ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনে দেশের সব প্রান্তের শিক্ষার্থীদের হাতে একযোগে নতুন বই তুলে দিতে পারেনি সরকার। এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।একই সঙ্গে বই বিতরণ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের তালিকা করার কথাও জানান তিনি।
আজ বুধবার সকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে পাঠ্যবইয়ের অনলাইন ভার্সন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘নতুন বছরের প্রথম দিনে সারাদেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দিতে না পেরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে আমরা আন্তরিক দুঃখিত।’
তিনি বলেন, ‘বই বিতরণ নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নানাভাবে ষড়যন্ত্রকারীরা বাধা দিয়েছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কারা কারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছেন, কারা আমাদের জন্য বাধা সৃষ্টি করেছেন। তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।’
এবার আগের বাজারমূল্যে বই ছাপা হয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা আমাদের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে, তাদের তালিকা করে আগামী বছর যারা সরকারে থাকবেন, তাদের দেওয়া হবে।’
এ সময় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অধীন শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যের বই এখন থেকে আর বিদেশে ছাপানো হবে না বলেও জানান ওয়াহিদউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এখন থেকে আর বিদেশে বই ছাপানো হবে না। দেশেই ছাপা হচ্ছে।’
দলীয় রাজনীতি নিরপেক্ষভাবে যেন বইয়ে থাকে, সেভাবেই শুদ্ধ বা পরিমার্জন করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আগে নবম ও দশম শ্রেণিতে শুধু সাধারণ গণিত ও সাধারণ বিজ্ঞান পড়ানো হতো। এখন উচ্চতর গণিত ও উচ্চতর বিজ্ঞানও পড়ানো হবে।’
শিক্ষাসহ সব মন্ত্রণালয়ে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে মুদ্রণ শিল্পের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে জড়িত হয়ে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল তাদের অনেককে বদলি করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যারা দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য দুদককে বলা হবে।
অনুষ্ঠানে এই বছর প্রথম থেকে দশম শ্রেণির ৪১ কোটি বই দেশেই ছাপা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনটিসিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান। তিনি বলেন, ‘মাত্র আড়াই মাসে ৪৪১টি বই পরিমার্জন করেছি। ছয় কোটি বই গেছে। চার কোটি ট্রাকে ওঠার অপেক্ষায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ৫ জানুয়ারি প্রাথমিক ও দশম শ্রেণির সব বই, ১০ জানুয়ারি মাধ্যমিকের আটটি বই এবং ২০ জানুয়ারির মধ্যে সব বই পাঠানোর চেষ্টা করব।’
উল্লেখ্য, গত ৫ আগষ্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করা হয়। সেই সঙ্গে বইয়ের পান্ডুলিপি সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়। সেসব কাজ শেষ করে বই ছাপানো শুরু করতে অনেকটাই দেরি হয়।
এবার ৪০ কোটির মত নতুন বই ছাপাচ্ছে সরকার। নতুন পাঠ্যবইয়ে অনেক বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে। বেশ কিছু গদ্য, প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা বা বিষয়বস্তু বাদ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে স্থান পেয়েছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়বস্তুসহ নতুন কিছু গল্প-কবিতা। মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণাসহ ইতিহাসের বেশ কিছু বিষয়েও সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে।