ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিষ দিয়ে একসঙ্গে হাজার জনকে হত্যা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খুব বেশিদিন আগের কথা নয় ১৯৭৮ সালের ১৮ নভেম্বর। দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াল দিন হিসেবে মনে করা হয়, এই দিনের ঘটনা যেকোনো সিনেমাকেও হার মানাবে। দিনটিতে প্রায় এক হাজার মানুষ একসাথে প্রাণ দিয়েছিলেন। এখনো যুক্তরাষ্ট্রবাসী দিনটিকে তাদের ইতিহাসের কালো অধ্যায় হিসেবে মনে করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৫৬ সালে একজন ধর্মযাজক একক প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্যে গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন। সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় পরে গির্জাটি স্থানান্তর করা হয়। আর সে সময়ে বর্ণপ্রথা ধারনাটি খুব বেশি প্রচলিত ছিলো। যাজক গির্জায় সাদা কালো বর্ণের সকলের আসাকেই সাধুবাদ জানান।

লাশ পড়ে আছেলাশ পড়ে আছে

সকলে নির্দ্বিধায় গির্জায় আসতে পেরে যাজকের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে যায়, এবং তিনি ক্রমেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে যান। এর ফলশ্রুতিতে তিনি সবাইকে নিয়ে আলাদা একটি সমাজ গড়ার কথা ভাবেন, যেখানে সাদা কালো কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। তার চিন্তামতো ১৯৭৩ সালে জোন্স গায়ানার কিছু খাস জমি ইজারা নিয়ে সেখানে তার পরিকল্পিত সমাজ গড়েন। ইজারা নেয়া জায়গার জংগল কেটে পরিষ্কার করে সেখানে সমাজ গড়েন। কিন্তু সেখানে প্রাণের চাঞ্চল্য আর সুযোগ সুবিধা বলতে কিছুই ছিলোনা।

সাইনাইডসহ সিরিঞ্জ ও লাশগুলো পড়ে আছেসাইনাইডসহ সিরিঞ্জ ও লাশগুলো পড়ে আছে

এক সময় কিছু লোকজন পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে সমাজ থেকে বের হয়ে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু স্বভাবতই তিনি সেখান থেকে কাউকে বের হতে দিতে চাইতেন না। গ্রামের বাইরে সশস্ত্র রক্ষীবাহিনী থাকায় সাধারণের পক্ষে তা সম্ভবও ছিলোনা। বাইরের দুনিয়াকে দেখানোর জন্য যাজক সব করতে রাজি ছিলেন। আর পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে যখনই দেশটির কংগ্রেস ম্যানসহ কয়েকজনের প্রতিনিধি দল জোন্স টাউনে এলেন তখন প্রথম অবস্থায় সব স্বাভাবিক দেখালেও রাতে একটি চিরকুটে পাওয়া গেলো তাদের নাম যারা এই সমাজ থেকে বের হতে চায়।

উপর থেকে জোন্স টাউনের সেদিনের দৃশ্য
উপর থেকে জোন্স টাউনের সেদিনের দৃশ্য

পরদিন ফিরে যাওয়ার সময় যখন তাদের সাথে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো তখন তাদের মনে হতে থাকে নিশ্চয়ই আরো কেউ ফিরে যেতে চায়। জানতে চাওয়া মাত্রই আরো কিছু মানুষ তাদের সঙ্গী হয়। তা দেখে পেছন থেকে সশস্ত্র গার্ডরা আক্রমণ করে বসে। ভয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে প্রতিনিধিদল। আর পেছনে পড়ে থাকে হতভাগ্য মানুষের দল। এয়ারপোর্টে এসেও রক্ষা পায়নি কেউ কেউ। সশস্ত্র গার্ডরা সেখানেও তাদের উপর হামলা চালায়। এতে সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় যাজক বুঝতে পারেন এর জন্য তাকে খেসারত দিতে হবে। তাই তিনি সকল গ্রামবাসীকে বোঝান সেনাবাহিনী এসে তাদের ও তাদের সন্তানদের উপর নির্যাতন করবে। তাই তাদের সকলের সামনে সায়ানাইড রাখা হয়।

এই সিরিঞ্জগুলোতে সাইনাইড ভরে শিশুদের শরীরে বিষ দেয়া হয়এই সিরিঞ্জগুলোতে সাইনাইড ভরে শিশুদের শরীরে বিষ দেয়া হয়।

শিশুদের সিরিঞ্জের মাধ্যমে সায়ানাইড দেয়া হলে সাথে সাথেই মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বড়দের বাধ্য করা হয় বিষ পান করতে। সবমিলিয়ে ২৭৬ জন শিশুসহ মোট ৯১৪ জন লোকের মৃত্যু হয় এই বিষপানে। তবে যাজক জোন্স নিজে বিষ পান করেননি, তার মাথায় গুলি পাওয়া গিয়েছিল। তবে গুলিটি তিনি আত্মহত্যার জন্য করেছিলেন নাকি অন্য কারোর দ্বারা ঘটেছিলো তা জানা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের মর্মান্তিক এই ঘটনাটি আজো মানুষের উপর মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ব্যবসা করার কথা মনে করিয়ে দেয়। যারা ক্ষমতার লোভে অন্যের জীবন কেড়ে নিতে দ্বিধাবোধ করেনা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

বিষ দিয়ে একসঙ্গে হাজার জনকে হত্যা

আপডেট টাইম : ১১:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ জুন ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ খুব বেশিদিন আগের কথা নয় ১৯৭৮ সালের ১৮ নভেম্বর। দিনটিকে যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াল দিন হিসেবে মনে করা হয়, এই দিনের ঘটনা যেকোনো সিনেমাকেও হার মানাবে। দিনটিতে প্রায় এক হাজার মানুষ একসাথে প্রাণ দিয়েছিলেন। এখনো যুক্তরাষ্ট্রবাসী দিনটিকে তাদের ইতিহাসের কালো অধ্যায় হিসেবে মনে করেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৫৬ সালে একজন ধর্মযাজক একক প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজ্যে গির্জা প্রতিষ্ঠা করেন। সুনাম ছড়িয়ে পড়ায় পরে গির্জাটি স্থানান্তর করা হয়। আর সে সময়ে বর্ণপ্রথা ধারনাটি খুব বেশি প্রচলিত ছিলো। যাজক গির্জায় সাদা কালো বর্ণের সকলের আসাকেই সাধুবাদ জানান।

লাশ পড়ে আছেলাশ পড়ে আছে

সকলে নির্দ্বিধায় গির্জায় আসতে পেরে যাজকের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে যায়, এবং তিনি ক্রমেই ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে যান। এর ফলশ্রুতিতে তিনি সবাইকে নিয়ে আলাদা একটি সমাজ গড়ার কথা ভাবেন, যেখানে সাদা কালো কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। তার চিন্তামতো ১৯৭৩ সালে জোন্স গায়ানার কিছু খাস জমি ইজারা নিয়ে সেখানে তার পরিকল্পিত সমাজ গড়েন। ইজারা নেয়া জায়গার জংগল কেটে পরিষ্কার করে সেখানে সমাজ গড়েন। কিন্তু সেখানে প্রাণের চাঞ্চল্য আর সুযোগ সুবিধা বলতে কিছুই ছিলোনা।

সাইনাইডসহ সিরিঞ্জ ও লাশগুলো পড়ে আছেসাইনাইডসহ সিরিঞ্জ ও লাশগুলো পড়ে আছে

এক সময় কিছু লোকজন পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে সমাজ থেকে বের হয়ে যেতে চাইছিলেন। কিন্তু স্বভাবতই তিনি সেখান থেকে কাউকে বের হতে দিতে চাইতেন না। গ্রামের বাইরে সশস্ত্র রক্ষীবাহিনী থাকায় সাধারণের পক্ষে তা সম্ভবও ছিলোনা। বাইরের দুনিয়াকে দেখানোর জন্য যাজক সব করতে রাজি ছিলেন। আর পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে যখনই দেশটির কংগ্রেস ম্যানসহ কয়েকজনের প্রতিনিধি দল জোন্স টাউনে এলেন তখন প্রথম অবস্থায় সব স্বাভাবিক দেখালেও রাতে একটি চিরকুটে পাওয়া গেলো তাদের নাম যারা এই সমাজ থেকে বের হতে চায়।

উপর থেকে জোন্স টাউনের সেদিনের দৃশ্য
উপর থেকে জোন্স টাউনের সেদিনের দৃশ্য

পরদিন ফিরে যাওয়ার সময় যখন তাদের সাথে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো তখন তাদের মনে হতে থাকে নিশ্চয়ই আরো কেউ ফিরে যেতে চায়। জানতে চাওয়া মাত্রই আরো কিছু মানুষ তাদের সঙ্গী হয়। তা দেখে পেছন থেকে সশস্ত্র গার্ডরা আক্রমণ করে বসে। ভয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে প্রতিনিধিদল। আর পেছনে পড়ে থাকে হতভাগ্য মানুষের দল। এয়ারপোর্টে এসেও রক্ষা পায়নি কেউ কেউ। সশস্ত্র গার্ডরা সেখানেও তাদের উপর হামলা চালায়। এতে সেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় যাজক বুঝতে পারেন এর জন্য তাকে খেসারত দিতে হবে। তাই তিনি সকল গ্রামবাসীকে বোঝান সেনাবাহিনী এসে তাদের ও তাদের সন্তানদের উপর নির্যাতন করবে। তাই তাদের সকলের সামনে সায়ানাইড রাখা হয়।

এই সিরিঞ্জগুলোতে সাইনাইড ভরে শিশুদের শরীরে বিষ দেয়া হয়এই সিরিঞ্জগুলোতে সাইনাইড ভরে শিশুদের শরীরে বিষ দেয়া হয়।

শিশুদের সিরিঞ্জের মাধ্যমে সায়ানাইড দেয়া হলে সাথে সাথেই মুত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। বড়দের বাধ্য করা হয় বিষ পান করতে। সবমিলিয়ে ২৭৬ জন শিশুসহ মোট ৯১৪ জন লোকের মৃত্যু হয় এই বিষপানে। তবে যাজক জোন্স নিজে বিষ পান করেননি, তার মাথায় গুলি পাওয়া গিয়েছিল। তবে গুলিটি তিনি আত্মহত্যার জন্য করেছিলেন নাকি অন্য কারোর দ্বারা ঘটেছিলো তা জানা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের মর্মান্তিক এই ঘটনাটি আজো মানুষের উপর মানুষের বিশ্বাস নিয়ে ব্যবসা করার কথা মনে করিয়ে দেয়। যারা ক্ষমতার লোভে অন্যের জীবন কেড়ে নিতে দ্বিধাবোধ করেনা।