বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উত্তর বঙ্গের প্রধান নদীগুলোর পানি বেড়ে যাওয়ায় আট জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও জামালপুর জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ বাড়ছে। টানা কয়েক দিন বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সঙ্কট। গতকাল পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাসে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মা নদীর পানি আজও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি আজ কমতে পারে। ৯টি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে ধরলা বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার, তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে ১৪ সেন্টিমিটার, যমুনা চিলমারীতে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঘাঘট, ধলেশ্বরী, সুরমা, কুশিয়ারা ও কংস নদীরও একই অবস্থা। আমাদের বগুড়া অফিস জানায়, ভারি বর্ষণের সঙ্গে উজান থেকে আসা ঢলে যমুনা নদীতে পানি আরও বেড়েছে। এছাড়া বাঙালি নদীর পানি বিপদসীমার নিচে থাকলেও পানি বাড়ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার্তদের দুর্ভোগ বাড়ছে। পাশাপাশি বাঁধে আশ্রিতরা নতুন করে শঙ্কায় পড়েছে। এ পর্যন্ত তিন উপজেলার ৭৫টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়েছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার চরাঞ্চলে কোনো কোনো এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। উপজেলার হাটশেরপুর ইউনিয়নের চকরতিনাথ ও করমজাপাড়া চরে পানির তোড়ে দেড় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো তাদের বসতঘর ও মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। বগুড়া ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস জানায়, জেলার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার যমুনা তীরবর্তী ১৪টি ইউনিয়নের ১৩ হাজারেরও বেশি পরিবারের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার। যমুনায় পানি বাড়ার কারণে বাঁধ সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল ও চর এলাকার নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার্ত লোকজন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিদিনই এ সংখ্যা বাড়ছে। বাঁধে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোকে তাদের গবাদি পশু নিয়ে গাদাগাদি করে বসবাস করতে দেখা গেছে। দেখা দিয়েছে খাবার পানির সঙ্কট। তিনটি উপজেলার ৮২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করার কারণে তা বন্ধ রয়েছে। পাট, ধান, সবজি ও বীজতলাসহ ৩ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে ক্ষতি হয়েছে। কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, তিস্তা ও দুধকুমারসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বেড়েছে। বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, নাগেশ্বরী ও সদর উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের চর ও দ্বীপচরসহ আড়াই শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এসব এলাকার প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার মানুষ। বানভাসী মানুষজন ঘরবাড়ি ছেড়ে বাঁধ ও উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। টানা পাঁচ দিন ধরে বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকা এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সঙ্কট। হাতে কোনো কাজ না থাকায় খেয়ে না খেয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করছে বানভাসীরা। বন্ধ রয়েছে জেলার দেড় শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর গ্রামের শেফালী বেগম জানান, চার দিন হয় বাড়িতে পানি উঠেছে। খুব স্রোত পড়ছে। দুটি বাচ্চা নিয়ে সারাদিন মানুষের নৌকায় নৌকায় ঘুরছি। সারাদিন রান্নাও হয়নিই, খাইওনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, বন্যার পানিতে জেলায় ৭৭১ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে উঠতি আউশ ৭৪ হেক্টর, বীজতলা ১১৩ হেক্টর, সবজি ৩৪৪ হেক্টর, পাট ২শ’ হেক্টর এবং আখ ৪২ হেক্টর। জামালপুর প্রতিনিধি জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জামালপুরের পাঁচ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার নতুন নতুন এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় পাঁচটি উপজেলায় ১১২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কলেজ, ৯টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ছয়টি মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা কৃষি অফিস জানায়, বন্যার পানিতে ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৫৫ হেক্টর জমির আমন বীজতলা, ২৯৫ হেক্টর জমির সবজি ও ৬০ হেক্টর জমির আউশ ধান তলিয়ে গেছে। পীরগাছা সংবাদদাতা জানান, রংপুরের পীরগাছায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীতে তিস্তা নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যা দেখা দেয় নদীর তীরবর্তী নীলফামারীর ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে। এসব ইউনিয়নে অন্তত অর্ধলক্ষাধিক পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়ায় দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব এবং নানা সঙ্কটের। তিস্তা ছাড়াও পানি বেড়েছে জেলার ওপর দিয়ে বহমান বুড়ি তিস্তা, চারালকাটা, বুড়িখোড়া, যমুনেশ্বরী, খড়খড়িয়া, দেওনাই, খেড়ুয়া, শালকি, নাউতারা, কুমলাই, ধুম, ধাইজান ও চিকলি নদীতে। গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, দ্রুত পানি বৃদ্ধির কারণে নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সদর উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ৭০টি চরের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। অনেক চরে বাড়িঘর অর্ধেক ডুবে যাওয়ায় সেখানকার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে উঁচু স্থান ও ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্গত এলাকার ৭৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হওয়ায় তা বন্ধ হয়ে গেছে। ঘাঘট নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ফলে জেলা শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে ইতোমধ্যে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য-সঙ্কট। রান্না করে খাবার ব্যবস্থা না থাকায় অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটছে বানভাসিদের। এখন পর্যন্ত এসব এলাকায় সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণসামগ্রী পৌঁছেনি। লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, উজানের ঢল আর ভারি বর্ষণের কারণে লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার তিস্তা নদীবেষ্টিত ১৮টি চর এলাকায় অব্যাহত রয়েছে বন্যা। এছাড়াও জেলার ছোট-বড় অন্য ১০টি নদ-নদীর পানিও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ওই চর গ্রামগুলোর অন্তত অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। খাদ্যাভাব এবং নানা সঙ্কটে পড়েছে এসব মানুষ। টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গতকাল থেকেই গোপালপুর উপজেলার নলিন পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভূঞাপুর উপজেলার ফকিরপাড়া, চরবেতুয়া, চরবামনহাটা, চরকুতুবপুর গ্রামে নতুন করে যমুনার পানি প্রবেশ করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। অন্যদিকে পানি বাড়তে থাকায় উপজেলার গাবসারা, গোবিন্দাসী ও অর্জুনা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এদিকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চারটি, ভূঞাপুর উপজেলার তিনটি, কালিহাতী উপজেলার একটি ও গোপালপুর উপজেলার একটি ইউনিয়নে যমুনা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়া নাগরপুরে ধলেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের আগদিঘুলিয়া এলাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ শত শত বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে গতকাল সকাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে স্বাভাবিকভাবে ফেরি চলাচল করতে পারছে না। পারাপারে দ্বিগুণ সময় লাগছে। পাটুরিয়া ঘাটে দুই থেকে তিন ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীবাহী বাসকে। আর ট্রাক আটকে রয়েছে ৮-১০ ঘণ্টা করে। ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা।
সংবাদ শিরোনাম :
দাবানল: লস অ্যাঞ্জেলেসের কয়েকটি এলাকায় লাল সর্তকতা জারি
ছক্কায় আহত হয়ে ব্যাংককে রাজশাহীর মালিকের স্ত্রী, তাই পারিশ্রমিক পাননি ক্রিকেটাররা!
ঐতিহ্যবাহী ভাসমান সবজি চাষ
টিউলিপকে দুর্নীতিবাজ বললেন ইলন মাস্ক
সংস্কারে নতুন বাংলাদেশের চার্টার
৪৫০ টাকারও কমে গ্যালারিতে বসে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচ
বলিউড অভিনেতার স্ত্রী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন
আ.লীগ নেতা ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু আটক
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক বিকালে
আজ কুড়িগ্রামে মার্চ ফর ফেলানি, নেতৃত্ব দেবেন সারজিস
লাখো মানুষ পানিবন্দি খাদ্য-পানির সঙ্কট
- বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্ক
- আপডেট টাইম : ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ জুলাই ২০১৭
- 306
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ