ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বাম রাজনীতি থেকে ‘অগ্নিকন্যা’, নৌকায় উঠে ক্ষমতায়, আ. লীগের দুঃসময়ে প্রস্থান ১০০ রানের লিড হলেই চলবে দক্ষিণ আফ্রিকার লেবানন থেকে দেশে ফিরেছেন ৫৪ বাংলাদেশি মৃত্যুর পর মরদেহ কী হবে, বলে গেছেন মনি কিশোর দুর্নীতি দমাতে ডিজিটাইজেশনে গুরুত্ব প্রধান উপদেষ্টার হাসিনার পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা ‘মীমাংসিত’ ইস্যু, নয়া বিতর্ক সৃষ্টি আর নয় : প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজের পথ দেখুন : রাষ্ট্রপতিকে হাসনাত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস, প্রধান নির্বাহী স্নিগ্ধ শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে মতিউর রহমান চৌধুরীকে যা বলেছেন রাষ্ট্রপতি জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ছিল জাতীয় পার্টি, দাবি জিএম কাদেরের

যেখানে বলবেন, সেখানেই গাঁজা পৌঁছে দেব

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  এখন হাতের কাছেই মিলছে মাদকদ্রব্য। চাইলে হোম ডেলিভারিরও ব্যবস্থা রয়েছে। এ চিত্র রাজধানীর আজিমপুর সরকারি কলোনির।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরেই এখানে বসে জমজমাট গাঁজার আসর। ছেলে-বুড়ো সবাই দল বেঁধে সেবন করছে মরণঘাতি এ মাদক। গাজা বিক্রির জন্য রয়েছে আলাদা মার্কেটিং টিম। যেগুলো পরিচালনা করছে এলাকার প্রভাবশালীরা। প্রাণভয়ে এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে নারাজ।

‘কাষ্টমার যেখানে বলবে, আমরা সেখানেই গাঁজা পৌঁছে দেবো। এটাই আমাদের কাজ। এতে কাষ্টমারের রিস্ক থাকে কম। বাড়ে আমাদের টিপসের সম্ভাবনা।’-কথাগুলো হেসে হেসে বলছিলেন রায়হান। আজিমপুরের বিভিন্ন জায়গায় গাঁজা পৌঁছে দেয় সে। এর বিনিময়ে মজুরী হিসেবে পায় দৈনিক ৩০০-৪০০টাকা।

সারাদিন বিচ্ছিন্নভাবে বিক্রি হলেও সন্ধ্যার পর জমে জমজমাট আসর। হাত বাড়ালেই যত্রতত্র মিলছে মাদক। কথা হলো আজিমপুরের মৌচাক কলোনির এক মাদকসেবির সঙ্গে। নাম বাবুল হোসেন।

তিনি বলেন, টাকা থাকলেই যে কোন সময় নেশার দ্রব্য পাওয়া যায়। এটা কোন ব্যাপারই না। বন্ধুরা সন্ধ্যার পর প্রায়ই একত্র হই। আড্ডা দেই। মাঝে মধ্যে একটু আধতু গাঁজাও খাই। কামরাঙ্গীরচরের রায়হান আমাদেরকে গাঁজা দিয়ে যায়। দাম একটু বেশি রাখে ঠিকই। কিস্তু এতে আমাদের সমস্যা হয়না। কারণ গাঁজাটা তো নিরাপদেই পাচ্ছি, বিনা পরিশ্রমেই পাচ্ছি। এটাই বা কম কিসে?

সূর্য ডুবতেই এলাকায় আনাগোণা বাড়ে বহিরাগতদের। বিভিন্ন বয়সী মানুষের বসে মেলা। বয়সের ব্যবধান ভুলে ছেলে-বুড়ো সবাই একত্রে সেবন করে গাঁজা। সন্ধ্যার পর আজিমপুরের ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টাফ কোয়ার্টার, মৌচাক কলোনিতে দেখা মিলবে এমন চিত্রের। এ নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই।

মৌচাক কলোনীর ঝন্টু অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, দু’বছর যাবৎ কলোনিতে দেদারছে গাঁজা বিক্রি হচ্ছে। বৌ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে সন্ধ্যার পর এলাকায় বের হতে ভয় পাই। যারা গাঁজা সেবন করে, তারা খুবই উগ্র স্বভাবের হয়ে থাকে। যে কোন মুহুর্তে যে কারো ক্ষতি করতে তারা দ্বিধাবোধ করেনা। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের কানে কেন যে পৌঁছায়না, সেটি আমার জানা নেই।

অভিযোগ করলেন কলোনির তৌফিক খানও। বললেন, আমি আর আমার ম্যাডাম অনেক সময় কলোনীর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই। তখন গাঁজাসেবিরা আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে কটু কথা বলে। বিষয়টি যেন আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলো দেখেও দেখছেন না।

ঢাকা ইউনির্ভাসিটি স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরেও একই চিত্র। প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন চললেও কেউ এই গাজা সেবনকারিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস পাননা। কারণ খোদ স্থানীয় নেতারাই বলেন, বয়সকালে পোলাপান এমন একটু আধতু করে। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলোনি সমিতির একজন বলেন, গত ২৩ রোজায় কলোনি সমিতির সভাপতি ইফতারের পর গাঁজা সেবনকারিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। তার প্রেক্ষিতে এলাকার প্রভাবশালিদের ছত্রছায়ায় গাঁজা সেবনকারীরা তাকে মারধর করে। বিষয়টি দুঃখজনক।

অভিযোগ করলেন এলাকার নুরু মিয়াও। বললেন, স্থানীয় কিছু লোকজন এসে আমাদের এই কলোনির পরিবেশ নষ্ট করছেন। কিন্তু কলোনিবাসি কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন হুমকি দেয়। পরিবারের কথা চিন্তা করে আমরা ভয়ে পুলিশকে কিছু বলতে পারিনা।

একই অভিযোগ কলোনীর একাধিক বাসিন্দারও। অবিলম্বে এই গাঁজা সেবনকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি কলোনিতে যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে, তার জন্য সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে লালবাগ থানার ওসি মোঃ মনিরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোন ঘটনার কথা আমাদের জানা নেই। তবে পুলিশ শক্ত অবস্থানে আছে। জনগণের পাশে আছে। চিন্তার কোন কারণ নেই। আর অভিযোগের ঘটনা সত্য হলে অপরাধী যেই হোক না কেন, কোন ছাড় দেয়া হবেনা।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বাম রাজনীতি থেকে ‘অগ্নিকন্যা’, নৌকায় উঠে ক্ষমতায়, আ. লীগের দুঃসময়ে প্রস্থান

যেখানে বলবেন, সেখানেই গাঁজা পৌঁছে দেব

আপডেট টাইম : ১০:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  এখন হাতের কাছেই মিলছে মাদকদ্রব্য। চাইলে হোম ডেলিভারিরও ব্যবস্থা রয়েছে। এ চিত্র রাজধানীর আজিমপুর সরকারি কলোনির।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরেই এখানে বসে জমজমাট গাঁজার আসর। ছেলে-বুড়ো সবাই দল বেঁধে সেবন করছে মরণঘাতি এ মাদক। গাজা বিক্রির জন্য রয়েছে আলাদা মার্কেটিং টিম। যেগুলো পরিচালনা করছে এলাকার প্রভাবশালীরা। প্রাণভয়ে এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে নারাজ।

‘কাষ্টমার যেখানে বলবে, আমরা সেখানেই গাঁজা পৌঁছে দেবো। এটাই আমাদের কাজ। এতে কাষ্টমারের রিস্ক থাকে কম। বাড়ে আমাদের টিপসের সম্ভাবনা।’-কথাগুলো হেসে হেসে বলছিলেন রায়হান। আজিমপুরের বিভিন্ন জায়গায় গাঁজা পৌঁছে দেয় সে। এর বিনিময়ে মজুরী হিসেবে পায় দৈনিক ৩০০-৪০০টাকা।

সারাদিন বিচ্ছিন্নভাবে বিক্রি হলেও সন্ধ্যার পর জমে জমজমাট আসর। হাত বাড়ালেই যত্রতত্র মিলছে মাদক। কথা হলো আজিমপুরের মৌচাক কলোনির এক মাদকসেবির সঙ্গে। নাম বাবুল হোসেন।

তিনি বলেন, টাকা থাকলেই যে কোন সময় নেশার দ্রব্য পাওয়া যায়। এটা কোন ব্যাপারই না। বন্ধুরা সন্ধ্যার পর প্রায়ই একত্র হই। আড্ডা দেই। মাঝে মধ্যে একটু আধতু গাঁজাও খাই। কামরাঙ্গীরচরের রায়হান আমাদেরকে গাঁজা দিয়ে যায়। দাম একটু বেশি রাখে ঠিকই। কিস্তু এতে আমাদের সমস্যা হয়না। কারণ গাঁজাটা তো নিরাপদেই পাচ্ছি, বিনা পরিশ্রমেই পাচ্ছি। এটাই বা কম কিসে?

সূর্য ডুবতেই এলাকায় আনাগোণা বাড়ে বহিরাগতদের। বিভিন্ন বয়সী মানুষের বসে মেলা। বয়সের ব্যবধান ভুলে ছেলে-বুড়ো সবাই একত্রে সেবন করে গাঁজা। সন্ধ্যার পর আজিমপুরের ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টাফ কোয়ার্টার, মৌচাক কলোনিতে দেখা মিলবে এমন চিত্রের। এ নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই।

মৌচাক কলোনীর ঝন্টু অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, দু’বছর যাবৎ কলোনিতে দেদারছে গাঁজা বিক্রি হচ্ছে। বৌ-ছেলে-মেয়ে নিয়ে সন্ধ্যার পর এলাকায় বের হতে ভয় পাই। যারা গাঁজা সেবন করে, তারা খুবই উগ্র স্বভাবের হয়ে থাকে। যে কোন মুহুর্তে যে কারো ক্ষতি করতে তারা দ্বিধাবোধ করেনা। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের কানে কেন যে পৌঁছায়না, সেটি আমার জানা নেই।

অভিযোগ করলেন কলোনির তৌফিক খানও। বললেন, আমি আর আমার ম্যাডাম অনেক সময় কলোনীর রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাই। তখন গাঁজাসেবিরা আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে কটু কথা বলে। বিষয়টি যেন আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলো দেখেও দেখছেন না।

ঢাকা ইউনির্ভাসিটি স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরেও একই চিত্র। প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন চললেও কেউ এই গাজা সেবনকারিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস পাননা। কারণ খোদ স্থানীয় নেতারাই বলেন, বয়সকালে পোলাপান এমন একটু আধতু করে। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলোনি সমিতির একজন বলেন, গত ২৩ রোজায় কলোনি সমিতির সভাপতি ইফতারের পর গাঁজা সেবনকারিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। তার প্রেক্ষিতে এলাকার প্রভাবশালিদের ছত্রছায়ায় গাঁজা সেবনকারীরা তাকে মারধর করে। বিষয়টি দুঃখজনক।

অভিযোগ করলেন এলাকার নুরু মিয়াও। বললেন, স্থানীয় কিছু লোকজন এসে আমাদের এই কলোনির পরিবেশ নষ্ট করছেন। কিন্তু কলোনিবাসি কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তারা আমাদেরকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন হুমকি দেয়। পরিবারের কথা চিন্তা করে আমরা ভয়ে পুলিশকে কিছু বলতে পারিনা।

একই অভিযোগ কলোনীর একাধিক বাসিন্দারও। অবিলম্বে এই গাঁজা সেবনকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি কলোনিতে যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে, তার জন্য সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে লালবাগ থানার ওসি মোঃ মনিরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোন ঘটনার কথা আমাদের জানা নেই। তবে পুলিশ শক্ত অবস্থানে আছে। জনগণের পাশে আছে। চিন্তার কোন কারণ নেই। আর অভিযোগের ঘটনা সত্য হলে অপরাধী যেই হোক না কেন, কোন ছাড় দেয়া হবেনা।