ঢাকা , শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই ও তার বাসা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একসময় বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। কালের বিবর্তনে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা আগের মতো চোখে পড়ে না। মূলত অসাধারণ বুননে বাসা বানানোর জন্যই বাবুই পাখিকে ‘শিল্পী পাখি’ বলা হয়। বাবুই পাখি খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ কিংবা কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমত্কার বাসা তৈরি করে। দৃষ্টিনন্দন ও মজবুত এই বাসাগুলো ঝড়ো বাতাসেও টিকে থাকে। শক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন। বাবুই পাখি সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু, রেণু প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে। ফসলি জমিতে অতিরিক্ত বিষ প্রয়োগের কারণে বাবুই পাখির খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিপণন পাখির তালিকায় উঠে এসেছে বাবুইয়ের নাম। অসচেতনতা, পাখি শিকার এবং গাছ কেটে ফেলাও পাখি কমে যাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করছে। বাবুই চষড়পবরফধব গোত্রের অন্তর্গত একদল প্যাসারাইন পাখি। খুব সুন্দর বাসা বোনে বলে এরা ‘তাঁতি পাখি’ (ডবধাবত্ ইরত্ফ) নামেও পরিচিত। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর। কয়েক প্রজাতির বাবুই একাধিক কক্ষবিশিষ্ট বাসা তৈরি করতে পারে। তুতির সাথে এরা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এরা মূলত বীজভোজী পাখি। সেজন্য এদের ঠোঁটের আকৃতি বীজ ভক্ষণের উপযোগী; চোঙাকার আর গোড়ায় মোটা। এরা বেশ দলবদ্ধ প্রাণী আর কলোনি করে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। বেশিরভাগ বাবুই প্রজাতির পুরুষ সদস্য বেশ উজ্জ্বল রঙের হয়। বাংলাদেশে তিন ধরনের বাবুই রয়েছে। দেশি বাবুই (চষড়পবঁং ঢ়যরষরঢ়ঢ়রহঁং), দাগি বাবুই (চষড়পবঁং সধহুধত্) ও বাংলা বাবুই (চষড়পবঁং নবহমধষবহংরং)। বাবুই পাখির বাসা উল্টানো কলসির মতো দেখতে। বাসা বানানোর জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সরায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে পালিশ করে গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা হয়। অন্যদিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ হয়। কথিত আছে : রাতে বাসায় আলো জ্বালার জন্য বাবুই জোনাকি ধরে এনে গোঁজে। বিশিষ্ট পাখি পর্যবেক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ তুগলক আজাদ জানান, বাবুই পাখি আগের মতো দেখা যায় না। একদম কমে গেছে। পরিবেশবিদ আবুল হায়াত কাওসার জানান, বাবুই পাখি দেখা যায় না। তবে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে বাবুই পাখির বাসা শোপিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। নিউমার্কেটে গেলেই দেখা যাবে শোপিস হিসেবে বাবুই পাখির বাসা বিক্রি করার দৃশ্য। হয়তো একটি দুষ্টচক্র বাসা ভেঙে এনে বিক্রি করছে। তিনি জানান, শিকার এবং অকারণে গাছ কেটে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা সচেতন হলে প্রকৃতির কোনো কিছুই আর হারিয়ে যাবে না।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই ও তার বাসা

আপডেট টাইম : ০৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একসময় বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা যেত। কালের বিবর্তনে বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা আগের মতো চোখে পড়ে না। মূলত অসাধারণ বুননে বাসা বানানোর জন্যই বাবুই পাখিকে ‘শিল্পী পাখি’ বলা হয়। বাবুই পাখি খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচিপাতা, ঝাউ কিংবা কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমত্কার বাসা তৈরি করে। দৃষ্টিনন্দন ও মজবুত এই বাসাগুলো ঝড়ো বাতাসেও টিকে থাকে। শক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন। বাবুই পাখি সাধারণত বিভিন্ন ফসলের বীজ, ধান, পোকা, ঘাস, ছোট উদ্ভিদের পাতা, ফুলের মধু, রেণু প্রভৃতি খেয়ে জীবনধারণ করে। ফসলি জমিতে অতিরিক্ত বিষ প্রয়োগের কারণে বাবুই পাখির খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিপণন পাখির তালিকায় উঠে এসেছে বাবুইয়ের নাম। অসচেতনতা, পাখি শিকার এবং গাছ কেটে ফেলাও পাখি কমে যাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে কাজ করছে। বাবুই চষড়পবরফধব গোত্রের অন্তর্গত একদল প্যাসারাইন পাখি। খুব সুন্দর বাসা বোনে বলে এরা ‘তাঁতি পাখি’ (ডবধাবত্ ইরত্ফ) নামেও পরিচিত। এদের বাসার গঠন বেশ জটিল আর আকৃতি খুব সুন্দর। কয়েক প্রজাতির বাবুই একাধিক কক্ষবিশিষ্ট বাসা তৈরি করতে পারে। তুতির সাথে এরা ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। এরা মূলত বীজভোজী পাখি। সেজন্য এদের ঠোঁটের আকৃতি বীজ ভক্ষণের উপযোগী; চোঙাকার আর গোড়ায় মোটা। এরা বেশ দলবদ্ধ প্রাণী আর কলোনি করে জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত। বেশিরভাগ বাবুই প্রজাতির পুরুষ সদস্য বেশ উজ্জ্বল রঙের হয়। বাংলাদেশে তিন ধরনের বাবুই রয়েছে। দেশি বাবুই (চষড়পবঁং ঢ়যরষরঢ়ঢ়রহঁং), দাগি বাবুই (চষড়পবঁং সধহুধত্) ও বাংলা বাবুই (চষড়পবঁং নবহমধষবহংরং)। বাবুই পাখির বাসা উল্টানো কলসির মতো দেখতে। বাসা বানানোর জন্য বাবুই খুব পরিশ্রম করে। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ সরায়। যত্ন করে পেট দিয়ে ঘষে পালিশ করে গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে একদিক বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা হয়। অন্যদিকটি লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ হয়। কথিত আছে : রাতে বাসায় আলো জ্বালার জন্য বাবুই জোনাকি ধরে এনে গোঁজে। বিশিষ্ট পাখি পর্যবেক্ষক ও পাখি বিশেষজ্ঞ তুগলক আজাদ জানান, বাবুই পাখি আগের মতো দেখা যায় না। একদম কমে গেছে। পরিবেশবিদ আবুল হায়াত কাওসার জানান, বাবুই পাখি দেখা যায় না। তবে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে বাবুই পাখির বাসা শোপিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। নিউমার্কেটে গেলেই দেখা যাবে শোপিস হিসেবে বাবুই পাখির বাসা বিক্রি করার দৃশ্য। হয়তো একটি দুষ্টচক্র বাসা ভেঙে এনে বিক্রি করছে। তিনি জানান, শিকার এবং অকারণে গাছ কেটে ফেলা থেকে বিরত থাকতে হবে। আমরা সচেতন হলে প্রকৃতির কোনো কিছুই আর হারিয়ে যাবে না।