ঢাকা , বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নকল ও নিম্নমানের মোবাইল ফোনসেটে বাজার সয়লাব

দেশের বাজার নিম্নমান, অবৈধ ও নকল মোবাইল ফোনসেটে ছেয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় ফোন কোম্পানিগুলো লোভনীয় অফার ঘোষণা করে এসব ফোনসেট বিক্রি করছে। আর কোম্পানিগুলোর চটকদার অফারে এসব মোবাইল ফোনসেট ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ফোনসেটের পাইকারি বাজার রাজধানীর মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা ও বসুন্ধরা সিটি। এসব মার্কেট থেকে প্রতিদিন নকল ও নিম্নমানের মোবাইল ফোনসেট পাইকারি সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। স্টেডিয়াম মার্কেটের নিচেও নকল ও নিম্নমানের মোবাইল ফোনসেট বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে।

নকল ও কভার পাল্টানো এসব নিম্নমানের মোবাইল ফোনসেট দেখে কারো বোঝার উপায় নেই যে, কোনটি আসল আর কোনটি নকল। চোরাই পথের নকল সেটগুলো দেশে আসা মাত্রই স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় কভার পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা হয় নামি-দামি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনসেট হিসেবে।

রাজধানীর মোতালেব প্লাজার এক ব্যবসায়ী জানান, নিম্নমানের ও নকল ফোনে অন্যান্য ফোনের চেয়ে অনেক বেশি লাভ। আবার ক্রেতারাও তুলনামূলক কম দামে এসব ফোন পাচ্ছেন। ফলে বাজারে এসব মোবাইল ফোনের কদরও বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা দামের এসব নকল ফোনসেট বিদেশ থেকে আমদানি করে তা দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায়। অথচ ফোনগুলো বেশি দিন চলে না। মোবাইল ফোনসেটগুলোর গায়ে যে কনফিগারেশন লেখা থাকে, তারও কোনো ঠিক নেই। ফলে এসব ফোনসেট বাজারে আসায় ক্রেতারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর গুলিস্তান আন্ডারপাসে মোবাইল ফোন মেরামত করতে আসা সুজন বলেন, দুই মাস আগে ফার্মগেটের একটি শোরুম থেকে নকিয়া এন ৮ মডেলের একটি চায়না মোবাইল ফোনসেট কিনি। কিছুদিনের মধ্যেই মোবাইল ফোনটিতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তিন মাসের মাথায় সার্ভিসিং সেন্টারে যান তিনি। তবে সার্ভিসিং সেন্টার থেকে তাকে জানানো হয়, এই মোবাইল ফোনসেটের সমস্যার কোনো সমাধান নেই। ঠিক করতে গেলে এটি আর নাও চালু হতে পারে। ফলে এটি মেরামত করার থেকে না করাই ভালো।

মোবাইল ফোনসেট মেরামতকারী জানান, চায়না কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় স্কিন টাচ মোবাইলগুলোয়। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সেটগুলোতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া অন্যান্য মোবাইল ফোনসেট অত্যাধিক গরম ও স্পিকার নষ্ট হয়।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশনের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোনসেট বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকৃত এসব ফোনসেট আসছে চীন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে। আর প্রতি মাসে যেসব ফোনসেট বিক্রি হয় এর মধ্যে ২ হাজার টাকা মূল্যের ফোনসেট বিক্রি হয় প্রায় ৬০ শতাংশ, ২ থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যের ৪০ এবং ৫ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হয় প্রায় ১০ শতাংশ। দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন-জীবিকা ও যোগাযোগ রক্ষায় বেশি ব্যবহার হয় ২ হাজার টাকা মূল্যের ফোনসেট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন ও ভারত থেকে মানহীন আমদানিকৃত ফোনসেটগুলো নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এসব ফোনসেটে ইআইআর (ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার) নম্বর থাকে না। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, নিম্নমানের এসব ফোনসেটের মধ্যে থাকা রেডিয়েশনের গতি স্বাভাবিক সেটের তুলনায় ৪-৫ গুণ বেশি, যা মানবদেহে ক্যান্সারসহ জটিল রোগ সৃষ্টি করে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, অবৈধ ও নকল মোবাইল ফোনসেট প্রতিরোধে একটি আইএমইআই ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একটি সার্ভারে সফটওয়্যারের মাধ্যমে আইএমইআই ডাটাবেজ নিয়ন্ত্রণ করবে বিটিআরসি। এটা তৈরি হলে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে গেলে আইএমইআই নম্বর নিয়ে গ্রাহকরা তাদের হ্যান্ডসেটটি নকল কি না তা যাচাই করতে পারবেন। এছাড়া মোবাইলের এসএমএসের মাধ্যমেও এটা যাচাই করা যাবে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

নকল ও নিম্নমানের মোবাইল ফোনসেটে বাজার সয়লাব

আপডেট টাইম : ০৪:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ অগাস্ট ২০১৬

দেশের বাজার নিম্নমান, অবৈধ ও নকল মোবাইল ফোনসেটে ছেয়ে গেছে। বিভিন্ন সময় ফোন কোম্পানিগুলো লোভনীয় অফার ঘোষণা করে এসব ফোনসেট বিক্রি করছে। আর কোম্পানিগুলোর চটকদার অফারে এসব মোবাইল ফোনসেট ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ফোনসেটের পাইকারি বাজার রাজধানীর মোতালেব প্লাজা, ইস্টার্ন প্লাজা, ইস্টার্ন মল্লিকা ও বসুন্ধরা সিটি। এসব মার্কেট থেকে প্রতিদিন নকল ও নিম্নমানের মোবাইল ফোনসেট পাইকারি সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। স্টেডিয়াম মার্কেটের নিচেও নকল ও নিম্নমানের মোবাইল ফোনসেট বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে।

নকল ও কভার পাল্টানো এসব নিম্নমানের মোবাইল ফোনসেট দেখে কারো বোঝার উপায় নেই যে, কোনটি আসল আর কোনটি নকল। চোরাই পথের নকল সেটগুলো দেশে আসা মাত্রই স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় কভার পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা হয় নামি-দামি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনসেট হিসেবে।

রাজধানীর মোতালেব প্লাজার এক ব্যবসায়ী জানান, নিম্নমানের ও নকল ফোনে অন্যান্য ফোনের চেয়ে অনেক বেশি লাভ। আবার ক্রেতারাও তুলনামূলক কম দামে এসব ফোন পাচ্ছেন। ফলে বাজারে এসব মোবাইল ফোনের কদরও বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকা দামের এসব নকল ফোনসেট বিদেশ থেকে আমদানি করে তা দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায়। অথচ ফোনগুলো বেশি দিন চলে না। মোবাইল ফোনসেটগুলোর গায়ে যে কনফিগারেশন লেখা থাকে, তারও কোনো ঠিক নেই। ফলে এসব ফোনসেট বাজারে আসায় ক্রেতারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে অসাধু ব্যবসায়ীদের দাপটে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর গুলিস্তান আন্ডারপাসে মোবাইল ফোন মেরামত করতে আসা সুজন বলেন, দুই মাস আগে ফার্মগেটের একটি শোরুম থেকে নকিয়া এন ৮ মডেলের একটি চায়না মোবাইল ফোনসেট কিনি। কিছুদিনের মধ্যেই মোবাইল ফোনটিতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তিন মাসের মাথায় সার্ভিসিং সেন্টারে যান তিনি। তবে সার্ভিসিং সেন্টার থেকে তাকে জানানো হয়, এই মোবাইল ফোনসেটের সমস্যার কোনো সমাধান নেই। ঠিক করতে গেলে এটি আর নাও চালু হতে পারে। ফলে এটি মেরামত করার থেকে না করাই ভালো।

মোবাইল ফোনসেট মেরামতকারী জানান, চায়না কোম্পানির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় স্কিন টাচ মোবাইলগুলোয়। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই সেটগুলোতে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া অন্যান্য মোবাইল ফোনসেট অত্যাধিক গরম ও স্পিকার নষ্ট হয়।

বাংলাদেশ মোবাইল ফোন বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশনের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দেশে প্রতি বছর প্রায় ১ কোটিরও বেশি মোবাইল ফোনসেট বিক্রি হচ্ছে। আমদানিকৃত এসব ফোনসেট আসছে চীন, ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে। আর প্রতি মাসে যেসব ফোনসেট বিক্রি হয় এর মধ্যে ২ হাজার টাকা মূল্যের ফোনসেট বিক্রি হয় প্রায় ৬০ শতাংশ, ২ থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যের ৪০ এবং ৫ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হয় প্রায় ১০ শতাংশ। দেশের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন-জীবিকা ও যোগাযোগ রক্ষায় বেশি ব্যবহার হয় ২ হাজার টাকা মূল্যের ফোনসেট।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন ও ভারত থেকে মানহীন আমদানিকৃত ফোনসেটগুলো নিরাপত্তার জন্যও মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এসব ফোনসেটে ইআইআর (ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিফিকেশন রেজিস্টার) নম্বর থাকে না। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের পরীক্ষায় দেখা গেছে, নিম্নমানের এসব ফোনসেটের মধ্যে থাকা রেডিয়েশনের গতি স্বাভাবিক সেটের তুলনায় ৪-৫ গুণ বেশি, যা মানবদেহে ক্যান্সারসহ জটিল রোগ সৃষ্টি করে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেছেন, অবৈধ ও নকল মোবাইল ফোনসেট প্রতিরোধে একটি আইএমইআই ডাটাবেজ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একটি সার্ভারে সফটওয়্যারের মাধ্যমে আইএমইআই ডাটাবেজ নিয়ন্ত্রণ করবে বিটিআরসি। এটা তৈরি হলে বিটিআরসির ওয়েবসাইটে গেলে আইএমইআই নম্বর নিয়ে গ্রাহকরা তাদের হ্যান্ডসেটটি নকল কি না তা যাচাই করতে পারবেন। এছাড়া মোবাইলের এসএমএসের মাধ্যমেও এটা যাচাই করা যাবে।