বলেছে, আসাম এমন একটি সংকটের প্রান্তে রয়েছে যেটি শুধু বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব ও স্বাধীনতা হারানোর দিকে নিয়ে যাবে না, বরং তাদের মৌলিক অধিকারও মুছে ফেলবে, যার প্রভাব পড়তে যাচ্ছে আগামী প্রজন্মের ওপর।