রাজধানীর অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র হাতিরঝিল লেক। তবে শুধু বিনোদনের জন্য নয়, রাজধানীর বড় একটি অংশের জলাবদ্ধতা নিরসন, বৃষ্টি-বন্যার পানি ধারণ, রাজধানীর পূর্ব-পশ্চিম অংশের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি নগরের নান্দনিকতা এবং পরিবেশের উন্নয়নের জন্য হাতিরঝিল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ২০১৩ সালে। এরপর বৃষ্টির পানি ধারণের পাশাপাশি এলাকাটি মানুষের অবসরে বেড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই হাতিরঝিলের পানি দূষিত হওয়া শুরু করে। আর দশ বছরেও সে অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। এদিকে শুধু দূষণই নয়, এখানে এখন নিরাপত্তা নিয়েও রয়েছে নানা উদ্বেগ। হাতিরঝিলই এখন অরক্ষিত ও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। ছিনতাই, খুন, রহস্যজনক দুর্ঘটনা এখন নিয়মিতই ঘটছে হাতিরঝিলে। কিছুদিন পরপরই এখান থেকে লাশ উদ্ধারের খবর উঠে আসে গণমাধ্যমে। কিছুদিন পরপরই হাতিরঝিলে মৃত্যুর খবর শোনা যায়। এ ছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য চিত্তাকর্ষক যে ওয়াটার ফাউন্টেইনও চালু হয়েছিল, ‘ওয়াটার ড্যান্স’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠা এই শো দেখতেও ভিড় জমাতো দর্শনার্থীরা, সেটি প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ থাকলেও চালু করায় কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। এখন যেকেনো সময় হাতিরঝিলে গেলে দেখা যায়, ঝিলের পানি বিবর্ণ হয়ে কোথাও কালচে, আবার কোথাও সবুজ রং ধারণ করেছে। পানি থেকে আসছে উৎকট গন্ধ। ঝিলের প্রায় সব অংশ থেকেই দুর্গন্ধ ভাসছে বাতাসে। এর মধ্যে নিকেতন, পুলিশ প্লাজা, রামপুরা, কারওয়ান বাজার অংশে দূষণের পরিমাণ বেশি। রাজউক সূত্র জানায়, হাতিরঝিলের পানি নোংরা হওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ আছে। ১৩টি পথ দিয়ে মগবাজার, বেগুনবাড়ি, মধুবাগ, নিকেতন, রামপুরা, বাড্ডা, তেজগাঁও, মহাখালী, পান্থপথ, কারওয়ান বাজার ও কাঁঠালবাগান এলাকার পানি হাতিরঝিলে আসে। এই পানি অধিকাংশ থাকে পয়োবর্জ্য মিশ্রিত। এ সমস্যা সমাধানের জন্য হাতিরঝিলে পানি নামার নয়টি পথে বর্জ্য শোধনের যন্ত্রও বসানো হয়েছিল। এরইমধ্যে সবকটি যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। গত বছরের ৪ জানুয়ারি পয়ঃবর্জ্যরে সংযোগ ঝিল, সারফেস ড্রেনে, খালে বা লেকে দেওয়া বন্ধ করতে গুলশান, বারিধারা, নিকেতন এলাকায় অভিযান শুরু করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তখন সংস্থাটি জানিয়েছে, গুলশান, বারিধারা, নিকেতন ও বনানী এলাকার ৩ হাজার ৮৩০টি বাড়ির মধ্যে ২ হাজার ২৬৫টির সুয়ারেজ লাইন লেক কিংবা ড্রেনে সংযোগ দেওয়া। যা মোট বাড়ির ৮৫ শতাংশ। তাই এসব বাড়ির পয়োবর্জ্যরে সংযোগে কলাগাছও ঢুকিয়ে দিয়েছিল সংস্থাটি। এ ছাড়া বাড়ির মালিকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বাড়ির নিচে নিজস্ব পদ্ধতিতে পয়োবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নির্দেশনাও দেওয়া হয়। রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী বলেন, হাতিরঝিলের পানি পরিষ্কার রাখতে নিয়মিতই কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে। যেসব স্থানে দুর্গন্ধ বেশি সেখানে কেমিক্যাল ছিটানো হয়। তারপরও কোনো এলাকায় বেশি দুর্গন্ধ হলে সেখানে আরও গুরুত্ব দেওয়া হবে। এদিকে পুরো হাতিরঝিল এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার কথা থাকলেও তা হয়নি এখনো। আবার কয়েকটি স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও সেগুলো নষ্ট। লেকের ছোট সেতুগুলোর বাতি নষ্ট। ঢিলেঢালা থাকে পুলিশের টহল। এসবের সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীচক্র। তবে সংশ্লিষ্টদের দাবি, পুরো হাতিরঝিল নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো। যেটুকু ঘাটতি আছে, সেটুকুও পূরণ করা হবে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিল চলে যায় ভবঘুরে, ছিনতাইকারী, মাদকসেবীসহ নানা অপরাধীর দখলে। দিনেও থাকে বখাটেদের উৎপাত। অনেক সময় ঘুরতে যাওয়া মানুষদের উত্ত্যক্ত করে বখাটেরা। হকাররা আবার দ্বিগুণ দাম চেয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে তর্কবিতর্কেও জড়ায়। হাতিরঝিলের সঙ্গে বেগুনবাড়ী, কুনিপাড়া, তেজগাঁও, বাড্ডা, উলন, মহানগর ও মধুবাগ এলাকায় অন্তত ৩৮টি গলি আছে। সেতুগুলোর বিপরীত পাশে রয়েছে কিছু অন্ধকার এলাকা। সেসব এলাকায়ও নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। হাতিরঝিলের নিরাপত্তারকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষের পর অফিসিয়ালি হাতিরঝিলের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বুঝে নেয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সেনাবাহিনী যখন হাতিরঝিলের তত্ত্বাবধানে ছিল, তখন তেমন কোনো সমস্যা ছিল না। রাজউক দায়িত্ব নেওয়ার পরই নিরাপত্তায় ঢিলেঢালা শুরু হয়। ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে নানা অপরাধ। দেখা গেছে, হাতিরঝিল উড়ালসড়কে (ফ্লাইওভার) প্রায়ই ভুতুড়ে অন্ধকার থাকে। সড়ক ও উড়ালসড়কে ল্যাম্পপোস্ট থাকলেও কিছু স্থানে বাতি জ্বলে না। রাতে এসব অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। এসব সড়কে তেমন পুলিশি টহলও চোখে পড়ে না। এমনকি বিভিন্ন মোড় বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন বা অন্য কোনো নিরাপত্তাব্যবস্থাও থাকে না। হাতিরঝিল লেকের অধিকাংশ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও তা সচল নেই। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, পুরো হাতিরঝিল সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা জরুরি। এ ছাড়া কিছু অন্ধকারাচ্ছন্ন অলিগলিতে লাইট লাগানো প্রয়োজন। অপরাধীদের আনাগোনা, ছিনতাই ও খুনের ঘটনা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাতে নিরাপত্তাকর্মীদের টহল বৃদ্ধি করা গেলে অপরাধ অনেকটা কমে আসবে। অপরাধ বিশ্লেষকরা জানান, হাতিরঝিল এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত। তা পর্যবেক্ষণের জন্য নিরাপত্তাকেন্দ্র থাকা উচিত। তা না হলে রাজধানীর অন্যতম নান্দনিক স্থান হাতিরঝিলের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। সেখানে অপরাধীদের আনাগোনা, ছিনতাই এবং খুনের ঘটনায় আতঙ্কে দর্শনার্থী কমে গেছে। একসময় হাতিরঝিল ছিল রাজধানীর সবচেয়ে বেশি নিরাপদকেন্দ্র। এখন রীতিমতো আতঙ্কের নগরী হিসেবে পরিণত হয়েছে। তবে মাঝে মধ্যে পুলিশ সেখান থেকে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে। তারপরও থামছে না অপরাধ। দর্শনার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের গভীরতার সঙ্গে সঙ্গে হাতিরঝিল চলে যায় ভবঘুরে, ছিনতাইকারী, মাদকসেবীসহ নানা অপরাধীর দখলে। চলে অনৈতিক কাজও। রাত যত বাড়তে থাকে ততই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে পরিবেশ। বাড়তে থাকে ছিনতাইকারী আর মাদকসেবীদের আনাগোনা। এসব বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা জানান, হাতিরঝিলের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া সন্ধ্যা ও সন্ধ্যার পর যতক্ষণ লোকজন হাতিরঝিলে থাকবে, ততক্ষণ পুলিশি টহল আরও জোরদার করার অনুরোধ জানিয়ে সব থানার ওসিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আর যেসব ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো ঠিক করা হবে। হাতিরঝিলের বেশিসংখ্যক লাইট নষ্ট ছিল, সেগুলোর মেরামতের পাশাপাশি নতুন লাইট লাগানো হয়েছে।
সংবাদ শিরোনাম :
যেসব এলাকায় গ্যাস থাকবে না আজ
কনকচাঁপার জন্মদিন আজ
মেট্রোরেলের বন্ধ থাকা দুই স্টেশন চালু নিয়ে সুখবর
শ্রীলঙ্কায় জয় পেল নারী দল
এইচএসসির ফল: খাতা মূল্যায়ন ও আগের পরীক্ষার গড় করে নম্বর
ব্যাংক থেকে ২২০ কোটি টাকা তুলল এস আলম
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো ৭ হত্যা মামলা
স্মার্টফোনে কত ধরনের ডিসপ্লে হয়, কোনটা ভালো
আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে কলম্বিয়ার মধুর প্রতিশোধ
যে কারণে আল্লাহ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন
জৌলুস হারাচ্ছে হাতিরঝিল, নিরাপত্তা নিয়েও নানা উদ্বেগ
- বাঙ্গালী কণ্ঠ ডেস্ক
- আপডেট টাইম : ০৫:৫০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- 41
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ