ঢাকা , রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের জীবন্ত ফল জাদুঘর, দেখেছেন কি

বামন গাছগুলোতে ঝুলে আছে অসংখ্য কাঁচা-পাকা ফল। নিশ্চয়ই জিভেয় জল চলে আসছে! কণ্টকাকীর্ণ অমসৃণ কান্ড, আগুন রাঙা চোখ এবং ড্রাগনের অবয়বের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। গায়ে খাঁচ কাটা, ক্যাকটাস পরিবারের একটি ফল ড্রাগন! শুনেই মনে হচ্ছে আরব্য রূপকথার সেই দানবের কথা। না এবার সেটি দানব হিসেবে নয়, খ্যাত হবে ফল হিসেবে। শুধু ড্রাগন নয়, এমন হাজার প্রজাতির আকর্ষণীয় বিরল দেশী-বিদেশী ফলের গাছ ঠায় দাড়িয়ে আছে খোলা আকাশের নিচে এক ফালি জমিন কামড়ে।

বলছি বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ফল জাদুঘরের কথা। ফলমূলে দেশকে আরও প্রসিদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) জার্মপ্লাজম সেন্টার। এ জাদুঘরে রয়েছে ১৮১ প্রজাতির প্রায় ১০ হাজার ২৭৩ টি (দশ হাজার দুই শত তেয়াত্তর) জাতের মাতৃগাছ যার মধ্যে ১ হাজার ১৯৫টি দেশি-বিদেশি বিরল জাতের। কোনোটি মৌসুমী, দোফলা-ত্রিফলা আবার কোনোটি বারমাসী। আবার কোনোটি দেশী, রয়েছে বিদেশী আর উদ্ভাবিতও। সময়ের সঙ্গে ফল ঝরে পড়ে আবার নতুন ফলে ভরে যায় গাছ। তাই এটি একেবারেই জীবন্ত।

কাউফল

কাউফল

জাদুঘরের দেশি বিদেশি বিরল গাছের মধ্যে রয়েছে ২২০ রকমের আম, ৫৭ রকমের পেয়ারা, ২৩ রকমের লিচু, ৪৭ রকমের লেবু , ৯৪ রকমের কাঁঠাল, ৬৭ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় অপ্রধান ফল, ৬৮ প্রজাতির ফলদ ঔষধি গাছ, ২৭ প্রজাতির ভেষজ গাছ ও ৫৮ প্রজাতির বিদেশি ফল। আর এ সবই সেন্টারটিকে পরিণত করেছে ফলের স্বর্গরাজ্যে। প্রতি বছর বিভিন্ন সময়ে দেশি বিদেশি অনেক গবেষক ও দর্শনার্থী আসেন এ ফল জাদুঘর দেখতে। শুধু দেখতেই নয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চারা সংগ্রহ করতে আসে হাজার হাজার মানুষ। দেশের বাইরেও এর প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।

যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ফলদ বৃক্ষের সংগ্রহশালা। ফলের জিন সংরক্ষণ, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র, ফলের হিডেন নিউট্রেশন সংরক্ষণ এবং কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বাকৃবির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহযোগিতায় সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কো-অপারেশনের অর্থায়নে ১৯৯১ সালে এক একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এই ফল জাদুঘর। তখন এর নাম ছিল ফ্রুট ট্রি স্টাডিজ। পরবর্তীকালে এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ফল গাছ উন্নয়ন প্রকল্প। যার বর্তমান নাম ফলদ বৃক্ষের জার্মপ্লাজম সেন্টার এবং এর বর্তমান আয়তন ৩২ একর।

লটকন

লটকন

১৯৯১ সাল থেকে মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত গবেষকদের নিরলস গবেষণার ফলে সর্বমোট ৮০ টির অধিক বিভিন্ন প্রজাতির ফলের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এ জাতগুলোর মধ্যে আমের ২১টি, পেয়ারার ১০টি, কুলের ৩টি, লেবুর ৩টি, জাম্বুরার ৫টি, কামরাঙ্গা ৩টি, বাউ-কুলের ৩টি, লিচু ৩টি, জলপাই, আমলকী, ডুমুর, মালটা, অরবরই ও কাজুবাদামের ১টি করে জাত, জামরুলের ৩টি ও সফেদার ৩টি, বাউ রসুন ৩টি, বাউ গাজর ২টি, বাউ মিষ্টি কুমড়া ২টি জাত, বাউ মাল্টা-১, বাউ স্ট্রবেরি-১ এবং বাউ ডুমুর-১ প্রভৃতি। এছাড়া বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা), বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল), বাউ ড্রাগন ফল-৩, বাউ লঙ্গা-১ (বোগর), বাউ তেঁতুল-১ (মিষ্টি), বাউ তেঁতুল-২ (টক), বাউ কদবেল-১ (বনলতা), বাউ পেয়ারা-৭ (বীজশূন্য গোল), বাউ পেয়ারা-৮ (বীজশূন্য ডিম্বাকার) উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া বিভিন্ন বিদেশি ফল বা ফলের গাছ রয়েছে জাদুঘরে। যেমন- প্যাসন ফল, জাবাটিকাবা, শানতোল, রাম্বুটান, লংগান, ম্যাঙ্গোষ্টিন, সীডলেস লিচু, ডুরিয়ান, এভোকেডো ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করছেন ভবিষ্যতে এ দেশে নতুন জাত হিসেবে মুক্তি দিতে। এ সেন্টারে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় মূলত পিএইচডি ও এমএস পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ করে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী এ সেন্টারে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

কুল গাছ

কুল গাছ

জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম.এ. রহিম। তার গবেষণা সহযোগী হিসেবে রয়েছেন কৃষিবিদ ড. মো. শামছুল আলম মিঠু। এ পর্যন্ত গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ এ সেন্টারটি জাতীয়ভাবে সরকারি ও বেসরকারি পুরস্কার পর্যায়ে পেয়েছে অনেক। যার মধ্যে ২০০৩ সালে বৃক্ষ রোপণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পুরষ্কার। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সংবর্ধনার মাধ্যমে পুরস্কৃত করেছে ৩০ বারেরও বেশি।

এছাড়া জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম.এ. রহিম পেয়েছেন সুদূর আমেরিকা থেকে নরমেন আরনক বোরলক পুরস্কার। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জার্মপ্লাজম সেন্টার লাভ করেছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪১৯ প্রভৃতি। ড. এম. এ. রহিম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান ও ক্ষুদ্র আয়তনের তীব্র জনবহুল দেশ। এই দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দৈনন্দিন ফলের পুষ্টি ঘাটতি মেটানো এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এ জার্মপ্লাজম সেন্টারটি।

পারসিমন

পারসিমন

ফল বলতে আমরা সাধারণত আম, জাম, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, কাঁঠাল, আনারস, আপেল, আঙ্গুর, আর লেবু এবং কমলা লেবুকে বুঝি । কেননা, চোখের সামনে এদের প্রায় সব সময় দেখি এবং হাত বাড়ালেই পাই। তবে এর বাইরেও রয়ে গেছে জানা অজানা নানা ফল। যা শুধু বনে বা স্থলে নয়, পানিতেও জন্মে। পানিফল, মাখনা, পদ্ম ফল এগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ১৩০ রকম ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। যার মধ্যে প্রায় ৭০টি ফল অপ্রচলিত বা স্বল্প পরিচিত।

এর মধ্যে রয়েছে টাকিটুকি, পানকি, চুনকি, লুকলুকি, উড়িআম, বৈঁচি, চামফল, নোয়াল, রক্তগোটা, মাখনা, আমঝুম, মুড়মুড়ি, তিনকরা, সাতকরা, তৈকর, আদা জামির, ডেফল, কাউফল, বনলেবু, চালতা ইত্যাদি ফল নানা কারণে এবং আমাদের অসচেতনতায় দেশ থেকে বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আশার বিষয় হচ্ছে, বিলুপ্ত প্রায় এসব ফলগুলো এ জার্মপ্লাজম সেন্টার বন, জঙ্গল, পাহাড়, বসত-ভিটাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সন্ধানের মাধ্যমে সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে এবং এর ওপর নিবিড় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বাংলাদেশের জীবন্ত ফল জাদুঘর, দেখেছেন কি

আপডেট টাইম : ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৯

বামন গাছগুলোতে ঝুলে আছে অসংখ্য কাঁচা-পাকা ফল। নিশ্চয়ই জিভেয় জল চলে আসছে! কণ্টকাকীর্ণ অমসৃণ কান্ড, আগুন রাঙা চোখ এবং ড্রাগনের অবয়বের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। গায়ে খাঁচ কাটা, ক্যাকটাস পরিবারের একটি ফল ড্রাগন! শুনেই মনে হচ্ছে আরব্য রূপকথার সেই দানবের কথা। না এবার সেটি দানব হিসেবে নয়, খ্যাত হবে ফল হিসেবে। শুধু ড্রাগন নয়, এমন হাজার প্রজাতির আকর্ষণীয় বিরল দেশী-বিদেশী ফলের গাছ ঠায় দাড়িয়ে আছে খোলা আকাশের নিচে এক ফালি জমিন কামড়ে।

বলছি বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ফল জাদুঘরের কথা। ফলমূলে দেশকে আরও প্রসিদ্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) জার্মপ্লাজম সেন্টার। এ জাদুঘরে রয়েছে ১৮১ প্রজাতির প্রায় ১০ হাজার ২৭৩ টি (দশ হাজার দুই শত তেয়াত্তর) জাতের মাতৃগাছ যার মধ্যে ১ হাজার ১৯৫টি দেশি-বিদেশি বিরল জাতের। কোনোটি মৌসুমী, দোফলা-ত্রিফলা আবার কোনোটি বারমাসী। আবার কোনোটি দেশী, রয়েছে বিদেশী আর উদ্ভাবিতও। সময়ের সঙ্গে ফল ঝরে পড়ে আবার নতুন ফলে ভরে যায় গাছ। তাই এটি একেবারেই জীবন্ত।

কাউফল

কাউফল

জাদুঘরের দেশি বিদেশি বিরল গাছের মধ্যে রয়েছে ২২০ রকমের আম, ৫৭ রকমের পেয়ারা, ২৩ রকমের লিচু, ৪৭ রকমের লেবু , ৯৪ রকমের কাঁঠাল, ৬৭ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় অপ্রধান ফল, ৬৮ প্রজাতির ফলদ ঔষধি গাছ, ২৭ প্রজাতির ভেষজ গাছ ও ৫৮ প্রজাতির বিদেশি ফল। আর এ সবই সেন্টারটিকে পরিণত করেছে ফলের স্বর্গরাজ্যে। প্রতি বছর বিভিন্ন সময়ে দেশি বিদেশি অনেক গবেষক ও দর্শনার্থী আসেন এ ফল জাদুঘর দেখতে। শুধু দেখতেই নয় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চারা সংগ্রহ করতে আসে হাজার হাজার মানুষ। দেশের বাইরেও এর প্রসার বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।

যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় বাংলাদেশ তথা এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ এবং পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ফলদ বৃক্ষের সংগ্রহশালা। ফলের জিন সংরক্ষণ, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র, ফলের হিডেন নিউট্রেশন সংরক্ষণ এবং কৃষকদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বাকৃবির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহযোগিতায় সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কো-অপারেশনের অর্থায়নে ১৯৯১ সালে এক একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এই ফল জাদুঘর। তখন এর নাম ছিল ফ্রুট ট্রি স্টাডিজ। পরবর্তীকালে এ প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ফল গাছ উন্নয়ন প্রকল্প। যার বর্তমান নাম ফলদ বৃক্ষের জার্মপ্লাজম সেন্টার এবং এর বর্তমান আয়তন ৩২ একর।

লটকন

লটকন

১৯৯১ সাল থেকে মেধাবী ও বুদ্ধিদীপ্ত গবেষকদের নিরলস গবেষণার ফলে সর্বমোট ৮০ টির অধিক বিভিন্ন প্রজাতির ফলের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এ জাতগুলোর মধ্যে আমের ২১টি, পেয়ারার ১০টি, কুলের ৩টি, লেবুর ৩টি, জাম্বুরার ৫টি, কামরাঙ্গা ৩টি, বাউ-কুলের ৩টি, লিচু ৩টি, জলপাই, আমলকী, ডুমুর, মালটা, অরবরই ও কাজুবাদামের ১টি করে জাত, জামরুলের ৩টি ও সফেদার ৩টি, বাউ রসুন ৩টি, বাউ গাজর ২টি, বাউ মিষ্টি কুমড়া ২টি জাত, বাউ মাল্টা-১, বাউ স্ট্রবেরি-১ এবং বাউ ডুমুর-১ প্রভৃতি। এছাড়া বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা), বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল), বাউ ড্রাগন ফল-৩, বাউ লঙ্গা-১ (বোগর), বাউ তেঁতুল-১ (মিষ্টি), বাউ তেঁতুল-২ (টক), বাউ কদবেল-১ (বনলতা), বাউ পেয়ারা-৭ (বীজশূন্য গোল), বাউ পেয়ারা-৮ (বীজশূন্য ডিম্বাকার) উল্লেখযোগ্য।

এছাড়া বিভিন্ন বিদেশি ফল বা ফলের গাছ রয়েছে জাদুঘরে। যেমন- প্যাসন ফল, জাবাটিকাবা, শানতোল, রাম্বুটান, লংগান, ম্যাঙ্গোষ্টিন, সীডলেস লিচু, ডুরিয়ান, এভোকেডো ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করছেন ভবিষ্যতে এ দেশে নতুন জাত হিসেবে মুক্তি দিতে। এ সেন্টারে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয় মূলত পিএইচডি ও এমএস পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী দ্বারা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী ছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ করে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের ছাত্র-ছাত্রী এ সেন্টারে গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

কুল গাছ

কুল গাছ

জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক হিসেবে আছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. এম.এ. রহিম। তার গবেষণা সহযোগী হিসেবে রয়েছেন কৃষিবিদ ড. মো. শামছুল আলম মিঠু। এ পর্যন্ত গবেষণার স্বীকৃতি স্বরূপ এ সেন্টারটি জাতীয়ভাবে সরকারি ও বেসরকারি পুরস্কার পর্যায়ে পেয়েছে অনেক। যার মধ্যে ২০০৩ সালে বৃক্ষ রোপণে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রথম পুরষ্কার। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সংবর্ধনার মাধ্যমে পুরস্কৃত করেছে ৩০ বারেরও বেশি।

এছাড়া জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এম.এ. রহিম পেয়েছেন সুদূর আমেরিকা থেকে নরমেন আরনক বোরলক পুরস্কার। কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জার্মপ্লাজম সেন্টার লাভ করেছে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪১৯ প্রভৃতি। ড. এম. এ. রহিম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান ও ক্ষুদ্র আয়তনের তীব্র জনবহুল দেশ। এই দেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষের দৈনন্দিন ফলের পুষ্টি ঘাটতি মেটানো এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষুদ্র প্রয়াস হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে এ জার্মপ্লাজম সেন্টারটি।

পারসিমন

পারসিমন

ফল বলতে আমরা সাধারণত আম, জাম, পেয়ারা, কলা, পেঁপে, কাঁঠাল, আনারস, আপেল, আঙ্গুর, আর লেবু এবং কমলা লেবুকে বুঝি । কেননা, চোখের সামনে এদের প্রায় সব সময় দেখি এবং হাত বাড়ালেই পাই। তবে এর বাইরেও রয়ে গেছে জানা অজানা নানা ফল। যা শুধু বনে বা স্থলে নয়, পানিতেও জন্মে। পানিফল, মাখনা, পদ্ম ফল এগুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়া বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ১৩০ রকম ফলের সন্ধান পাওয়া গেছে। যার মধ্যে প্রায় ৭০টি ফল অপ্রচলিত বা স্বল্প পরিচিত।

এর মধ্যে রয়েছে টাকিটুকি, পানকি, চুনকি, লুকলুকি, উড়িআম, বৈঁচি, চামফল, নোয়াল, রক্তগোটা, মাখনা, আমঝুম, মুড়মুড়ি, তিনকরা, সাতকরা, তৈকর, আদা জামির, ডেফল, কাউফল, বনলেবু, চালতা ইত্যাদি ফল নানা কারণে এবং আমাদের অসচেতনতায় দেশ থেকে বিলুপ্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। আশার বিষয় হচ্ছে, বিলুপ্ত প্রায় এসব ফলগুলো এ জার্মপ্লাজম সেন্টার বন, জঙ্গল, পাহাড়, বসত-ভিটাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সন্ধানের মাধ্যমে সংগ্রহ ও রক্ষণাবেক্ষণ করছে এবং এর ওপর নিবিড় গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।