খুলনা: সবুজ পাতার আড়াল থেকে মুখ উঁচু করে হাসছে সূর্যমুখী। ফুলের মাঠে মৌমাছি, পাখির আনাগোনাও বেশ।
কখনো বাতাসে দোল খাওয়া সূর্যমুখীর হাসিও চোখে পড়ার মতো। দূর থেকে দেখলে মনে হবে বিশাল আকারের হলুদ গালিচা বিছিয়ে রাখা হয়েছে। কাছে গেলে চোখে পড়ে হাজারও সূর্যমুখী ফুল। ফুলগুলো বাতাসে দোল খেয়ে যেন আমন্ত্রণ জানাচ্ছে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার। চোখ জুড়ানো মনোমুগ্ধকর এমন অপরূপ সৌন্দর্যের দেখা মিলবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) ক্যাম্পাসে এলেই।
খুবির তৃতীয় একাডেমিক ভবনের সামনের পুকুরের চারপাশ, চারুকলা কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে ও পেছনে, উপাচার্যের বাসভবনের সামনে সূর্যমুখী ফুলের হয়েছে আবাদ। তাজউদ্দীন আহমেদ প্রশাসনিক ভবনের সামনে, ছাত্র-ছাত্রীদের হলের সামনে গাঁধা ফুলের সাথে বিভিন্ন ধরনের ফুলের সমারোহ। প্রস্ফুটিত এসব ফুলে এখন সুশোভিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ফুলে ফুলে সজ্জিত ক্যাম্পাস যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা নয়ন জুড়ানো অপরূপ কোনো ছবি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই হাতের ডান পাশে তাকালেই ‘কালজয়ী মুজিব’ ম্যুরালের সম্মুখে দেখা যাবে রংবেরঙের নানা ফুল। একটু সামনে এগিয়ে যেতেই হাতের বাম পাশে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসনিক ভবনকে ঘিরে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সব ফুলের বাগান। উপাচার্যের বাসভবন ও মাইকেল মধুসূদন দত্ত অতিথি ভবনের সম্মুখে সৌরভ ছড়াচ্ছে নানা রঙের গাঁদা ফুল। ফুটে থাকা এসব ফুলের বাগানের সৌন্দর্যে মোহিত হন সবাই।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে রোপণ করা হয়েছে হরেক রকমের ফুলগাছ। গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাগান। উপাচার্যের বাসভবন, অগ্রণী ব্যাংক, পোস্টঅফিস প্রাঙ্গণ, অপরাজিতা হল, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, খান বাহাদুর আহছানউল্লা হল, খান জাহান আলী হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি একাডেমিক ভবন ও আবাসিক হলের ভিতরের প্রতিটি স্থানে রোপণ করা হয়েছে হরেক রকমের ফুলগাছ। এসব বাগানে ফুটেছে রংবেরঙের নানা প্রকৃতির ফুল। তবে সবচেয়ে বেশি ফুটেছে সূর্যমুখী।
সবুজ পাতার আড়ালে সূর্যমুখীর হাসি কাছে টানছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। সূর্যমুখী ফুলের পাশে দাঁড়িয়ে কেউ সেলফি তুলছেন, কেউবা ছবি তুলছেন। প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন ক্যাম্পাসে।
বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ফুলগাছের পরিচর্যাকালে কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মালী মো. বাবুল শেখের সাথে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসে ব্যাপকভাবে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। তবে চারুকলা ভবনের পাশে সূর্যমুখী ফুল ফুটেছে বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার আমাদের সূর্যমুখী ফুলের বীজ এনে দিয়েছিলেন। সেই বীজ আমরা লাগিয়েছি। এছাড়া প্রায় ৩০-৪০ ধরনের শীতকালীন ফুল গাছ রয়েছে ক্যাম্পাসে। শীতকালীন ইনকা, জাম্বু গাঁধা, সালবিহা, ড্যানখাস, চন্দ্রমল্লিকা, ক্যালেনডোলা, ডালিয়া, পেনজি এসব ফুল ফুটতে শুরু করেছে।
সকালে সমাজ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের চতুর্থ বর্ষের মো. ফারুক হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, কংক্রিটের তৈরি কৃত্রিম পরিবেশের রুদ্ধ আবহমণ্ডলে যেন একরাশ অকৃত্রিম, মনোমুগ্ধকর, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বাতাবরণ সৃষ্টি এই সূর্যমুখী পুষ্প উদ্যান। এই ফুলের বাগানের সৌন্দর্যের সংস্পর্শে যেন চিত্ততলে জেগে ওঠে দূর-দূরন্তের স্বপন।ইংরেজি ডিসিপ্লিনের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রেজওয়ান আহম্মেদ বলেন, শীতে প্রতিবছরই নানা ফুলে অপরূপ হয়ে ওঠে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি, পুরো ক্যাম্পাস দেখলে মনে হয় যেন নানা ফুলে সাজানো একটা ডালা। তবে এবার নতুন মাত্রা যোগ করেছে সূর্যমুখী ফুল। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এ বাগান।
খুবির ইংরেজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক মো. সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসে ঢুকলেই মন ভালো হয়ে যেতে বাধ্য। হরেক রকম শীতকালীন ফুলে ভরে আছে বাগান। ক্যাম্পাসে চলার সময় মনে হয় যেন ফুলের রাজ্যে হাঁটছি। তবে সবচেয়ে বেশি ভালো লাড়ে সূর্যমুখী বাগানের পাশ দিয়ে যেতে। ক্যাম্পাসজুড়ে বাহারি ফুলের ছোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের মেধা, মনন চিন্তা শক্তি বাড়বে বলে মনে করি।