সারাদেশের বিমানবন্দরগুলোর নিরাপত্তায় অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি ফোর্সের (এভসেক) এক হাজার ৪৫০ জন সদস্য কাজ করছেন। গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) কাজ থেকে বিরত থাকায় নিরাপত্তার পুরো দায়িত্ব চলে যায় এভসেকের হাতে। পুলিশ কাজে ফিরলেও দায়িত্ব ফিরে পায়নি। বিমানবাহিনীর দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে বিমান মন্ত্রণালয়। বিমান মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে অর্থ মন্ত্রণালয়ও আপত্তি জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিমানবন্দর গুলোতে ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে এপিবিএন সদস্যরা দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকেন। তখন থেকেই নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে বিমানবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত এভসেক। বিশেষ করে এপ্রোন এরিয়ায় দায়িত্ব পালনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন তারা। এর আগে এপিবিএন সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালন করতেন। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে এপিবিএনের সবাই কাজে ফিরলেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এপ্রোন এরিয়ায় এপিবিএন সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া আনসার সদস্যরা আন্দোলনে গেলে শাহজালালে নিরাপত্তার স্বার্থে নতুন করে বিমানবাহিনীর আরও কিছু সদস্যকে নিয়োজিত করা হয়।
ইতোমধ্যে বিমানবন্দরে এভসেকের জনবল বৃদ্ধির বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে বেবিচককে চিঠি দিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। গত ৩ নভেম্বর বেবিচকে চিঠিটি পাঠানো হয়।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (রুটিন দায়িত্বে) রুমান ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যা সংখ্যা ২০২১ সালের অনুমোদিত সংখ্যা থেকে ধাপে ধাপে কোন প্রক্রিয়ায় এবং কোন কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে বৃদ্ধি করা হয়েছে তার তথ্যসহ ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
অন্যদিকে কার নির্দেশে শাহজালালে বিমানবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে তা লিখিত আকারে বেবিচকের কাছে জানতে চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অ্যাক্টে’ বেবিচকের বিধিমালা অনুযায়ী বিমানবন্দরে বিমানবাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার সুযোগ আছে কিনা তাও জানতে চাওয়া হয়।
গত ২৯ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সৈয়দ আলী বিন হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠি বেবিচক চেয়ারম্যান বরাবর দেওয়া হয়েছে। ৩০ অক্টোবর ওই চিঠি গ্রহণ করে বেবিচক। চিঠিতে জানতে চাওয়া হয়েছে, বিমানবাহিনীর ১৪৫০ জন সদস্যের ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অ্যাক্টের আওতাভুক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার সম্মতি গ্রহণ করা হয়েছে কিনা? বেবিচকের বিধিমালা বা প্রবিধানমালা অনুযায়ী ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অ্যাক্টে বিমানবাহিনীর সদস্যদের নিয়োজিত করার সুযোগ আছে কিনা? ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার অ্যাক্টে নিয়োজিত বিমানবাহিনীর সদস্যদের ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে বেবিচকের সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি কী রয়েছে? এবং বেবিচকের নিজস্ব তহবিল থেকে ভাতা দিতে কী পরিমাণ আর্থিক সংশ্লেষ হবে, সেই অর্থ বেবিচকের অর্থবছরভিত্তিক আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তার তথ্যচিত্রও চাওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বেবিচকের অনুমোদিত জনবল কাঠামোভুক্ত পদগুলোর মধ্যে অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগের ৪৮৯টি শূন্যপদে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রশিক্ষণ শেষে শাহজালাল বিমানবন্দরে পদায়নের সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের তাদের নির্ধারিত দায়িত্বের বাইরে বিমানবন্দরে আনার আবশ্যকতা থাকবে না। ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ১৬০ জন, বাংলাদেশ পুলিশের ৭৯ জন শাহজালালে কর্মরত আছেন। তাদের মধ্যে বিমানবাহিনীর সদস্যদের দৈনিক ভাতা ও পোশাকভাতা প্রদানে সরকারস্বীকৃত কোনো আইন বা বিধি বা নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি, জানায় মন্ত্রণালয়।
এরপর চলতি বছর ৩ অক্টোবর আবারও মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে বেবিচক। সেখানে ৩২৮ জনসহ আরও প্রায় ১ হাজার জন নিয়োগের অনুমোদন চাওয়া হয়। এই অনুমোদন হওয়ার আগেই বর্তমানে বিমানবাহিনীর প্রায় ৮৫০ জন সদস্য কাজ শুরু করেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিয়ন্ত্রণাধীন এভসেকের যে জনবল রয়েছে তা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের বাইরে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই বিমানবাহিনী থেকে পাঁচশর বেশি জনবল নিয়োগ দিয়েছে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ। সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, এটা রুটিন ওয়ার্ক। আমাদের কাছে যে বিষয়গুলো জানতে চাওয়া হয়েছে তার উত্তর দিয়েছি।